স্বপ্ন নিয়ের অনুরোধে মডেল হয়েছিলেন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী রিফাত, আফরোজা, মেধা ও প্রমেশ
স্বপ্ন নিয়ের অনুরোধে মডেল হয়েছিলেন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী রিফাত, আফরোজা, মেধা ও প্রমেশ

মেডিকেল ভর্তিচ্ছুরা এসব বিষয় জেনে রাখুন

নিজের সর্বস্ব উজাড় করে দিয়ে যখন একটি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবেন, তখন থেকেই এক বিরাট জগতে প্রবেশাধিকার পেয়ে যাবেন। সেই জগতের পথে পথে সাফল্যের হাতছানি।

এমবিবিএস পাস করা চাট্টিখানি কথা নয়। অধ্যবসায়ী হতে হবে। বহু রকম পরীক্ষা দিতে হবে। মুখস্থ নয়, বুঝে পড়তে হবে। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে রোগী দেখতে হবে। এসবের মধ্যেই হয়তো নিজের আগ্রহের জায়গাটা খুঁজে পাবেন। মেডিসিন, সার্জারি বা স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যায় কিংবা এসবের কোনো শাখায় স্নাতকোত্তর পর্যায়ের পড়ালেখা করতে আগ্রহী হতে পারেন। নাক-কান-গলা বা চোখের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হতে চান কেউ, কেউ চান ক্যানসারবিশেষজ্ঞ হতে। কারও ইচ্ছা হয় পরিপাকতন্ত্রের রোগবালাইয়ের চিকিৎসায় দক্ষ হয়ে উঠতে, কেউ আবার হতে চান নিউরোসার্জন। বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনসের ফেলোশিপ (এফসিপিএস) এবং মেম্বারশিপ (এমসিপিএস) পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ আছে। এ ছাড়া দেশে এমডি বা এমএস করতে পারবেন, বহু বিষয়ে ডিপ্লোমার সুযোগও আছে।

দেশের বাইরের ডিগ্রি অর্জন

অনেকে দেশের বাইরের ডিগ্রির জন্যও প্রস্তুতি নেন। যেমন যুক্তরাজ্যের রয়্যাল কলেজ অব ফিজিশিয়ানসের মেম্বারশিপ (এমআরসিপি) বা ফেলোশিপ (এফআরসিপি) পরীক্ষায় অংশ নেওয়া যায়। সার্জারি, স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা, ইমার্জেন্সি মেডিসিন প্রভৃতি বিষয়ের জন্যও এ ধরনের পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ আছে। এমআরসিপি (মেডিসিন) পরীক্ষার সব ধাপ এখন বাংলাদেশ থেকেই দেওয়া যায়। তবে এক সেশনের সব শিক্ষার্থীই যে সে সুযোগ পাচ্ছেন, তা অবশ্য নয়। আবার সব বিষয়ের জন্য সেই সুযোগও নেই।

এমবিবিএস পাস করতে অধ্যবসায়ী হতে হবে।

ভিনদেশে ক্যারিয়ার

দেশের বাইরে গিয়ে কোনো ডিগ্রি নিয়ে অনেকে দেশে ফিরে আসেন। অনেকে আবার বিদেশবিভুঁইয়েই গোছাতে চান ক্যারিয়ার। সে ক্ষেত্রে আপনার পছন্দের দেশে চিকিৎসক হিসেবে কাজ করার পূর্বশর্তগুলো আপনাকে ভালোভাবে জানতে হবে। সেই দেশের নিয়মকানুন অনুযায়ী নিজেকে প্রস্তুত করে তুলতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বহু দেশেই বাংলাদেশি চিকিৎসকেরা সুনামের সঙ্গে কাজ করেন।

ভিন্ন কিছু চাইলে

প্রথাগত ভাবনা হলো, চিকিৎসক মানেই স্টেথোস্কোপ গলায় ঝুলিয়ে রোগী দেখা। বাস্তবে ব্যাপারটা একেবারেই এমন নয়। বেসিক ও প্যারাক্লিনিক্যাল বিষয়গুলোতেও চিকিৎসকদের ক্যারিয়ার গড়ার দারুণ সুযোগ আছে। নানান বিষয়ে গবেষণামূলক কাজের সুযোগ পাবেন। অ্যানাটমি, ফিজিওলজি, মাইক্রোবায়োলজি বা ফরেনসিক মেডিসিন হতে পারে আপনার পছন্দের বিষয়। জনস্বাস্থ্যের মতো একটি মহাগুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও পড়ার সুযোগ আছে দেশে-বিদেশে। মেডিকেল কলেজগুলোতে শিক্ষক হিসেবে কিংবা বিভিন্ন ল্যাবরেটরিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করার জন্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করতে হবে। দেশেই এমফিল, এমডি, এফসিপিএস করতে পারেন। পড়তে পারেন বিদেশেও। যেমন এমপিএইচ বা পিএইচডির সুযোগ আছে দেশ–বিদেশে।

স্বপ্ননিয়ের অনুরোধে মডেল হয়েছিলেন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী প্রমেশ, আফরোজা, মেধা ও রিফাত।

বহুমাত্রিক ভাবনায়

পছন্দের বিষয় যেটিই হোক না কেন, দেশে সরকারি কিংবা বেসরকারি বহু প্রতিষ্ঠানেই চিকিৎসাবিজ্ঞান–সংশ্লিষ্ট পেশায় কাজের সুযোগ পাবেন আপনি। ব্যক্তিগত ব্যবস্থায় চেম্বারে রোগী দেখতে পারবেন। তবে এসবের কোনোটিই যদি আপনার মোটেও ভালো না লাগে, তাতেও হতাশ হয়ে পড়বেন না যেন। বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে পররাষ্ট্র, পুলিশ, প্রশাসন কিংবা অন্য কোনো ক্যাডারে যাওয়ার সুযোগ থাকবে। বহু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভিন্ন ধরনের কাজও খুঁজে নিতে পারবেন। তবে সেই কাজের ওপর অবশ্যই দক্ষতা গড়ে তুলতে হবে। নইলে প্রতিযোগিতার পৃথিবীতে টিকে থাকতে পারবেন না।

শেষ কথা

এমবিবিএস সম্পন্ন করে চিকিৎসক হওয়াই লক্ষ্যের শেষ নয়। বরং সেখান থেকেই আপনার জন্য সম্ভাবনার বহু দুয়ার খুলে যাবে। নিজের ভালো লাগা, সময়ের চাহিদা, কাজের সুযোগ প্রভৃতি বিবেচনা করে তবেই সিদ্ধান্ত নেবেন। কিন্তু তার আগে অনেকটা পথ আপনাকে পেরোতে হবে। প্রথমে জয় করতে হবে ভর্তি যুদ্ধ। এরপর ধীরে ধীরে আপনি নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন, কোন দিকে যাবেন। তবে যে পথেই যান না কেন, মানুষের কল্যাণে নিজেকে যুক্ত রাখবেন সব সময়। তাতেই জীবনের সার্থকতা।

লেখক: ক্লিনিক্যাল স্টাফ, নিউরোমেডিসিন বিভাগ, স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেড, ঢাকা