ঘর–গৃহস্থালির কাজ সহজ করতে এখন কত–না যন্ত্র। এই যেমন আমাদের রোজকার কাপড় ধোয়ার কষ্ট অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে ওয়াশিং মেশিন। বাজারে প্রচলিত বেশির ভাগ ওয়াশিং মেশিন এখন ময়লা কাপড় শুধু ধুয়েই দেয় না, প্রায় ৭০-৮০ ভাগ শুকিয়েও দেয়। ওয়ালটন হোম অ্যাপ্লায়েন্সের মুখ্য বাণিজ্য কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল বলেন, ‘ওয়াশিন মেশিন এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য হয়ে উঠছে। একজন ব্যাচেলর যাতে এই সুবিধা নিতে পারেন, তার জন্য দামটাও সেভাবেই রাখা হয়েছে ওয়ালটনে।’
ওয়াশিং মেশিন কেনার ক্ষেত্রে ক্রেতাদের সাধারণত তিনটি চাহিদা থাকে। এক. বিদ্যুৎ আর পানিসাশ্রয়ী হবে। দুই. কাপড় ভালোমতো পরিষ্কার হবে এবং তিন. দাম সাধ্যের মধ্যে থাকবে। ‘সাধারণত অটোমেশন আর ম্যানুয়াল এই দুই প্রক্রিয়ায় ওয়াশিং মেশিন কাজ করে। তবে ক্রেতাদের কাছে আধা স্বয়ংক্রিয় (সেমি অটো) আর পুরো স্বয়ংক্রিয় (অটোমেটিক) ওয়াশিং মেশিনগুলোর চাহিদা বেশি।’ জানালেন রাজধানীর পান্থপথ রোডের ইলেকট্রনিক ব্র্যান্ডের ডিলার রায়হান ইসলাম।
ওয়াশিং মেশিনগুলোর মেকানিজমে সাধারণত দুই রকম সেটআপ দেখা যায়। ফ্রন্ট লোডিং আর টপ লোডিং। ফ্রন্ট লোডিং ওয়াশিং মেশিনের দরজা (যেখান দিয়ে ময়লা কাপড় ভেতরে ঢোকানো হয়) সামনে থাকে। দরজাটি এমনভাবে তৈরি যে মেশিন চালু অবস্থাতেও পানি বাইরে বের হতে পারে না। অন্যদিকে টপ লোডিং ওয়াশিং মেশিনের দরজা ওপরের দিকে থাকে। এমন ওয়াশিং মেশিনে ডিটারজেন্ট, লিকুইড ডিটারজেন্ট বা কাপড় ভালো রাখার জন্য বিশেষ লিকুইড ইত্যাদি ঢালার জন্য আলাদা চেম্বার থাকে।
ওয়াশিং মেশিনের দাম সাধারণত ব্র্যান্ড ও সুবিধার ওপর নির্ভর করে। সবচেয়ে সাশ্রয়ী দামের ওয়াশিং মেশিন জন্য গুনতে হবে সাড়ে ১১ থেকে ১২ হাজার টাকা। এই মেশিনে বর্তমানে একটা ছাড় চলছে। ছাড় বাদে ৯ হাজার ৬০০ টাকায় কেনা যাবে। এ ছাড়া ওয়ালটনে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত নানা মডেলের ওয়াশিং মেশিন পাওয়া যায়। ২২ হাজার টাকা থেকে ৭০ হাজার টাকায় মিলবে কনকা ব্র্যান্ডের ওয়াশিং মেশিন। ভিশন ব্র্যান্ডের ওয়াশিং মেশিনের দাম ৫ হাজার ৫০০ থেকে ৫৩ হাজার টাকায়। সিঙ্গার ব্র্যান্ডের হলে দাম পড়বে ১৫ হাজার থেকে ৭৯ হাজার টাকা। স্যামসাং ব্র্যান্ডের ওয়াশিং মেশিন মিলবে ৩৪ হাজার থেকে ৭৫ হাজারে, হিটাচি ব্র্যান্ডের হলে দাম পড়বে ৩৪ হাজার থেকে ৮২ হাজার টাকায়, হায়ার ব্র্যান্ডের ওয়াশিং মেশিন পাবেন ৩৭ হাজার ৯০০ টাকা থেকে ৭২ হাজারে, ওয়ার্লপুলের ওয়াশিং মেশিন পাবেন ৬২ হাজার টাকায়। আধুনিক যুগে স্মার্ট সব দরকারি ফিচার হিসেবে ওয়াশিং মেশিনে যুক্ত হয়েছে ইনভার্টার, মুঠোফোনে মেশিন কন্ট্রোল সিস্টেম, স্মার্ট ওয়াশ, অক্সিওয়ার ওয়াশসহ নানা কিছু। এগুলোর ওপরও দাম নির্ভর করে অনেক সময়।
অনেকের অভিযোগ, মেশিনে কাপড় ধুলে কাপড় ঠিক থাকে না। তবে সঠিক নিয়ম মেনে ওয়াশিং মেশিনে কাপড় ধুলে সেটা আপনার কাপড়কে ঠিকমতো যত্নে রাখবে। তাই কিছু বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি—
কাপড়ের ধরন বুঝে সে অনুযায়ী যন্ত্রের সেটিংস ঠিক করে কাপড় ধুতে হবে। সুতি, সিল্ক, উল, স্প্যানডেক্স, লিনেন, পলিস্টার ইত্যাদি সব কাপড়ের ধরন বুঝে সে অনুযায়ী সময় আর ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুতে হবে।
সুতি ছাড়া বাকি কাপড়গুলোয় কম সময়ে ধুয়ে নেওয়া ভালো। এতে কাপড় কোঁচকায় না, রংও ঠিক থাকে। সুতি মোটা কাপড় ধুতে হট ওয়াশ ফিচারটি ব্যবহার করা যেতে পারে।
প্রতিটি কাপড়ের সঙ্গে কীভাবে যত্ন নিতে হবে, সেটার একটা লেভেলিং থাকে। আবার অনেক ব্র্যান্ড তাদের কাপড় ধোয়া ও যত্নের জন্য কী করতে হবে, সেটা বিভিন্ন সাংকেতিক চিহ্ন দিয়ে বুঝিয়ে দেয়। ড্রাইওয়াশ, আয়রন বা ব্লিচ ব্যবহার না করা, শুধু হাতে ধোয়া ইত্যাদি চিহ্ন দেওয়া থাকে। ধোয়ার আগে অবশ্যই এসব খেয়াল রাখতে হবে।