হরেক রকম ফ্রিজের কথা

প্রতিবছরই কোরবানি ঈদের আগে ফ্রিজের চাহিদা ও বিক্রি বেড়ে যায়। ব্র্যান্ডগুলোও তাই এ সময়ে নতুন নতুন মডেল আর প্রযুক্তির ফ্রিজ বাজারে নিয়ে আসে। গড়নে-গঠনেও দেখা যায় স্বাতন্ত্র্য। সঙ্গে থাকে নানা অফার। ক্রেতারা নিজেদের পছন্দের ফ্রিজ কিনে নিতে পারেন ভাবনাচিন্তা ছাড়াই। বাজারে অনেক ধরনের ফ্রিজ পাওয়া যায়। এর মধ্যে বাছাই করার প্রধান উপায় থাকে ফ্রস্ট ও নন–ফ্রস্ট ঘিরে। প্রশ্ন জাগতে পারে ফ্রস্ট ও নন–ফ্রস্ট ফ্রিজ কী? আসুন, জানা যাক।

ফ্রস্ট ফ্রিজে বিদ্যুৎ খরচ কম  

এ ফ্রিজগুলো খুব তাড়াতাড়ি ঠান্ডা হয়। টানা ছয় থেকে সাত ঘণ্টা লোডশেডিং হয় যেসব এলাকায়, সেখানকার জন্য ফ্রস্ট ফ্রিজ উপযোগী। এই ফ্রিজ ব্যবহারের সমস্যা হচ্ছে, বরফ জমে যায় অতিরিক্ত। তাই খাবার ব্যবহারের আগে পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। ডিপে জমা বরফ নিয়মিত পরিষ্কার করতে হয়। এই ফ্রিজে বিদ্যুৎ খরচ কিছুটা কম এবং বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পরও অনেকক্ষণ খাবার ভালো থাকে।

নন-ফ্রস্ট ফ্রিজে বরফ জমে না

এই ফ্রিজে বরফ ততটা জমে না। মাংস, মাছ বের করে সঙ্গে সঙ্গেই ধুয়ে ব্যবহার করা যায়। ডিপে রাখা একটি প্যাকেটের সঙ্গে অন্য প্যাকেট জোড়া লেগে থাকে না। এই ফ্রিজে বিদ্যুৎ খরচ কিছুটা বেশি এবং বিদ্যুৎ চলে গেলে এক থেকে দুই ঘণ্টা খাবার ভালো থাকে। তুলনামূলক ঝামেলাহীন এবং শহরে ব্যবহারের জন্য নন-ফ্রস্ট ফ্রিজ উপযুক্ত।
এখন ফ্রস্ট ও নন-ফ্রস্ট ফ্রিজের পাশাপাশি ‘সেমি ফ্রস্ট’ ফ্রিজও পাওয়া যায়। এই ফ্রিজে হালকা বরফ জমে। খাবারও ভালোভাবে সংরক্ষিত থাকে। অনেক ফ্রিজের দেয়ালে এখন লিকুইড ফোম ব্যবহার করা হয়। এতে ভেতরে কোনো ফাঁকা জায়গা থাকে না। তাই ফ্রিজের ভেতরটা অনেকক্ষণ ঠান্ডা রাখতে পারে।
বাজারে বিভিন্ন আকৃতির ফ্রিজ পাওয়া যায়। ১০০ থেকে ৪০০ লিটার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ফ্রিজ বিক্রি হয় বেশি। তবে ঈদের আগে বেশি বিক্রি হয় ১৫০ থেকে ২০০ লিটার ধারণক্ষমতার ফ্রিজ। মধ্যম আয়ের মানুষের এ ধরনের ফ্রিজগুলোই বেশি পছন্দ। র‌্যাংগস, ভিশন, ওয়ালটন, মিনিস্টারের মতো দেশীয় ব্র্যান্ডের পাশাপাশি হিটাচি, সিঙ্গার, স্যামসাং, এলজি, শার্পসহ আমদানি করা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ফ্রিজ বিক্রির তালিকায় প্রথম সারির।

ওয়ালটনের কদর বেশি

দেশের বাজারে ওয়ালটন রেফ্রিজারেটরের কদর বেড়েছে। ৯০ মডেলের ফ্রস্ট, ২১ মডেলের নন-ফ্রস্ট এবং ১০ মডেলের ডিপ ফ্রিজ উৎপাদন ও বাজারজাত করছে ওয়ালটন। চলতি বছরই যুক্ত হয়েছে ৪১টি মডেল। এর মধ্যে টেম্পারড গ্লাস ডোরের ১৭টি নতুন মডেলের রেফ্রিজারেটর বাজারে এসেছে। ওয়ালটনের আছে ইন্টেলিজেন্ট ইনভার্টার টেকনোলজির ফ্রিজ। এটি বিদ্যুৎ-সাশ্রয়ী। এতে আলাদা ভোল্টেজ স্ট্যাবিলাইজার ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই। এসব রেফ্রিজারেটরে ব্যবহৃত হয়েছে সম্পূর্ণ এইচসিএফসি এবং সিএফসিমুক্ত পরিবেশবান্ধব আর৬০০-এ গ্যাস। এসব রেফ্রিজারেটরের গায়ে বরফ জমে না।

স্যামসাং উন্নত প্রযুক্তির

স্যামসাংয়ের আছে ডিজিটাল ইনভার্টার প্রযুক্তির রেফ্রিজারেটর। এই ফ্রিজ ব্যবহার করলে ৫৭ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা যায়। স্যামসাংয়ের রেফ্রিজারেটরগুলো এমনভাবে তৈরি, যাতে সোলার সিস্টেমেও চলতে পারে। স্যামসাংয়ের টুইন কনভার্টেবল ফ্রিজ রয়েছে। ফ্রিজটি চাইলে নরমালকে ডিপ ও ডিপকে নরমাল করা যাবে। আবার নন-ফ্রস্ট কিন্তু পুরোটাই ডিপ, এমন একটি ফ্রিজার রয়েছে স্যামসাংয়ের। স্যামসাংয়ের বড় মাপের ডাবল ডোর, ডোর ইন ডোর ফ্রিজ রয়েছে কয়েকটি মডেলের।

এলজি ফ্রিজ মোবাইল অ্যাপ দিয়েও নিয়ন্ত্রণ করা যায়

দেশের বাজারে ইনভার্টার লিনেয়ার কমপ্রেসর প্রযুক্তি প্রথম যুক্ত হয় এলজি রেফ্রিজারেটরে। এদের ফ্রস্ট ও নন-ফ্রস্ট দুই ধরনের রেফ্রিজারেটর রয়েছে। এলজির কিছু কিছু ফ্রিজের মজার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে দরজায় টোকা দিলে ভেতরে আলো জ্বলে উঠবে, পুরো ফ্রিজের দরজা না খুলে মাঝের একটি ছোট দরজা খুলে প্রয়োজনমতো জিনিস রাখা ও বের করা যাবে। সেই সঙ্গে আছে মোবাইল অ্যাপ থেকে সবকিছু নিয়ন্ত্রণের সুবিধাও।

মিনিস্টারও কম যায় না!

বাজারে মিনিস্টারের মোট ৩০টি মডেলের রেফ্রিজারেটর রয়েছে। এর মধ্যে একটি মডেলের নন-ফ্রস্ট, বাকিগুলো ফ্রস্ট রেফ্রিজারেটর। ১২ বছরের কমপ্রেসর ওয়ারেন্টি দেয় মিনিস্টার।

ভিশন সহজলভ্য

দেশীয় ফ্রিজের বাজারে ভিশন একটি পরিচিত নাম। মধ্যম আয়ের মানুষের জন্য খুব সহজলভ্য ফ্রিজ এটি। বাজারে ভিশনের ৩২টি মডেলের রেফ্রিজারেটর রয়েছে। এর মধ্যে ২৮টিই ফ্রস্ট। নন-ফ্রস্ট রয়েছে চারটি মডেলের। এগুলোর ধারণক্ষমতা ২৬৭ লিটার থেকে ৫৫৬ লিটার।

ট্রান্সকম ডিজিটাল

হিটাচি, স্যামসাং, ওয়ার্লপুল, সিমেনস, প্যানাসনিক—পাঁচ ব্র্যান্ডের ফ্রিজ আমদানি করে ট্রান্সকম ডিজিটাল। রয়েছে ট্রান্সটেক নামে নিজস্ব পণ্যও। অধিকাংশই নন-ফ্রস্ট প্রযুক্তির। এই প্রতিষ্ঠানের রয়েছে ডিজিটাল ইনভার্টার প্রযুক্তির রেফ্রিজারেটর। এই রেফ্রিজারেটরগুলো ব্যবহার করলে ৫৭ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা যায়। রেফ্রিজারেটরগুলো এমনভাবে তৈরি, যাতে সোলার সিস্টেমেও চলতে পারে। স্যামসাংয়ের টুইন কনভার্টেবল ফ্রিজ রয়েছে। ফ্রিজটি চাইলে নরমালকে ডিপ ও ডিপকে নরমাল করা যাবে।

কনকায় রয়েছে ৭০টির বেশি মডেল

কনকার রয়েছে ৭০টির বেশি মডেলের ফ্রিজ। ফ্রিজগুলো ডিজিটাল ইনভার্টার টেকনোলজিসম্পন্ন। ফলে ৭১ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সাশ্রয় করে। কনকা ফ্রিজে ‘ভেজিটেবল বক্স হিউমিডিটি কন্ট্রোলার’ নামের একটি টেকনোলজি আছে। যার কারণে সবজিগুলো সতেজ রাখার জন্য যতটুকু হিউমিডিটি দরকার, ততটুকুই প্রবেশ করে।

যমুনা খাবার রাখে শতভাগ ব্যাকটেরিয়ামুক্ত

যমুনা রেফ্রিজারেটরে রয়েছে হাই ইফেসিয়েন্সি কমপ্রেসর, সঙ্গে ১০ বছরের গ্যারান্টি। এই প্রতিষ্ঠানের ফ্রিজগুলো ৬৫ শতাংশ বিদ্যুৎ-সাশ্রয়ী। উন্নত মানের গ্যাসকেট ১০০% ব্যাকটেরিয়ামুক্ত রাখে। লিক হওয়ার আশঙ্কা একদম নেই। এই ফ্রিজগুলোতে আছে ডোর টেকনোলজি, যা অতি সহজেই পরিষ্কার করা যায়।

এসকোয়্যার ইলেকট্রনিকস

এসকোয়্যার ইলেকট্রনিকস বিশ্বখ্যাত জাপানি ব্র্যান্ড শার্প ফ্রিজের আমদানিকারক। এই ফ্রিজ দেশের বাজারে প্রথম আসে ১৯৮৬ সালে। বিদ্যুৎ চলে গেলেও ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত এই ফ্রিজের খাবার ভালো থাকে। এই ব্র্যান্ডের বেশ কিছু নতুন মডেল বাজারে এসেছে। সব কটি বড় ক্যাপাসিটির, ৪০০ লিটারের ওপরে।