প্রাণীদের জন্য পারলার ও ক্লিনিক উদ্বোধন করলেন জয়া আহসান

প্রাণিকুল অ্যানিমেল ওয়েলনেস সেন্টারের উদ্বোধন করেন অভিনেত্রী জয়া আহসান
ছবি: সংগৃহীত

ডাক্তারের জন্য অপেক্ষা করতে কেমন লাগে, বলুন তো? কোনো প্রাণীকে চিকিৎসা দিতে নিয়ে গেলে আপনার সঙ্গে ‘অপেক্ষায়’ থাকে প্রাণীটিও। পরিচিত গণ্ডির বাইরে অন্যান্য প্রাণীর উপস্থিতিতে সে ভীত-বিহ্বল হয়ে পড়তে পারে। পরিবেশটা প্রাণীবান্ধব হলে তার স্নায়ুর চাপ কমে। প্রাণীবান্ধব নানান ব্যবস্থা নিয়ে রাজধানীতে ২০৫/১, গুলশান-তেজগাঁও লিংক রোডে ১৮ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেছে ‘প্রাণিকুল অ্যানিমেল ওয়েলনেস সেন্টার’। অবশ্য তার আগে পাঁচ মাস ধরে পরীক্ষামূলক সেবা দিয়েছে তারা।

কেক কেটে উদ্বোধন করছেন অতিথিরা

অন্দরসজ্জায় স্নিগ্ধ রং। অপেক্ষার স্থানে ভেসে বেড়ায় প্রশান্ত সুর। চিকিৎসার জায়গাটাও প্রাণীবান্ধব, ধাপে ধাপে হয় চিকিৎসাসংক্রান্ত কাজ। চিকিৎসা-পরবর্তী সময়ে প্রাণীর খোঁজ নেওয়াটাকেও দায়িত্ব মনে করে তারা। সংক্রামক রোগাক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য রয়েছে আলাদা জায়গা। শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে যাতে রোগবালাই না ছড়ায়, সেদিকে লক্ষ রেখে করা হয়েছে অন্দরসজ্জা। চঞ্চল প্রাণীর জন্যও আলাদা জায়গা আছে। টেলিমেডিসিন এবং প্রাণী পরিবহনের মতো যুগোপযোগী সেবাও রয়েছে। আছে পোষা প্রাণীর গ্রুমিং সুবিধা। প্রাণীদের ভালো থাকার অবলম্বন দেওয়ার জন্যই নাম রাখা হয়েছে ‘ওয়েলনেস সেন্টার’। ইউরোপ ও আমেরিকার প্রাণী চিকিৎসাকেন্দ্রের আদর্শে প্রতিষ্ঠানটি গড়ার চেষ্টা করা হয়েছে। পথপ্রাণীর চিকিৎসার খরচে ছাড়ও রয়েছে।

প্রাণীকুলের সবখানে আধুনিকতার ছোঁয়া

প্রাণিকুলের অন্দরসজ্জার কাজটি করেছেন স্থপতি রাকিবুল এমিল। তিনি এবং তাঁর প্রাণীপ্রেমী বন্ধু ড. ফারজানা আলম, ডা. তারানা হোসেন এবং সিমু নাসের এই প্রতিষ্ঠানের সহপ্রতিষ্ঠাতা। নিজেদের প্রিয় প্রাণীটির জন্য তাঁরা যেমন সেবা চান, যেসব বিষয় নিয়ে নিজেরা আগে ভোগান্তিতে পড়েছেন, সেই সবকিছু মাথায় রেখেই এই কাজ শুরু করেছেন তাঁরা।

আরেক প্রতিষ্ঠাতা ড. ফারজানা আলম বলেন, ‘সত্যিকার অর্থেই প্রাণীদের সাহায্য প্রয়োজন। প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে প্রাণিকল্যাণের জন্য কাজ করলে তা টেকসই হয়। যখন কোনো অসহায় মানুষ কিংবা প্রাণীর জন্য ভালো কিছু করতে পারি, তখন নিজের পেশাগত সাফল্যের চেয়েও বেশি আনন্দ অনুভব করি। তাই বন্ধুদের এমন এক উদ্যোগে নিজেকে যুক্ত করেছি।’

বিড়াল রাখারও আছে সঠিক উচ্চতা

ওয়েটিং রুম সাজানো হয়েছে এভাবে

কোথাও চিকিৎসাসেবা নিতে গেলে ফ্রন্ট ডেস্কে কথা বলার সময় কিংবা ডাক্তারের জন্য অপেক্ষার স্থানে বসে থাকার সময় বিড়ালের ঝুড়িটাকে মেঝেতে নামিয়ে রাখেন অনেকেই। কিন্তু এটা একেবারেই অনুচিত। নিচে থাকা অবস্থায় বিড়াল নিজেকে অরক্ষিত বোধ করে। তাই বিড়ালদের রাখতে হয় অন্তত তিন ফুট উচ্চতায়। এমনটাই জানালেন রাকিবুল এমিল। প্রাণিকুলে ফ্রন্ট ডেস্কে কথা বলার সময় সেই সুযোগ পাওয়া যায়। অপেক্ষারত অবস্থায় সেখানকার বিড়াল রাখার ট্রলি টেনে নিজের কাছাকাছিও নিয়ে আসা যায়, যাতে অন্য প্রাণীর সঙ্গে চোখাচোখি না হয়।

রোগনির্ণয় এবং চিকিৎসা

ডাক্তার আছেন রোগীর অপেক্ষায়

প্রাণিকুলে পোষ্যের প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা এবং এক্স-রের ব্যবস্থাও রয়েছে। অস্ত্রোপচারের পর বিড়ালকে ভর্তিও রাখা যাবে। জরুরি পরিস্থিতিতে একটি কুকুরকে রাখারও ব্যবস্থা রয়েছে। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা অবধি চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। প্রাণিকুলে রোববার সাপ্তাহিক ছুটি।

টেলিমেডিসিন এবং প্রাণী পরিবহন

অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে টেলিমেডিসিন সেবা নিতে পারবেন প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। পরিবহন সেবাও নিতে পারবেন। তা ছাড়া অসুস্থ প্রাণীকে নিয়ে যেতে না পারলে পরিস্থিতি অনুযায়ী চিকিৎসকের সহকারী, এমনকি চিকিৎসক নিজেও যাবেন প্রাণীর কাছে।