কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে বাড়ছে রেফ্রিজারেটর বা ফ্রিজের দোকানে ভিড়। অনেক পরিবারই এই সময়ে ফ্রিজ কিনে থাকেন। ঈদের কারণে কোম্পানিগুলোও দিয়ে থাকে নানা রকম অফার। প্রয়োজনীয় এই গৃহস্থালি পণ্যটি কিনতে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। রেফ্রিজারেটর কেনার আগে কী কী বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে, তা জেনে নেওয়া যাক।
কম্প্রেসর হলো ফ্রিজ রেফ্রিজারেটরের মূল ইঞ্জিন। যার ওপর নির্ভর করে ফ্রিজটি কতদিন টিকবে ও কেমন সার্ভিস দেবে। আপনার ফ্রিজের কম্প্রেসর যদি খারাপ মানের হয়ে থাকে তাহলে এটা দৈনন্দিন জীবনে বিড়ম্বনায় ফেলবে। বিদ্যুৎ খরচও বাড়বে। ফ্রিজের কম্প্রেসর যত উন্নত হবে, বুঝতে হবে ফ্রিজটি তত ভালো।
আপনি যে ফ্রিজটি কিনতে যাচ্ছেন, সেটি বিদ্যুৎ-সাশ্রয়ী কি না,Ñদেখে নিতে হবে। বিদ্যুৎ-সাশ্রয়ী ফ্রিজগুলো যেমন পরিবেশবান্ধব, তেমনি আপনার মাসিক বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণও কমিয়ে আনবে। ফ্রিজ বিদ্যুৎ-সাশ্রয়ী কি না, তা নির্ভর করে ফ্রিজের মানের ওপর। কিন্তু তা কীভাবে বুঝবেন? ফ্রিজের গায়ে যদি একটি নির্দিষ্ট জায়গায় স্টার চিহ্ন দেওয়া থাকে, তাহলে বুঝতে হবে ফ্রিজটি বিদ্যুৎ-সাশ্রয়ী।
ফ্রিজ কেনার আগে জেনে নিতে হবে সেটি ফ্রস্ট নাকি, নন–ফ্রস্ট। ফ্রিজের ভেতরে ও সংরক্ষিত খাবারে যদি বরফ জমে যায়, তখন সেটা ফ্রস্ট ফ্রিজ। অন্যদিকে যে ফ্রিজের ভেতরে ও সংরক্ষিত খাবারে বরফ না জমে তাকে বলে নন–ফ্রস্ট। নন–ফ্রস্ট ফ্রিজে অনেক বিদ্যুৎ খরচ হয়। কারেন্ট চলে গেলে খাবার ২-৩ ঘণ্টার বেশি ভালো থাকে না। অন্যদিকে বিদ্যুৎ না থাকলেও আবার কয়েক ঘণ্টা ভালো রাখে ফ্রস্ট ফ্রিজ। ফ্রস্ট ফ্রিজ অনেক বিদ্যুৎ-সাশ্রয়ী।
ফ্রিজ কেনার আগে সেটি স্বাস্থ্যসম্মত কি না, তা দেখে নিতে হবে। কারণ, খাবার সংরক্ষণটা যেন স্বাস্থ্যকর উপায়ে হয়। ন্যানো হেলথ কেয়ার টেকলোজির স্বাস্থ্যসম্মত ফ্রস্ট ফ্রিজ কেনা পরিবারের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে। এই টেকনোলজির কাজ হলো খাবার সংরক্ষণের সব স্বাস্থ্যসম্মত উপায় এতে যুক্ত থাকা। এই তথ্য ফ্রিজের গায়ে যুক্ত থাকা স্টিকারে লেখা দেখে কিনতে পারবেন।
ফ্রিজ কেনার আগে জেনে নিতে হবে, এর কনডেন্সর কিসের তৈরি। যদি কপার কনডেন্সার দিয়ে তৈরি হয়ে থাকে তবেই কেনা উচিত। কপার কনডেন্সরযুক্ত ফ্রিজের কম্প্রেসরের সঙ্গে তামার তৈরি কুলিং সিস্টেম পাইপ থাকে। যেগুলো ফ্রিজের পেছনে ও বডির ভেতরে থাকে। কপার কনডেন্সরযুক্ত ফ্রিজ অনেক টেকসই, বিদ্যুৎ-সাশ্রয় করে। এর ফলে ফ্রিজের গ্যাস লিকেজ হয় না, মরিচা পড়ে না, ক্যাপেলরি জ্যাম হয় না আর ফ্রিজের ভেতর তাড়াতাড়ি ঠান্ডা হয়।
ফ্রিজের দাম যত কমই হোক না কেন, বেশি বড় আকারের ফ্রিজ নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়। পরিবারের সদস্যসংখ্যা বেশি না হলে বড় ফ্রিজ না কেনাই ভালো। বড় আকারের ফ্রিজ বিদ্যুৎ–সাশ্রয়ী না। তাই সংসারের চাহিদা যতটুকু ঠিক ততটুকু মাপের ফ্রিজই কিনুন।
বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের স্মার্ট ফ্রিজ পাওয়া যায়। স্মার্ট ফ্রিজে অনেক ইনভার্টার প্রযুক্তি থাকে। এতে পাঁচটি মোড কাজ করে। একটিতে ওপরে ডিপ আর নিচে সাধারণ ফ্রিজ থাকে। এই ফ্রিজে কেউ বাসার বাইরে গেলে দীর্ঘ সময়ের জন্য অ্যানার্জি সেভিং মোড চালু করে রাখতে পারেন। অনেক ফ্রিজে এখন থাকে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়া প্রযুক্তি। ফ্রিজ কেনার সময় তাই এসব বিষয়ে সচেতন হতে হবে।
রেফ্রিজারেটর কেনার সময় বিক্রয়োত্তর সেবা সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। যেন পরবর্তী সময়ে যেকোনো ঝামেলা এড়ানো যায়। ওয়ারেন্টি ও গ্যারান্টির বিষয়টাও বুঝে নিতে হবে। বর্তমানে বেশির ভাগ কোম্পানির ফ্রিজ কিস্তিতে কেনা যায়। কত মাসের কিস্তি বা প্রতি মাসে কী পরিমাণ টাকা পরিশোধ করতে হবে, সেটা কেনার আগে ভালোভাবে জেনে নেওয়া উচিত।