পুষ্টিগুণ ও শরীরিক উপকারিতার বিষয়ে বিবেচনা করলে খাঁটি ও প্রাকৃতিক মধুর কোনো বিকল্প নেই। মধুতে থাকা বিভিন্ন ধরনের খাদ্য উপাদানের কারণে এর উপকারিতার শেষ নেই। হজমে সহায়তা বা শ্বাসকষ্ট নিরাময় থেকে শুরু করে বিভিন্ন কঠিন রোগের বিরুদ্ধে মধু শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়ায়। তা ছাড়া চিনির পরিবর্তে প্রতিনিয়ত মধু খেলে বাড়তি ওজন ঝরিয়ে ফেলতেও এটি বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে। যদিও বাজারে বিভিন্ন ধরনের মধু পাওয়া যায়, এগুলোর বিশুদ্ধতা নিয়ে রয়েছে অনেক ধাঁধা। আবার না বুঝে অস্বাস্থ্যকর ও ভেজাল মধু খেলে উপকারের পরিবর্তে ক্ষতির আশঙ্কাই বেশি।
বাজারে হাজারো রকমের মধুর মধ্যে কোনটি খাঁটি, তা যাচাই করে সঠিকটি বেছে নেওয়া বেশ কঠিন। অর্থাৎ বাজারের ভেজাল ও খোলা মধুর ভিড়ে খাঁটি মধু খুঁজে পাওয়া বেশ দুষ্কর। মধুর সঙ্গে অতিরিক্ত রং এবং বিভিন্ন ধরনের চিনি মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ভেজাল মধু। এরপর নাম বাহারি মোড়কে তা বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এগুলোই ছড়িয়ে পড়ছে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় আর বিক্রি হয় সুন্দরবন বা পাহাড়ি আসল মধু নামে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভেজাল মধু স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। তবে খাঁটি মধু চেনার বেশ কিছু ঘরোয়া উপায় রয়েছে। কয়েকটি সহজ পদ্ধতিতে তা যাচাই করা সম্ভব।
প্রথম পদ্ধতি: এক গ্লাস কুসুমগরম পানিতে এক চামচ মধু নিন। মধু ভেজাল হলে তা খুব সহজে পানির সঙ্গে মিশে যাবে। খাঁটি মধু হলে সহজে মিশবে না, বরং গ্লাসের নিচে দানা বেঁধে পড়বে।
দ্বিতীয় পদ্ধতি: বৃদ্ধাঙ্গুলে খুব সামান্য মধু নিয়ে পরীক্ষা করা। খেয়াল রাখতে হবে মধু আঙুলে লেগে থাকছে নাকি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। খাঁটি মধু আঙুলে আঠার মতো লেগে থাকবে আর ভেজাল মধু ছড়িয়ে পড়বে।
তৃতীয় পদ্ধতি: একটি পাত্রে মধু নিয়ে তা চুলায় জ্বাল দিয়ে দেখতে পারেন। বিশুদ্ধ ও খাঁটি মধু ক্যারামেলের মতো হতে শুরু করবে, কিন্তু ফেনা তৈরি হবে না। অন্যদিকে ভেজাল মধু জ্বাল দিলে বুদ্বুদের মতো ফোম তৈরি করবে এবং মাঝে ফেনা দেখা যাবে। আবার চিনি মেশানো মধুতে তাপ দিলে মধু সম্পূর্ণ তরল হবে না, চিনির দানা দেখা যাবে।
তবে খেয়াল রাখতে হবে যে ফুলের ধরনভেদে মধু কিন্তু অনেক রকম হয়ে থাকে। কালিজিরা মধু, খলিসা মধু, লিচু ফুলের মধু বা সুন্দরবনে চাষের মধু একটি অন্যটির চেয়ে ঘ্রাণে ও ঘনত্বে আলাদা। তাই একেক মধুর বৈশিষ্ট্য একেক রকম।
মধু কিনতে গেলে কমবেশি সবাই বিপাকে পড়ে যান। কারণ, নকল মধুতে বাজার সয়লাব। সব মধুর চেহারা একই রকম হওয়ায় বোঝা দায় কোনটি আসল, আর কোনটি নকল। খাঁটি মধু চেনার উপায় জানতে হলে কিছু কৌশল জানা প্রয়োজন। উল্লিখিত পরীক্ষাগুলো না করে কীভাবে বুঝবেন বাজারের সবচেয়ে ভালো মানের মধু কোনটা?
একটু খেয়াল করলেই বুঝবেন দেশের বাজারে যত মধু রয়েছে, তার মধ্যে বহু বছর ধরে ক্রেতাদের আস্থা বজায় রেখেছে এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ব্র্যান্ডের মধুও রয়েছে। আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন বোতলজাত মধুগুলো সংগ্রহ থেকে শুরু করে সব কটি প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে আধুনিক ও নিরাপদ পদ্ধতি অনুসরণ করে। ফলে তাদের মধুর গুণগত মান থাকে সবচেয়ে ভালো। বাংলাদেশে পাওয়া যায়, এমন সব বোতলজাত মধুর মধ্যে ডাবর হানি ভোক্তা চাহিদার দিক দিয়ে বর্তমানে শীর্ষে অবস্থান করছে।