পলিটেকনিকে পড়তে গিয়েই ইলেকট্রনিকসের প্রতি ভালো লাগা, এখন উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন ইউরোপে

ইমরান হোসেন
ছবি: সংগৃহীত

স্কুলজীবনে প্রথম সারির ছাত্রই ছিলেন ইমরান হোসেন। এসএসসিতে জিপিএ–৫ পেতেও তাই খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। বিদ্যালয়ের পাট চুকিয়ে যখন কলেজে ভর্তি হবেন, তখন বাবার পরামর্শে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ভর্তি পরীক্ষা দেন। ঢাকা পলিটেকনিকে সুযোগও হয়ে যায়। ইমরান ঈশ্বরদীতে বড় হয়েছেন। ঢাকা পলিটেকনিকে ভর্তি হলে বাসার বাইরে থাকতে পারবেন, এমন একটা লোভও কাজ করছিল। তাই কলেজে ভর্তি হওয়ার চিন্তা বাদ পড়ে গেল। পরীক্ষা দেওয়ার আগপর্যন্ত পলিটেকনিক বিষয়ে কোনো ধারণাই ছিল না, তাই কোন বিষয়ে পড়বেন, বুঝতে পারছিলেন না। অন্যদের কথা শুনে ইলেকট্রনিকস টেকনোলজিতে ভর্তি হয়ে যান, যদিও এ বিষয়ে খুব একটা আগ্রহ তাঁর ছিল না।

পলিটেকনিকে পড়ার শুরুর সময়টা ইমরানের উপভোগ করা হয়নি। ক্যাম্পাস ছেড়ে বাড়ি যেতে না যেতেই শুনতে হয়েছে কত-না কটু কথা! পরিচিতজনেরা বলতে শুরু করেছিলেন, ‘এসএসসিতে জিপিএ–৫ পেয়ে কেউ পলিটেকনিকে পড়ে!’একটু হতাশা পেয়ে বসলেও হাল ছাড়েননি ইমরান; বরং মনে মনে জেদ চেপে গিয়েছিল, এখান থেকেই ভালো কিছু করে দেখাবেন। দ্বিতীয় বর্ষ থেকে ইলেকট্রনিকসের বিভিন্ন বিষয়ে ভালো লাগতে শুরু করে। তখন থেকেই ইলেকট্রনিকস নিয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের কথা ভাবতে শুরু করেন।

কিন্তু ডিপ্লোমা নিয়ে বিদেশে বৃত্তি পাওয়া বেশ কঠিন। অগত্যা বিএসসি ডিগ্রির জন্য ঢাকার ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন এই তরুণ। তড়িৎ ও বৈদ্যুতিন প্রকৌশল বিভাগে ভর্তি হওয়ার পর প্রথম সেমিস্টারে ভালো ফলের সুবাদে টিউশন ফি-তে ২৫ শতাংশ ছাড়ও পেয়ে যান। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান ইমরানের জন্য বৃত্তিটা খুব উপকারী ছিল। অর্থনৈতিকভাবে এই সহযোগিতা পাওয়ার পর থেকে একাডেমিক পড়াশোনার প্রতি আরও মনোযোগী হন তিনি। যেহেতু পলিটেকনিকে পড়েছেন, অন্য শিক্ষার্থীদের তুলনায় ইলেকট্রনিকসে তাঁর দখল ভালো ছিল। সুযোগটাই কাজে লাগান তিনি। দ্বিতীয় সেমিস্টারে পেয়ে যান ৪-এ ৪ সিজিপিএ, সঙ্গে ৫০ শতাংশ বৃত্তি। এর পর থেকে ধারাবাহিকভাবে ভালো ফল ধরে রেখেছেন। পাশাপাশি করোনাকালে অনলাইনে বিভিন্ন সেমিনার ও কোর্সে অংশ নিয়ে নিজেকে তৈরি করেছেন। স্নাতকের শেষ পর্যায়ে এসে বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তরের আবেদন করতে শুরু করেন তিনি।

কয়েক জায়গা থেকে নেতিবাচক সাড়া পাওয়ার পর অবশেষে ইরাসমাস মুন্ডাস জয়েন্ট মাস্টার্স প্রোগ্রামের জন্য নির্বাচিত হন তিনি। বর্তমানে ইতালির ইউনিভার্সিটি অব ক্যাসিনো অ্যান্ড সাউদার্ন লাজিয়োতে মেডিকেল ইমেজিং অ্যান্ড অ্যাপ্লিকেশন নিয়ে পড়ছেন ইমরান। স্নাতকের বিষয়ের সঙ্গে মিল না থাকলেও এখন এই বিষয়েই তাঁর আগ্রহ জন্মেছে। ইমরান বলেন, ‘আমি কম্পিউটার এইডেড ডায়াগনোসিস নিয়ে পড়াশোনা করছি। বাংলাদেশে এসব বিষয়ে পড়াশোনার সুযোগ অনেক কম। তাই মাস্টার্স শেষে পিএইচডি করার ইচ্ছা আছে। ভবিষ্যতে দেশে ফিরে একাডেমিক খাতে কাজ করতে চাই।’