ফাইনালের পুরস্কারমঞ্চে তাঁর নাম ঘোষণা হতেই বিপুল করতালি। ভিড়ের মধ্য থেকে মাহমুদুল হাসান উঠে আসেন পুরস্কার নিতে। দেশের শীর্ষ ফুটবল ক্লাব বসুন্ধরা কিংসে বিদায়ী মৌসুমে দুটি ম্যাচ খেলেছেন একাদশে। বদলি খেলেন ৭টি। কিরন নামে পরিচিতি মাহমুদুলকে নতুন করে চেনাল ইস্পাহানি-প্রথম আলো আন্তবিশ্ববিদ্যালয় টুর্নামেন্ট। তাঁর হাতেই উঠেছে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার।
সেমিফাইনালে বিদায় নিয়েছে মাহমুদুলের দল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। দলটির চার ম্যাচের প্রথম তিনটিতেই ম্যাচসেরা মাহমুদুল। প্রথম দুই ম্যাচে করেন দুটি করে গোল। তৃতীয় ম্যাচে দলের একমাত্র গোলে করেছেন সহায়তা। দ্বিতীয় ম্যাচে দলের ৪-০ গোলের জয়ে মাহমুদুলের দুই গোলের সঙ্গে দুটিতে সহায়তা করেন। সেমিফাইনালে জাহাঙ্গীরনগর একমাত্র পেনাল্টি গোলে হেরেছে ফারইস্টের কাছে। তবে শেষ মিনিট পর্যন্ত মাহমুদুল লড়ে যান। ডিফেন্ডার হলেও এই টুর্নামেন্টে সারা মাঠে খেলেন ২২ বছরের তরুণ।
স্বীকৃতি হাতে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা ছিলেন তিনি। ট্রফি নিয়ে চলে যান শেরপুরের বাড়িতে। সেখান থেকে ফোনে বলছিলেন টুর্নামেন্ট নিয়ে মুগ্ধতার কথা, ‘এই টুর্নামেন্টের অন্যতম বড় দিক—খুব ভালো মাঠ বাছাই করা। মাঠ ভালো হওয়ায় ছেলেদের কোনো ইনজুরি হয়নি। চোটমুক্ত একটা টুর্নামেন্ট হয়েছে। খেলে অনেক ভালো লেগেছে।’
শুধু মাঠের খেলা নয়, ব্যক্তিগতভাবে এই টুর্নামেন্ট তাঁকে কীভাবে আনন্দ দিয়েছে, মাহমুদুল বলেছেন সেটাও, ‘বিকেএসপিতে আমার দুই বছরের রুমমেট রিফাতের সঙ্গে সাত বছর পর দেখা হয়েছে এই টুর্নামেন্টে। রিফাত খেলেছে গণ বিশ্ববিদ্যালয় দলে। তা ছাড়া ড্যাফোডিলের রহমতের সঙ্গে দেখা হয়েছে। বিকেএসপিতে আমার সিনিয়র-জুনিয়র অনেকে অনেক দিন পর এক হয়েছি। ফলে টুর্নামেন্টটা হয়েছে পুনর্মিলনীর মতো।’ প্রসঙ্গক্রমে মাহমুদুল জানালেন, ক্রিকেটার আকবর আলী আর তিনি বিকেএসপিতে কয়েক বছর রুমমেট ছিলেন। একই শ্রেণিতে দুজন ছিলেন নিজ নিজ সেকশনের ফার্স্ট বয়। বিকেএসপির পাট চুকিয়ে মাহমুদুল এখন জাহাঙ্গীরনগরের বাংলার ছাত্র। তৃতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা দেবেন সামনে।
ইস্পাহানি-প্রথম আলো টুর্নামেন্টে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ তাঁর ভালো লেগেছে। অনেক ছাত্রীও এসেছেন খেলা দেখতে। সেই প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক টুর্নামেন্টগুলোয় নানা রকম ঘাটতি থাকে। বাজেট থাকে না, অগোছালো হয়, এটা-ওটা নিয়ে অভিযোগ ওঠে। কিন্তু ইস্পাহানি-প্রথম আলোর এ আয়োজন সব দিক থেকেই পরিপূর্ণ। গোছানো ছিল সবকিছু, শৃঙ্খলা ছিল শতভাগ। কোনো অনিয়ম দেখিনি। গোলমালও হয়নি। সামগ্রিকভাবে একটা সফল টুর্নামেন্টই হয়েছে।’
জাহাঙ্গীরনগরের ক্যাম্পাসে সবাই মাহমুদুলকে একটু অন্যভাবে দেখেন। দল ফাইনালে উঠতে পারেনি। তবে মাহমুদুলের সাফল্য সবাই খুশি। নিজেই বলেন, ‘আমি সেরার ট্রফি পাওয়ায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সবাই খুব গর্বিত, আমার পরিবারও। প্রথম আলোয় আমার ছবি ছাপা হয়েছে, শুনে মা পত্রিকা সংগ্রহ করেছেন।’
শেষে একটা দাবি রেখেছেন বিনয়ী স্বভাবের মাহমুদুল, ‘এই টুর্নামেন্টের অন্তত চ্যাম্পিয়ন দলকে বিদেশে খেলতে পাঠালে ভালো হয়। তাহলে দলগুলোর মধ্যে আগ্রহ আরও বাড়বে।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘ভবিষ্যতে এই টুর্নামেন্টে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আরও বেশি খেললে ভালো হবে। টুর্নামেন্টটা ছড়িয়ে দিলে নতুন নতুন খেলোয়াড় আসবে।’