ঈদের কাপড়ে ব্লক করাবেন কোথায়

ঢাকার নিউমার্কেট লাগোয়া বনলতা সুপারমার্কেটের তৃতীয় তলায় সারি সারি দোকানে ব্লকের কাজে ব্যস্ত একদল কারিগর। এমনিতেই কাপড় আর কাঠের ডাইসের সঙ্গে তাঁদের প্রতিদিনের সম্পর্ক। তবে ঈদ এলে আর দম ফেলার ফুরসত থাকে না। শাড়ি, কুর্তি, থ্রি-পিস থেকে শুরু করে পাঞ্জাবি, কো-অর্ড সেট, বিছানার চাদর—সবকিছুতেই ব্লকের কাজ করিয়ে নেওয়ার হিড়িক পড়ে।

নীলের ওপর সাদা রঙের ব্লকের কাজ
ছবি: অগ্নিলা আহমেদ

ঈদে অনেকেরই মনের মতো ডিজাইন করে শখের পোশাকটি গায়ে জড়ানোর ইচ্ছা থাকে। রকমারি নকশার ব্লকের ছোঁয়ায় নিজের পছন্দের পোশাকটিকে সাজিয়ে তুলতে চান তাঁরা। দেশীয় আঙ্গিকে, রঙের ছটায় নিজের ঈদের কাপড়টিকে করে তুলতে চান অনন্য। আর এ জন্য বনলতা সুপারমার্কেটে ছুটে আসেন তাঁরা।

ব্লকের ছাঁচ আর রং

ওমর বুটিকসের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ মিন্টু বললেন, কাপড়ে এবার রকমারি ডিজাইনের ব্লকপ্রিন্ট চলছে। তবে ফুল, মান্ডলা, কলকা আর লতাপাতার নকশার ফরমাশই বেশি পান তাঁরা। ক্রেতারা দোকানে এসে ডিজাইন বুকের ক্যাটালগ থেকে বেছে পছন্দের নকশাটি তৎক্ষণাৎ করিয়ে নিতে পারেন। নিজের পছন্দের কোনো রং বা ডিজাইন থাকলে তা-ও করে দেওয়া যাবে, কিন্তু একটু সময় লাগবে। ঈদে বেশির ভাগ দোকানই চাঁদরাত পর্যন্ত অর্ডার নেবে।

রং গোলানো হয়েছে কাপড়ে দেওয়ার জন্য

কাপড়ের রং সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজধানী ব্লক অ্যান্ড বুটিকসের স্বত্বাধিকারী কামরুল ইসলাম বলেন, মূলত বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্যের সংমিশ্রণে ব্লকের নির্দিষ্ট রংটি তৈরি করা হয়। এতে কাপড়ের রং যেমন স্থায়ী হয়, অন্যদিকে রং মলিন হওয়ার আশঙ্কাও কমে যায়। তিনি জানান, তরুণীদের মধ্যে নিজের পছন্দের কাপড়ে ব্লকের কাজ করানোর প্রবণতা বেশি। ব্লক করানোর পর কাপড়টি ভালো করে শুকিয়ে, ইস্তিরি করে নিলেই পরার উপযোগী হয়ে ওঠে।

চলছে ব্লকের কাজ

অনেকগুলো দোকানে খোঁজ নিয়ে দেখা গেল, গরমের কারণে এবার সুতি কাপড়ের ফরমাশ বেশি আসছে। শাড়ি, থ্রি-পিস এবং সিঙ্গেল কুর্তি-ই বেশি ব্লক করাতে আসছে মানুষ। মোহনা ব্লক অ্যান্ড বুটিকসের কারিগর মোহাম্মদ রশিদ জানান, কাপড়ে যত বেশি রকমারি রঙের ব্যবহার হবে, কাজ যত ঘন হবে, দাম সেই অনুযায়ী বাড়বে। সুতি বা হাফ সিল্কের শাড়ির চেয়ে তুলনামূলক ফিনফিনে কাপড় যেমন লিনেন, জর্জেট, খাদি সিল্ক, শিফন বা সিল্কের শাড়িতে ব্লকের মজুরি কিছুটা বেশি বলে জানান তিনি। প্রায় সব দোকানেই শাড়ির মূল্য কাজ ও রংভেদে ৩০০ থেকে শুরু হয়ে ৮০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। থ্রি-পিস ৩৫০ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৭০০ টাকা, পাঞ্জাবি ১০০ থেকে কাজভেদে ৩৫০ টাকা অবধি, সিঙ্গেল কুর্তি ১৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা পর্যন্ত দাম হয়ে থাকে। আর বেডশিটের মজুরি ৫০০ থেকে ৯০০ টাকা। কাজের রং, পুরু আর কাঠের ডাইসের মানের ভিত্তিতে দাম নির্ভর করে। এ ছাড়া পর্দা, শার্ট, ফতুয়া, ছোটদের জামাসহ সব ধরনের কাপড়ের ব্লক এখান থেকে করিয়ে নেওয়া যাবে।

ঢাকার লালমাটিয়া থেকে ব্লক করাতে এসেছেন একটি অনলাইন উদ্যোগের স্বত্বাধিকারী নুরুন্নাহার দীপা। ঈদে কাজের চাপ বেশি থাকায় এখানকার কারিগরদের দিয়েই ব্লকের কাজ করিয়ে নিচ্ছেন তিনি। এমনিতেই ঈদে কাজ বহুগুণে বাড়ে, তবে গত বছরের তুলনায় এবারের ঈদে ক্রেতা কিছুটা কম, জানান নাঈম ব্লক প্রিন্টের কারিগর মোহাম্মদ সুমন। তিনি জানান, অনলাইনেও তাঁদের দোকান রয়েছে। সেখানে অর্ডার ভালোই আসে; তবে দোকানে আগের মতো উপচে পড়া ভিড় নেই।

ব্লক করা কাপড় শুকানোর জন্য রাখা হয়েছে

ব্যবসার প্রধান মৌসুম হলেও ঈদকে কেন্দ্র করে কোনো দোকানই ব্লকের মজুরির দাম বাড়ায়নি। এ প্রসঙ্গে মোহনা ব্লক অ্যান্ড বুটিকসের স্বত্বাধিকারী ইদ্রিস হোসাইন বলেন, ক্রেতারা দাম সম্পর্কে অবগত হয়েই আসেন, তাই ঈদে বাড়তি দাম নেওয়ার কিছু নেই। তাঁদের কাজের মূল লক্ষ্য থাকে ক্রেতারা যেন পছন্দের পোশাকটি হাতে পেয়ে সন্তুষ্ট হন।