পাঠকের প্রশ্ন বিভাগে আইনগত সমস্যা নিয়ে নানা রকমের প্রশ্ন পাঠিয়েছেন পাঠকেরা। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মিতি সানজানা নির্বাচিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এবার
প্রশ্ন: আমি অনেক বছর ধরে জার্মানিতে আছি। করোনার জন্য মাঝখানে তিন বছর দেশে আসতে পারিনি। এবার ঈদের ছুটিতে দুই মাসের জন্য দেশে এসেছি। আমি পাঁচ বছর আগে বাবা-মায়ের পছন্দের পাত্রীকে বিয়ে করি। এখন পর্যন্ত আমার স্ত্রী দেশেই আছে। বেশির ভাগ সময় সে তার বাপের বাড়িতে থাকে। বিয়ের পর থেকে আমার স্ত্রীর ভরণপোষণসহ সব ধরনের চাওয়া আমি পূরণ করছি। যখনই সে টাকা চাইত , সঙ্গে সঙ্গে পাঠিয়ে দিতাম। তার বাপের বাড়ির প্রয়োজন ও আপদে-বিপদেও আমি আর্থিকভাবে তাদের সাহায্য করেছি। তারপরও সে সব সময় টাকাপয়সার জন্য আমার ওপর চাপ প্রয়োগ করে। এবার দেশে আসার পর বুঝতে পারছি, আমাকে বা আমার পরিবারের চেয়ে সে আমার অর্থকে বেশি ভালোবাসে। আমার বাবা-মায়ের সঙ্গে সে সব সময় খারাপ আচরণ করে। যখনই আমাদের কথা হয়, সে আর্থিক দাবিদাওয়া নিয়েই বেশি কথা বলতে থাকে। তার সঙ্গে থাকলে আমার নিজেকে একটা টাকা তৈরির মেশিন ছাড়া আর কিছু মনে হয় না। আমাদের কোনো সন্তান হচ্ছে না। স্ত্রীকে নিয়ে অনেকবার ডাক্তার দেখাতে যেতে চাচ্ছি। কিন্তু এই ব্যাপারে তার কোনো আগ্রহ নেই, বরং ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কথা বললে প্রচণ্ড রেগে যাচ্ছে। যেই সম্পর্কে ভালোবাসার চেয়ে টাকার মূল্য বেশি, সেই সম্পর্কে থাকা আমার পক্ষে আর সম্ভব নয়। এ অবস্থায় আমি কি তাকে তালাক দিতে পারব? আমি আরও এক মাস দেশে আছি। আমি এর মধ্যে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে চাই। তার দেনমোহরের টাকা আগেই পরিশোধ করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
উত্তর: আপনার প্রশ্নের জন্য অনেক ধন্যবাদ। তালাক দেওয়ার বিষয়ে ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনে বলা হয়েছে, তালাক দিতে চাইলে যেকোনো পদ্ধতির তালাক ঘোষণার পর অন্য পক্ষ যে এলাকায় বসবাস করছেন, সে এলাকার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান/পৌরসভার মেয়র/সিটি করপোরেশনের মেয়রকে লিখিতভাবে তালাকের নোটিশ দিতে হবে। সেই সঙ্গে তালাকগ্রহীতাকে ওই নোটিশের নকল প্রদান করতে হবে। আপনি যেহেতু দেশে আছেন আরও এক মাস, সে ক্ষেত্রে তালাকের নোটিশ প্রেরণ করার ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। চেয়ারম্যান বা মেয়রের কাছে যে তারিখে নোটিশ পৌঁছাবে, সেদিন থেকে ৯০ দিন পর বিবাহবিচ্ছেদ বা তালাক কার্যকর হয়ে থাকে। এ নোটিশ পাওয়ার পর ৯০ দিনের মধ্যে সালিসি পরিষদ গঠন করে সমঝোতার উদ্যোগ নেওয়া হয়ে থাকে। আপনি যদি মীমাংসা করতে না চান, সে ক্ষেত্রে সালিসে উপস্থিত হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। আপনি যেহেতু ইতিমধ্যে তাঁর দেনমোহর পরিশোধ করে দিয়েছেন এবং স্ত্রীকে নিয়মিত ভরণপোষণ দিয়ে আসছেন, তাই আপনাকে শুধু ইদ্দতকালীন (তালাকের নোটিশ প্রদান থেকে তালাক কার্যকর হওয়া পর্যন্ত সময়) ভরণপোষণ প্রদান করতে হবে। আশা করি আপনার প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন।
পাঠকের প্রশ্ন পাঠানো যাবে ই–মেইলে, ডাকে এবং প্র অধুনার ফেসবুক পেজের ইনবক্সে। ই–মেইল ঠিকানা: adhuna@prothomalo.com (সাবজেক্ট হিসেবে লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’) ডাক ঠিকানা: প্র অধুনা, প্রথম আলো, প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবন, ২০–২১ কারওয়ান বাজার, ঢাকা ১২১৫। (খামের ওপর লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’) ফেসবুক পেজ: fb.com/Adhuna.PA