আজ ১ অক্টোবর, আন্তর্জাতিক কফি দিবস। কফি খাওয়ার উপকারিতা কী, কিংবা এর কোনো ক্ষতিকর দিক আছে কি না, এসব নিয়ে আজ কথা তো হতেই পারে। তবে তা নয়, একটু ভিন্ন কিছু বলি। কেন ‘কফির মতো’ হবেন? কফির কাছ থেকে আমাদের কী শেখার আছে?
অদ্ভুত শোনাচ্ছে? এ বিষয়েই আস্ত একটা বই আছে। নাম দ্য কফি বিন: আ সিম্পল লেসন টু ক্রিয়েট পজেটিভ চেঞ্জ। লেখক ডেমন ওয়েস্ট ও জন গর্ডন। বইতে লেখকেরা একটা গল্প বলেছেন। সেই গল্পটাই আগে বলি, শুনুন।
অ্যাব্রাহাম ছিল একটা মার্কিন হাইস্কুলের ছাত্র। খুব ভালো ফুটবল খেলত। ফুটবলের জন্যই স্কুলে সে রীতিমতো তারকা বনে গিয়েছিল। সবাই তাকে পছন্দ করত। পড়ালেখায়ও সে বেশ ভালো। স্কুলে অ্যাব্রাহামের প্রিয় শিক্ষক ছিলেন মিস্টার জ্যাকসন।
একদিন জ্যাকসন লক্ষ করলেন, ক্লাসে অ্যাব্রাহামের মন নেই। সে কেবল অন্যদিকে তাকিয়ে থাকে, কী যেন ভাবে। জ্যাকসন তাঁর প্রিয় ছাত্রকে ক্লাসের পর দেখা করতে বললেন। জানতে চাইলেন, ‘ কী হয়েছে তোমার?’ অ্যাব্রাহাম জানাল, তাঁর বাসায় খুব ঝামেলা চলছে। মা-বাবা প্রতিদিন ঝগড়া করেন। যেকোনো দিন তাঁরা আলাদা হয়ে যাবেন। সামনে পরীক্ষা। আবার খুব গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্টও আসছে। সবাই তাকিয়ে আছে অ্যাব্রাহামের দিকে। এই চাপ সে আর নিতে পারছে না।
জ্যাকসন কিন্তু ছাত্রকে কোনো লম্বা বক্তৃতা শোনালেন না। উপদেশ দিলেন না। বরং একটা অদ্ভুত অ্যাসাইনমেন্ট দিলেন। বললেন, ‘তুমি কাল সকালে একটা পাতিলে পানি আর একটা গাজর নেবে। তারপর পাতিলটা চুলায় বসিয়ে দেবে। পানি গরম করবে। কী হয়, আমাকে জানাবে।’ অ্যাব্রাহাম বাধ্য ছেলের মতো তা-ই করল। পরদিন স্যারকে জানাল, পানি গরম হওয়ার পর গাজরটা সেদ্ধ হয়ে একদম নরম হয়ে গেছে।
জ্যাকসন এবার আরেকটা অ্যাসাইনমেন্ট দিলেন। বললেন, ‘এবার তুমি গাজরের বদলে পানিতে একটা ডিম রাখবে। কী হয়, আমাকে জানাবে।’
পরদিন অ্যাব্রাহাম জানাল, পানির গরমে ডিমটা সেদ্ধ হয়ে শক্ত হয়ে গেছে।
স্যার বললেন, ‘তুমি এবার পানিতে এক চামচ কফির দানা দেবে। দেখবে কী হয়।’ অ্যাব্রাহাম তা-ই করল। পরদিন জানাল, যা হওয়ার তা-ই হয়েছে। কফি পানির সঙ্গে মিশে গেছে।
স্যার লম্বা দম নিয়ে বললেন, ‘শোনো, তুমি যখন চারপাশ থেকে চাপ অনুভব করবে, তখন চাইলে গাজরের মতো নরম হয়ে যেতে পারো, কিংবা ডিমের মতো শক্ত হতে পারো। মনে মনে বলতে পারো, “তোমরা আমার ওপর চাপ দিচ্ছ? ঠিক আছে, আমিও শক্ত হয়ে থাকব।” তাতে কিন্তু তোমার কষ্টই বাড়বে। তোমাকে যা করতে হবে, সেটা হলো কফির দানার মতো আশপাশের পরিবেশের সঙ্গে মিশে যেতে হবে। খেয়াল করে দেখো, গাজর বা ডিমের ক্ষেত্রে কিন্তু পানির কোনো পরিবর্তন হয়নি। গাজর নরম হয়ে গেছে, ডিম শক্ত হয়েছে। কিন্তু কফির দানা তার চারপাশ বদলে ফেলেছে। কফির ক্ষেত্রে পানিটা আর শুধু পানি নেই।’
স্যারের গল্প শুনে অ্যাব্রাহাম যে রাতারাতি তার জীবন পাল্টে ফেলেছিল, তা কিন্তু নয়। বিপুল উদ্যমে খেলতে নেমে প্রথম ম্যাচেই তার পা ভেঙে গিয়েছিল! তার ফুটবলার হওয়ার স্বপ্নটা আর পূরণ হয়নি। তবু, সে স্যারের কথা মনে রেখেছে। নিজের স্কুলে ‘কফি বিন ক্লাব’ খুলেছে। ঘুরে ঘুরে সবাইকে এই তত্ত্বের কথা বলেছে।
ডেমন ওয়েস্ট ও জন গর্ডন বলছেন, এই গল্পের শিক্ষা যদি আপনি নিজের জীবনে কাজে লাগাতে পারেন, তাহলে আপনার জীবনেও আসতে পারে ইতিবাচক পরিবর্তন।
চেষ্টা করে দেখবেন নাকি?