আসছে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির মৌসুম। শিক্ষার্থীদের জন্য এ সময় ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়ে কোন প্রশ্নগুলো নিজেকে করা দরকার? লিখেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের পরিচালক বি এম মইনুল হোসেন
পড়ালেখাটা যে বিষয়ই হোক, যদি আগ্রহ থাকে, তাহলে আশানুরূপ ফল পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোনো একটি বিষয়ে ভর্তি হওয়ার আগে সেটার প্রতি আগ্রহ থাকে না। কিন্তু সে বিষয়ে কিছুদিন পড়াশোনার পর ভালো লেগে যায়। বর্তমানে কোনো বিভাগ বা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে জানার ভালো উপায় হলো সংশ্লিষ্ট বিভাগের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যগুলো দেখা। কয়েকটি ওয়েবসাইট ঘুরেফিরে দেখলে একটা ধারণা পাওয়া যায়। এ ছাড়া ওই বিষয়ে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে যিনি বর্তমানে পড়ছেন বা আগে পড়েছেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে পারো।
একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর নিজেকে জিজ্ঞাসা করতে হবে, এই পথ, ক্যারিয়ার বা বিষয় কেন আমি পছন্দ করলাম? সঙ্গে এটিও বিবেচনা করতে হবে যে পছন্দ করা বিষয়ে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার মতো প্রাথমিক জ্ঞান আমার আছে কি না, আগে এই বিষয়সংশ্লিষ্ট পড়ালেখায় আমি দক্ষতা দেখানোর সুযোগ পেয়েছি কি না। যেমন কেউ যদি গণিত পছন্দ না করে, তাহলে পরিবারের চাপে বা অন্যের কথায় তার গণিতনির্ভর বিষয়ে (যেমন প্রকৌশল) না পড়াই ভালো। ইচ্ছা আর দক্ষতার মধ্যে সামঞ্জস্য থাকতে হবে। মনে রেখো, মহাকাশের প্রতি আগ্রহ থাকা আর মহাকাশবিজ্ঞান নিয়ে পড়ালেখা এক জিনিস নয়। নিজের ভালো লাগাকে অগ্রাধিকার দিয়ে পরিবারের অভিজ্ঞ সদস্যদের মতামতকেও প্রাধান্য দিতে হবে। তবে সব দিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে নিজেকেই।
বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্বাচনের ক্ষেত্রে বেশ কিছু জিনিস মাথায় কাজ করে। যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম, অবস্থান, পছন্দের বিষয়ে আসনসংখ্যা, সহশিক্ষা কার্যক্রমের সুযোগ, খরচ ইত্যাদি। সবকিছু একসঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন করতে গেলে প্রথমেই হোঁচট খেতে পারো। আগে লক্ষ্য ও সাধ্য অনুযায়ী ভর্তি পরীক্ষা দাও। যদি একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ হয়ে যায়, তারপর না হয় যাতায়াত, সুনাম, খরচ কিংবা অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করা যাবে।
প্রস্তুতি নেওয়ার ক্ষেত্রে সবার নিজস্ব একটা রীতি থাকে। যেভাবে প্রস্তুতি নিলে নিজের কাছে ভালো মনে হয়, সেভাবে এগোনোই শ্রেয়। মনে রাখতে হবে, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ধরন ও ভর্তি পরীক্ষার ধরনের মধ্যে পার্থক্য আছে। অতএব স্বাভাবিকভাবেই এগুলোর প্রস্তুতির ধরনও আলাদা হবে। তবে এ ধরনের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার ক্ষেত্রে দলগত প্রস্তুতি ভালো কাজে আসে। যেমন প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সুযোগ না হলেও কয়েকজন সহপাঠী মিলে নিজেরাই দলগতভাবে কিছু পরীক্ষার আয়োজন করতে পারো, নিজেদের অবস্থা যাচাই করতে পারো। আগের বছরগুলোর পরীক্ষার প্রশ্ন থেকেও ধারণা পাওয়া যায়। যেগুলো বুঝতে অসুবিধা হয়, সেটির একটি তালিকাও করা যেতে পারে। পরে শিক্ষক, সহপাঠী, ইন্টারনেট ইত্যাদি মাধ্যম থেকে তালিকায় থাকা বিষয়গুলো বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
যেকোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় কাউকে না কাউকে তালিকা থেকে বাদ পড়তেই হয়। অতএব শুধু একটা লক্ষ্য নির্দিষ্ট না করে বেশ কয়েকটি লক্ষ্য নির্ধারণ করে এগোতে হবে। প্রথম পছন্দটি না হলে দ্বিতীয়টি, সেটিও না হলে তৃতীয়টি। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিষয়ের কোনো না কোনো সবল দিক থাকে, কিছু না কিছু সেখান থেকে পাওয়ার সুযোগ আছে। সেটি যদি না হতো, তাহলে সে বিশ্ববিদ্যালয় বা সে বিষয়ের প্রয়োজনই থাকত না। নিজের পছন্দ অবশ্যই নির্ধারণ করতে হবে। কিন্তু পছন্দমতো না হলেই যে একেবারে সবকিছু শেষ হয়ে গেল, এ ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।