মাঝেমধ্যে কেনাকাটা মনকে করে তোলে ফুরফুরে, মেটে প্রয়োজনও। কিন্তু এমন যদি হয়, আপনি যা-ই দেখছেন, তা-ই কিনতে ইচ্ছা করছে! না কেনা পর্যন্ত মনকে কিছুতেই দূরে সরাতে পারছেন না। আর এভাবে মাস শেষে গিয়ে আবিষ্কার করলেন, এমন অনেক কিছুই কিনে ফেলেছেন, যেগুলো হয়তো আপনার কেনার দরকারই ছিল না।
আপনার অবস্থা যদি এমন হয়, তাহলে জেনে রাখুন, আপনি ‘শপাহোলিক’ কেনাকাটায় নেশাগ্রস্ত। এ নেশাও কোনো অংশে কম ক্ষতিকর নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণার তথ্যমতে, সে দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৬ শতাংশ কেনাকাটায় নেশাগ্রস্ত। বাংলাদেশে হয়তো এমন কোনো গবেষণা এখনো হয়নি। তবে এখানেও ধীরে ধীরে এই সমস্যা প্রকট হচ্ছে। অনলাইন কেনাকাটা, ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত অভিরুচি জেনে নিয়ে সে ধরনের বিজ্ঞাপন তাঁর মুঠোফোন বা ব্যক্তিগত কম্পিউটারের পর্দায় ক্রমাগত দেখানো, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে ব্যবহার করা—এসব কারণে শপাহোলিকদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
মনোবিজ্ঞানীদের মতে, ‘শপাহোলিক’ মানুষ আসলে একটা রোগে আক্রান্ত, যার আভিধানিক নাম ‘কমপালসিভ বায়িং ডিজঅর্ডার’। কেনাকাটায় নেশাগ্রস্ত মানুষের আচরণে কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আসুন জেনে নিই তেমন সাতটি বৈশিষ্ট্য—
আলমারিভর্তি নতুন জিনিসপত্র
প্রচুর কেনাকাটা করলে এমন অনেক জিনিস আলমারিতে থেকে যায়, যা কেনার পর কখনো ব্যবহার কিংবা প্যাকেট খুলেও দেখা হয় না। যাঁরা কেনাকাটার নেশায় আসক্ত, তাঁদের ক্ষেত্রে এ প্রবণতা অনেক বেশি। ‘শপাহোলিক’দের আলমারি খুললে দেখা যাবে, প্রচুর শপিং ব্যাগ, যার অনেকগুলো খোলা হয়নি মাসের পর মাস।
অপরিকল্পিত কেনাকাটা
প্রয়োজন নেই—এমন সব পণ্য বিরামহীন কিনে চলা ‘শপাহোলিক’ হয়ে ওঠার লক্ষণ। ঘরে একটা আইপড আছে, কিন্তু দোকানের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় অন্য মডেলের একটা আইপড নজর কেড়ে নিল; কিনে ফেললেন। এমন অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা যাঁরা করছেন, তাঁরা আসলে পণ্যের প্রতি একধরনের নেশাগ্রস্ত। যুক্তিহীন কেনাকাটা করে তাঁরা সুখ পান।
হতাশা, একাকিত্ব মোচনে কেনাকাটা
আশপাশে এমন অনেক মানুষ আছেন, যাঁরা নানা বিষয়ে হতাশাগ্রস্ত। যেমন ধরুন, নিজের বর্তমান অবস্থা নিয়ে অনেকে সুখী নন। কেউ আবার ভীষণ একাকী। আত্মবিশ্বাসের অভাব রয়েছে কারও কারও। কেনাকাটায় ডুবে থাকা এসব মানুষের কাছে সমস্যা ভুলে থাকার একটা বড় অস্ত্র। বড় অংশের মানুষ আছে, যাঁরা মন খারাপ থাকলেই কেনাকাটা করতে ভালোবাসেন। আর এভাবেই তাঁরা কমপালসিভ বায়িং ডিজঅর্ডার অসুখে ভোগেন।
কেনার সময় অতিরিক্ত উত্তেজনা
যাঁরা শপাহোলিক, তাঁরা দোকানে গিয়ে কোনো কিছু কেনার সময় তাঁদের শরীরে ‘অ্যাড্রেনালিন’–এর গতি বেড়ে যায়। এটা নতুন পণ্যের মালিক হওয়ার জন্য নয়, বরং তিনি যেভাবে কিনছেন, সে কারণে ঘটে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কেনাকাটায় নেশাগ্রস্ত মানুষ কোনো কিছু কেনার সময় তাঁদের মস্তিষ্ক থেকে ‘ডোপামিন’ নামে একধরনের কেমিক্যাল নিঃসরিত হয়, যা আনন্দ-বেদনার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।
কেনাকাটার অভ্যাস গোপন করার স্বভাব
আশপাশের মানুষ জানেন, আপনি কেনাকাটা করতে ভালোবাসেন। কিন্তু আপনি সব সময় তাঁদের কাছে বিষয়টি গোপন করে চলেন। বাড়ি ফেরার সময় কিছু একটা কিনে তা রাখলেন অন্য কারও আলমারিতে। নিজের আলমারিতে থাকলে অভ্যাসটা যদি জানাজানি হয়ে যায়! কিংবা অফিসে সহকর্মীদের পাশে বসে প্রতিদিন গোপনে কেনাকাটা করছেন অনলাইনে। এসবই ‘শপাহোলিক’ হয়ে ওঠার লক্ষণ।
কিনতে না পারলে মন খারাপ
প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে চায়ের কাপে চুমুক দেওয়ার মতো ‘শপাহোলিক’রাও প্রতিদিন কেনাকাটায় অভ্যস্ত। এর ব্যত্যয় ঘটলেই তাঁদের মন খারাপ হয় কিংবা খিটমিটে হয়ে ওঠে মেজাজ। তাঁদের অনেকের কাছে প্রতিদিন শপিং ছাড়া জীবন অচল!