২৫ এপ্রিল চট্টগ্রামের লালদীঘির মাঠে অনুষ্ঠিত হলো আবদুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা বা জব্বারের বলীখেলা। অনেক প্রতিযোগীর মধ্যে এবারও দেখা গেছে মফিজুর রহমান ও খাজা আহমদকে। সত্তরোর্ধ্ব দুজন রিংয়ে নামতেই করতালিতে মুখর হয়ে উঠেছিল মাঠ। দুই মিনিট লড়াইয়ের পর দুজনকেই জয়ী ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। প্রবীণ দুই বলীর গল্প শোনাচ্ছেন প্রণব বল
মফিজুর রহমান (৭০) বলীখেলার কৌশল রপ্ত করেছেন ছোটবেলায়। তাঁর বাবা বলী খেলতেন, খেলতে দেখেছেন দাদাকেও। ১০ কি ১১ বছর বয়সে মফিজুরও পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে অংশ নিতেন বলীখেলায়। এরপর নাম লিখিয়েছেন জব্বারের বলীখেলায়। এখনো তাঁর মনজুড়ে বলীখেলার নেশা। কোথাও বলীখেলা হচ্ছে শুনলেই ছুটে যান।
মফিজুর রহমান বলেন, ‘পাকিস্তান আমল থেকে বলীখেলায় অংশ নিচ্ছি। কক্সবাজার, সাতকানিয়া, লোহাগাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে বলী খেলেছি। জব্বারের বলীখেলায় তিনবার চ্যাম্পিয়ন আমি। একবার টেকনাফের নূর মোহাম্মদ বলীকে, আরেকবার রাউজানের আইয়ুব খানকে হারিয়েছিলাম। আরেকবার রাঙ্গুনিয়ার এক বলীকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হই। ছোটবেলার নেশা থেকে এখনো বলীখেলায় ছুটে যাই।’
মফিজুর রহমানের বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে। নিজের জমিজমা নেই, বর্গাচাষি। তিন ছেলে, দুই মেয়ে তাঁর। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন, ছেলেরা আলাদা থাকেন। ২৫ এপ্রিল বলীখেলা শেষে রাতেই হাটহাজারীতে ফিরে গেছেন। পরদিন দুপুরে যখন তাঁর সঙ্গে কথা হয়, তখন জমিতে ধান কাটছিলেন। ফোনের ওপাশ থেকে বললেন, ‘বলীখেলা কৌশলের খেলা, গায়ের জোরের নয়। এই প্রতিদ্বন্দ্বীর পিঠ মাটিতে ফেলতে শক্তিরও দরকার। এর জন্য ভালো খাবারদাবার খেতে হয়। কিন্তু আমরা গরিব মানুষ, ভালো খাব কী করে!’
বলীখেলা আর পরিশ্রমের কাজ করেন বলে এই বয়সেও শরীরে তাঁর কঠিন রোগবালাই বাসা বাঁধেনি বলে জানালেন।
মফিজুর রহমান সুস্থ থাকলেও খাজা আহমদ (৭১) এক বছর ধরে ফুসফুসের সমস্যায় ভুগছেন। অসুস্থতার কারণে এবারের জব্বারের বলীখেলা শেষে তিনি আর অংশ নেবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তবে যত দিন বেঁচে থাকবেন প্রাণের বলীখেলা দেখতে ছুটে আসবেন প্রতিবার।
খাজা আহমদ জানালেন, তাঁর বাবাও বলীখেলা খেলতেন। ১১ কি ১২ বছর বয়স থেকে তিনি নিজেও বলীখেলায় জড়িয়ে পড়েন। গ্রামেগঞ্জে বলীখেলায় ছুটে যেতেন। জব্বারের বলীখেলায় ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে অংশ নিচ্ছেন। একবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন বলেও দাবি তাঁর।
খাজা আহমদও কৃষিকাজ করেন। তাঁর বাড়ি চট্টগ্রামের পতেঙ্গায়। এলাকায় তিনি ‘খাজা আহমদ বলী’ নামে পরিচিত। তাঁর তিন ছেলে, এক মেয়ে। জব্বারের বলীখেলায় ১১ বছর ধরে অংশ নিচ্ছেন তাঁর বড় ছেলে মো. সেলিম। এ বছর তাঁর আরেক ছেলে মো. কাইয়ুমও জব্বারের বলীখেলায় প্রথমবারের মতো অংশ নেন।
সেলিম বলছিলেন, ‘আমার বাবার কাছ থেকে আমরা বলীখেলা শিখেছি। বাবা এখন কিছুটা অসুস্থ। তাই তাঁকে বুঝিয়ে অবসর নিতে বলেছি।’
প্রতিবছর ২ বৈশাখ লালদীঘির মাঠে জব্বারের বলীখেলা অনুষ্ঠিত হয়। বলীখেলা ঘিরে তিন দিনের মেলা বসে আশপাশের এলাকায়। জব্বারের বলীখেলার কোনো রেকর্ড মেলা কমিটির কাছে সংরক্ষিত নেই। তবে মেলা কমিটির সভাপতি জহরলাল হাজারী জানান, খাজা আহমদ ও মফিজুর রহমান বর্তমানে সবচেয়ে প্রবীণ বলী।