করোনা মহামারিতে অনেক কিছুর পাশাপাশি গড়ে উঠেছে অনলাইনভিত্তিক খাবারের ব্যবসা। হাতের কাছে মুঠোফোন ও দ্রুতগতির ফোর-জি ইন্টারনেট সুবিধা থাকায় খাবার তৈরি থেকে গ্রাহকের কাছে পৌঁছানো অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে উদ্যোক্তাদের। এ ছাড়া করোনার প্রাদুর্ভাবের শুরুর দিকে রেস্টুরেন্টগুলো যখন বন্ধ ছিল, তখনো কাউকে একদম বসে থাকতে হয়নি। অনলাইন ডেলিভারির মাধ্যমে নিজেদের সচল রেখেছেন রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীদের অনেকে।
উম্মে কুলসুমের বাবার একটি রেস্টুরেন্ট আছে। করোনাভাইরাসের কারণে মার্চের শেষের দিকে সবকিছু বন্ধের ঘোষণা এলে তাঁদের রেস্টুরেন্টও বন্ধ রাখতে হয়। তবে উম্মে কুলসুম বিকল্প ভেবে পারিবারিকভাবেই ‘ফ্রম নাজমাস কিচেন’ নামে ঘরে তৈরি খাবারের ব্যবসা শুরু করে দেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেহেতু রেস্টুরেন্টটা আমাদের উপার্জনের বড় উপায় ছিল, তাই বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কিছু একটা ভাবতে হয়। তখন মনে হলো, যেহেতু খাবার নিয়েই আমাদের কাজ, তাই সেটা হোমমেড করে ফেলা যায়। এটা আম্মু, আব্বু ও আমি মিলেই করা। আম্মু খাবার তৈরিতে সময় দেয় এবং আমরা বাকিটা দেখি। নামটাও মায়ের নামে।’
উম্মে কুলসুম বলেন, করোনার মধ্যে মানুষ স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের খোঁজ করেছেন। বাইরের খাবারে স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টিও ছিল। হোমমেড ফুডের ওপর মানুষের একটা আলাদা আগ্রহ থাকে। তাঁরা ফাস্টফুড বাদে সব খাবার অর্ডার করে থাকেন। মে মাসের শেষে চালু হয় এটা। বেশ ভালো সাড়া পেয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, মানুষ চাইলে অর্ডার করতে পারছেন, সহজেই মানুষকে রিচ করা যাচ্ছে।
একজন বিয়ের ছবি তোলেন, বাকি দুজন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কাজ করেন। এ কাজ করতে গিয়েই বিয়েবাড়ির খাবার সব সময়ই মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কথা ভাবলেন সোহেল মাহমুদ, রেজওয়ানুল রাফাত ও আশিকুর রহমান। সোহেল মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিয়ে নিয়ে কাজ করতে গিয়ে বিয়ের খাবার নিয়ে বেশ ভালো ধারণা তৈরি হয়। সেখান থেকে শুরু হয় “বিরিয়ানি ভাই”। গত বছরের নভেম্বরে মগবাজারে একটি আউটলেট দিই। কয়েক মাস পরই করোনার কারণে বন্ধ রাখতে হয়। তখন মনে হলো যে আমাদের রেস্টুরেন্ট তো বন্ধ আছে, সেটাকে আমরা অনলাইনে নিয়ে আসতে পারি। তাহলে বন্ধের মধ্যেও মানুষ বিয়েবাড়ির খাবারের স্বাদ পাবেন এবং আমাদের ব্যবসাটা চালু থাকবে।’
সোহেল জানান, রোজার পরে ডাইন-ইন বন্ধ করে পুরোপুরি অনলাইনে ডেলিভারি দেওয়া শুরু করেন। এখনো অনলাইনেই অর্ডার নেওয়া হয়। তিনি বলেন, করোনার মধ্যে মানুষ বাসার মধ্যেই ছিলেন। বাইরে কম বের হয়েছেন। ইন্টারনেট, মুঠোফোনে অনেক সময় ব্যয় করেছেন। তাই গ্রাহকদের ফেসবুকে বা অনলাইনে খুব সহজেই ধরা গেছে। করোনার মধ্যে তাঁরা অনলাইনে অনেক বেশি সাড়া পেয়েছেন বলেও জানান।
অনলাইনভিত্তিক রেস্টুরেন্ট বাদেও যাঁদের আউটলেট ছিল, তাঁরাও করোনা মহামারিতে অনলাইনেই ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছিলেন। বাঙালিয়ানা ভোজের ম্যানেজার ইমাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের রেস্টুরেন্টও বন্ধ করে রাখতে বাধ্য হয়েছি। এরপরে সীমিত পরিসরে যখন খোলার অনুমতি পাই, তখন অনলাইন অর্ডারই বেশি ছিল। যা ছিল, তা নিরাশ হওয়ার মতো ছিল না। আর অফিস খোলার পর থেকে অর্ডারও বাড়তে শুরু করেছে।’
ফাস্টফুডের দোকান বার্গার এক্সপ্রেসের কর্মী মো. ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, অন্য সময়ের মতো না চললেও করোনা পরিস্থিতিতে তাঁদের রেস্টুরেন্ট সচল ছিল। মানুষ অনলাইনে অর্ডার করে তাঁদের খাবার নিয়েছেন।