আইইউবির দুই শিক্ষার্থীর হাত ধরে এসেছে স্বর্ণপদক

সাদিক আবদাল ও তাশফিয়াহ তাহসিন
ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিযোগিতাটির নাম ‘এফিসিয়েন্সি ফর এক্সেস ডিজাইন চ্যালেঞ্জ’। গত ২৩ জুন ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠিত হলো এর গ্র্যান্ড ফিনালে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারতসহ বিশ্বের ২২টি দেশের ১৫০ জন প্রতিযোগী এখানে অংশগ্রহণ করেন। সৌরশক্তি চালিত হিমাগারের মৌলিক নকশা উদ্ভাবন করে প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জিতেছে ‘পার্মাফ্রস্ট’ নামের একটি দল। বাংলাদেশের জন্য সুখবর হলো চার সদস্যের এই দলের দুই শিক্ষার্থী বাংলাদেশি। তাঁরা হলেন ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের (আইইউবি) তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের সাদিক আবদাল ও তাশফিয়াহ তাহসিন। বাকি দুই সদস্য যুক্তরাজ্যের সিটি, ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের শিক্ষার্থী আলী আহমেদ ও নূর বেন গায়েদ। যৌথভাবে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের করা প্রকল্পটির লক্ষ্য ছিল সৌরশক্তিকে কাজে লাগিয়ে এমন একটি হিমাগারের নকশা করা, যার মাধ্যমে প্রান্তিক কৃষকেরা তাঁদের উৎপাদিত দ্রুত পচনশীল পণ্যগুলো কম খরচে ও পরিবেশের ক্ষতি না করে সংরক্ষণ করতে পারবেন।

প্রকল্পের বিষয় জমা দেওয়ার পর নির্বাচিতদের প্রথমে একটি অনলাইন সভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সেখানে ভিন্ন ভিন্ন দেশের প্রতিযোগীরা মিলে গঠন করেছেন একেকটি দল।

মুঠোফোনের ওপাশ থেকে উচ্ছ্বসিত সাদিক বললেন, ‘স্বর্ণপদক জিতে যাব, এতটা আশা করিনি। এতগুলো দেশের মধ্যে সেরা হওয়া, আমাদের জন্য এটা অনেক বড় অর্জন। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো দেশের প্রান্তিক কৃষকদের জন্য আমাদের এই প্রকল্প সুফল বয়ে আনতে পারবে। যদিও এখনো এটা নকশা পর্যায়ে আছে, তবে বাস্তবায়ন নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। দিনের বেলায় সূর্যের তাপশক্তিকে কাজে লাগিয়ে উৎপন্ন হওয়া বিদ্যুৎ বরফ তৈরি করবে। রাতে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে হিমাগারের বরফকক্ষকে শীতল রাখা হবে। এভাবেই বরফ গলে পানি হলেও সেটা আবার জমে যাবে। পুরো প্রক্রিয়াতে ব্যাটারির ব্যবহার খুব নগণ্য। তাই হিমাগারটি একদিকে যেমন পরিবেশবান্ধব হবে, অন্যদিকে প্রচলিত হিমাগারগুলো থেকে খরচও হবে অনেক কম।’ সাদিক জানালেন, কৃষকেরা অনায়াসে এই হিমাগার ব্যবহার করতে পারবেন। সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে আলুর মতো নানা ধরনের সবজি, মাছ, দুধ ইত্যাদি। এই হিমাগারকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নেওয়াও যাবে।

পরিবেশবান্ধব শক্তি ব্যবহার করে পরিচালিত হবে, এমন উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন যন্ত্রপাতির নকশা তৈরি করার আহ্বান জানানো হয়েছিল প্রতিযোগিতায়। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের (এসডিজি) কথাও প্রতিযোগীদের মাথায় রাখতে হয়েছে। পাশাপাশি তাঁদের এই প্রকল্পের ব্যবসায়িক মডেল ও সমাজের মানুষের জন্য কাজের বিষয়টিও বিচারকদের পছন্দ হয়েছে। যার সুফল পেয়েছে পার্মাফ্রস্ট।

প্রতিযোগিতার অন্য দলগুলোর কাছ থেকে শেখার সুযোগটাও একটা বড় পুরস্কার, বলছিলেন তাশফিয়াহ তাহসিন। তাঁর বক্তব্য, ‘আমাদের দুই সুপারভাইজারের কাছ থেকে আমরা যথেষ্ট সাহায্য পেয়েছি। প্রযুক্তিগত পরামর্শগুলো আমাদের বিভিন্ন দিক থেকে ভাবতে সাহায্য করেছে। আইইউবির ইইই বিভাগও পুরো যাত্রায় পাশে ছিল। এ ছাড়া এই প্রতিযোগিতায় ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয়েছে। তাঁদের থেকেও অনেক কিছু শেখার ছিল। তাঁদের চিন্তাশৈলী, সমস্যার সমাধান করার কৌশলও ভিন্ন। আমাদের দলের দুজন সদস্য ছিলেন বিদেশি। তাঁদের ইনপুটগুলোও আমাদের জয়ে ভূমিকা রেখেছে।’ এখন নকশার বাস্তবায়ন নিয়ে কাজ করছেন তাশফিয়াহরা।

দলটির সুপারভাইজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন আইইউবির ইইই বিভাগের অধ্যাপক খসরু মোহাম্মাদ সালিম। ইন্ডাস্ট্রি সুপারভাইজার হিসেবে পরামর্শ দিয়েছেন জার্মান বিশেষজ্ঞ জুলিয়ান ক্রুগার। বেশ কয়েক বছর ধরে এই দলগুলোর সঙ্গে কাজ করছেন খসরু। তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক প্রকৌশলী বা শিক্ষকই গ্রিন এনার্জি নিয়ে কাজ করি। কিন্তু প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এই বিষয়ে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়ানোটা খুব জরুরি। আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে তাদের সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। দলের প্রত্যেক সদস্যের মধ্যে প্রচণ্ড আগ্রহ ছিল। আমার দলের এই প্রকল্প বাজারে আনা গেলে বাংলাদেশের এবং অনুন্নত দেশগুলোর কৃষকেরা উপকৃত হবেন বলে আশা করি।’