ভ্যানে বিক্রি হয় কাপ–পিরিচ থেকে শুরু করে চাদরও, দাম কেমন?

ঢাকা নিউমার্কেট গেটের আশপাশের রাস্তা আর গেটের ভেতর ছোট ছোট সাইকেল ভ্যানে রকমারি পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে থাকেন বিক্রেতারা। এর মধ্যে কয়েকটি ভ্যানের সামনে দেখি বেশ ভিড়। এই গরমের মধ্যেও ধুমসে বিক্রি হচ্ছে চীনামাটির বাসন। পাশেই আরেকটা ভ্যানে পাওয়া যাচ্ছে পর্দা, বিছানার চাদর, বালিশের কভার, কুশন কভার ইত্যাদি।

ভ্যান মার্কেটের টি পট সেট
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

এ ছাড়া অনেক ব্যবসায়ীর কাছে রয়েছে কান পরিষ্কার করার কটন বাড, টুথপিক থেকে শুরু করে দৈনন্দিন ব্যবহার্য সামগ্রী। ভ্যানে করে জিনিসপত্র বিক্রি করার এমন দৃশ্য ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, উত্তরা, মিরপুরসহ ঢাকার আনাচকানাচে চোখে পড়বে। মার্কেটের তুলনায় বেশ কিছুটা কম দাম হওয়ায় এসব ভ্যানের সামনে ক্রেতার ভিড় লেগেই থাকে।

কেনার ইচ্ছা না থাকলেও ভ্যানের পাশ দিয়ে গেলেই নজর কেড়ে নেয় রকমারি ক্রোকারিজ পণ্য। কাচ, পোর্সেলিন ও সিরামিকের সুন্দর ডিজাইনের পণ্য ছড়িয়ে বসেছেন একেক বিক্রেতা। সাদামাটা একরঙা পণ্য থেকে শুরু করে আলপনা, মার্বেল নকশা, তুর্কি কিংবা মরক্কো থেকে অনুপ্রাণিত নকশার আদলে জিনিসপত্র পাওয়া যাচ্ছে তাঁদের কাছে। সিরামিকের খাজানা আসে সরাসরি কারখানা থেকে, শেরেবাংলা সিরামিক মার্কেট থেকে, কিছু নিয়ে আসা হয় গাজীপুরের টঙ্গী থেকে পাইকারি দামে, আবার বাইরে থেকে আমদানি করে এমন প্রতিষ্ঠান থেকেও ভ্যানে বিক্রি করার জন্য ক্রোকারিজ কেনেন বলে জানান বিক্রেতা রুহুল আমিন।

ভ্যানগাড়িতে পাওয়া যাচ্ছে এমন পণ্যও

নিউমার্কেট, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, বনশ্রী, উত্তরাসহ বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দামের ধারণা পাই। ২০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে সস ও আচারের ছোট ছোট বাটি। মাঝারি আকারের বাটি ১০০ থেকে ৩৫০ টাকা। বড় পরিবেশন বাটিগুলো ৩৫০ থেকে ৮০০ টাকা। একরঙা মগের দাম ১০০ টাকা এবং ছাপা নকশারগুলো ১৫০ থেকে ৩০০ টাকার ভেতর পাওয়া যাচ্ছে।

কাপ-পিরিচ বেশির ভাগ ভ্যানেই সেট হিসেবে বিক্রি হতে দেখা গেল। ছয়টি কাপ-পিরিচের দাম এক হাজার টাকা থেকে শুরু, ২ হাজার ৬০০ টাকা দামেরও আছে। একটি কাপ, একটি পিরিচও পাওয়া যায়, ১৫০ থেকে ৩৫০ টাকার মধ্যেই পেয়ে যাবেন। হাফ প্লেট ও বড় প্লেটের তো অভাব নেই। বেশির ভাগ থালাই যদিও সেট হিসেবেই বিক্রি হয়, তবে ছোট থালা ৮০ থেকে ২০০ টাকা এবং বড় ভাতের থালা ১৫০ থেকে ৪০০ টাকা পিস হিসেবেও পাওয়া যাচ্ছে। দৃষ্টিনন্দন বিভিন্ন পরিবেশন পাত্রের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে মান আর নকশার সূক্ষ্মতার ওপর ভিত্তি করে।

রাস্তার ধারেই বিক্রি হচ্ছে ক্রোকারিজ

৩০০ থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যে দাম। আছে টি-পট, লবণদানি, গ্লাস, জগ, হাঁড়ি থেকে শুরু করে চোখ ধাঁধানো জিনিস। কেউ চাইলে পুরো সংসারের জন্য মিলিয়ে বেছে ডিনার সেট নিতে পারবেন এখান থেকে। এ ক্ষেত্রে দামও কিছুটা কম রাখবেন বলে জানান ভ্যান-মামারা। অনেকেই মনে করেন, এগুলো সব কারখানার বাতিল জিনিস! ব্যবসায়ীরা হেসে বলেন, এখন কেউ দাগওয়ালা পণ্য নিতে চান না। তাই তাঁরাও বেছে বেছে সব ভালো জিনিস নিয়ে আনেন। তবে বলাই বাহুল্য, এসব ভ্যান থেকে পণ্য কিনতে হলে দর-কষাকষিতে আপনাকে হতে হবে বেশ পটু। নতুবা ঠকে যাওয়ার আশঙ্কাই বেশি।

বাসনকোসনের পালা শেষ করে গেলাম অন্দরসজ্জার অনুষঙ্গের দিকে চোখ বুলিয়ে নিতে। নিউমার্কেট, ধানমন্ডির আশপাশের রাস্তায় অনেক ভ্যানে পাওয়া যাচ্ছে পর্দা, বিছানার চাদর। রয়েছে সিল্ক, সুতি, জর্জেটের সব পর্দা। সিল্কের সাধারণ পর্দাগুলোর দাম প্রতি পিস ১২০ থেকে ২৮০ টাকা। সুতি কাপড়ের প্রতিটি পর্দার দাম ২০০ থেকে ৪০০ টাকার কাছাকাছি। জর্জেটের নেটের পর্দার দাম একটু চড়া। ৩৫০ থেকে ৮০০ টাকার পর্দাও আছে। দাম ওঠানামা করে কাজ আর কাপড়ের গুণগত মানের ওপর নির্ভর করে। কাপড়ের মানভেদে ৩০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকার বেডশিটও দেখলাম। প্রায় পুরোটাই সুতি ও ব্লক-বাটিক। কিছু টাফটেড বেডশিটও আছে, দাম শুরু হয় এক হাজার টাকা থেকে।

সারি সারি ভ্যানে বিক্রি হচ্ছে বিছানার চাদর আর পর্দা

বেডশিট আর পর্দা কিনতে আগারগাঁও থেকে ধানমন্ডিতে এসেছেন নওশীন আক্তার। অল্প ছাপা নকশার চাদরই এই শিক্ষিকার বেশি পছন্দ। একটু উজ্জ্বল রঙের পর্দাও পছন্দ। ভ্যানের বিক্রেতারা জানান, মূলত নারীরাই ক্রেতা। একটু বয়োজ্যেষ্ঠ নারীরা খোঁজেন উজ্জ্বল রঙের অপেক্ষাকৃত ভারী নকশার বিছানার চাদর। অপর দিকে তরুণীদের কাছে পছন্দের শীর্ষে থাকে হালকা, কম ও ছোট প্রিন্টের চাদর। বেশির ভাগ ভ্যানে ৫০ থেকে ৩০০ টাকায় বালিশের কভার এবং ১০০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে সুন্দর বালিশের কুশন কভার পাওয়া যাচ্ছে।

বেডশিট আর বালিশের কভার

বলাই বাহুল্য, ভ্যানের ওপরের অনুষঙ্গের সমাহার দেখে, পণ্য কেনার লোভ সংবরণ করা কষ্টকর। নাহলে আমার মতো মিতব্যয়ী মানুষও বাসায় ফেরে দুটো বেডশিট আর অনেকগুলো ক্রোকারিজ কিনে!