‘বেঞ্চিং’ এক ধরনের ‘ম্যানিপুলেশন’। ডার্ক সাইকোলজিতে একে বলে ‘লাভ বম্বিং’। নিজের আকর্ষণ ক্ষমতার মাধ্যমে অন্যকে মোহিত করে তাঁর কাছ থেকে রোমান্টিক সম্পর্কের সুবিধা নেওয়া
‘বেঞ্চিং’ এক ধরনের ‘ম্যানিপুলেশন’। ডার্ক সাইকোলজিতে একে বলে ‘লাভ বম্বিং’। নিজের আকর্ষণ ক্ষমতার মাধ্যমে অন্যকে মোহিত করে তাঁর কাছ থেকে রোমান্টিক সম্পর্কের সুবিধা নেওয়া

সম্পর্কে আপনি বেঞ্চিংয়ের শিকার হচ্ছেন না তো?

ক্রিকেট বা ফুটবলে আপনি নিশ্চয়ই ‘বেঞ্চিং’ শব্দটা শুনে থাকবেন। মূল দলের বাইরে কিছু সদস্যকে দলে রাখা হয়। মূল দলের সদস্যদের ইনজুরি হলে বা হুট করে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে অথবা অন্য কোনো জরুরি প্রয়োজন দেখা দিলে—তাঁকে দিয়ে যখন খেলানো সম্ভব হয় না, তখন বেঞ্চ থেকে অন্য কাউকে ওই খেলোয়াড়ের বদলি নামানো হয়। ‘হাতে রাখা’ বা বেঞ্চ করে রাখা ওই খেলোয়াড় মূলত একটা বিকল্প। ঠিক একই ব্যাপার সম্পর্কের ক্ষেত্রেও ঘটে! আপনার বয়স যদি ১৮ থেকে ২৭-এর মধ্যে হয়; অর্থাৎ তরুণ জেন-জির দলভুক্ত হন, তাহলে সমূহ সম্ভাবনা আছে আপনি ইতিমধ্যে সম্পর্কে ‘বেঞ্চিং’ টার্মটার সঙ্গে পরিচিত।

বেঞ্চিং কী

বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ডেটিং অ্যাপের মধ্য দিয়ে ভার্চ্যুয়ালি সম্পর্কে জড়ানো যত সহজ হয়েছে, ততই বেঞ্চিংয়ের জনপ্রিয়তার পালে হাওয়া লেগেছে। মনে করুন, আপনি ইতিমধ্যে একটা সম্পর্কে আছেন। এর মধ্যে অন্য কারও সঙ্গে আপনার যোগাযোগ হলো। আপনি এই ‘অন্য কাউ’কে হ্যাঁও বলছেন না, আবার না-ও করছেন না। দিব্যি কথা বলছেন, সময় কাটাচ্ছেন, তবে সম্পর্কটাকে এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে ভাবছেন না। একটা সম্ভাবনা বা বিকল্প হিসেবে ‘ঝুলিয়ে রাখছেন’, এর মানে হলো, আপনি তাঁকে বেঞ্চিং করছেন!  

মানুষ কেন বেঞ্চিং করে

‘বেঞ্চিং’ এক ধরনের ‘ম্যানিপুলেশন’। ডার্ক সাইকোলজিতে একে বলে ‘লাভ বম্বিং’। নিজের আকর্ষণ ক্ষমতার মাধ্যমে অন্যকে মোহিত করে তাঁর কাছ থেকে রোমান্টিক সম্পর্কের সুবিধা নেওয়া। এ ক্ষেত্রে প্রথম সম্পর্ক ভেঙে গেলে ওই ব্যক্তির ‘ইমোশনাল ড্যামেজ’ অনেক কম হয়।

সহজেই বিকল্প সম্পর্কে ডুবে যেতে পারেন। তবে এ রকমটা হয় খুব কম। অনেকে এমনিতেই এক বা একাধিক ব্যক্তিকে ‘বেঞ্চিং’ করে রাখেন। এভাবে তিনি নিজেকে মানসিকভাবে ‘পাওয়ারফুল’ ভাবেন। তাঁদের অনেক সময় ‘প্লে বয়’ বা ‘প্লে গার্ল’ বলে। এগুলো একধরনের সাইকোলজিক্যাল ডিজঅর্ডার।


এমনও হয়, দুপক্ষই দুপক্ষকে সমঝোতার ভেতর দিয়ে বেঞ্চিং করছে। এটাকে বলতে পারেন ‘স্যাটেলাইট রিলেশনশিপ’। কেউ কারও ‘প্রথম প্রায়োরিটি’ নন। আর এটা দুজনই জানেন। দুজনই এখানে মূলত তাঁদের ‘প্রধান সম্পর্ক’-এর নানা সমস্যা নিয়ে কথা বলেন। দুজন দুজনকে ‘মানসিক ব্যাকআপ’ হিসেবে ব্যবহার করেন। এমনকি বিজ্ঞাপন দিয়েও অনেকে ‘বেঞ্চিং পার্টনার’ খোঁজেন। এক ব্যক্তি একাধিক ব্যক্তির ‘বেঞ্চিং পার্টনার’, এমনও হয়। পেশাদার ‘বেঞ্চিং পার্টনার’ও হয়। ‘বেঞ্চড’ হওয়ার মাধ্যমে তিনি আর্থিকভাবে লাভবান হন। আর দুপক্ষই এই বিষয়ে অবগত থাকে। সময়ের সঙ্গে এমন সব ঘটনার সংখ্যা বাড়ছেই।  

কীভাবে বুঝবেন যে কেউ আপনাকে বেঞ্চিং করছে

১. বেঞ্চিংয়ে কোনো প্রতিশ্রুতি থাকে না। একটা সুস্থ-স্বাভাবিক সম্পর্কে যেমন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা থাকে, বেঞ্চিংয়ে সেটা থাকে না।

২. বেঞ্চিং হওয়ার অর্থ, আপনি ‘বিকল্প’ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছেন। তাই দেখা যাবে, তিনি কেবল তাঁর প্রয়োজনে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন! আপনাকে অপর পক্ষ মানসিক সমর্থনের উৎস হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। ‘ইমোশনাল ব্ল্যাকমেল’ করে কঠিন পরিস্থিতিতে আপনার কাছ থেকে সাহস, সান্ত্বনা, সমর্থন নেবে। অথচ প্রয়োজনে আপনি তাঁকে পাশে পাবেন না। নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগের জন্য অপর পক্ষকে আপনি পাবেন না। দেখবেন, প্রায়ই তিনি নানা কাজের অসিলা দিয়ে উধাও হয়ে গেছেন! টিকটকে অনেকেই ‘বেঞ্চিং’-এর অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। একজন জানিয়েছেন, তিনি নাকি তাঁর ‘কথিত প্রেমিক’-এর সপ্তম বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিলেন!  

৩. আপনি যদি বেঞ্চিংয়ের শিকার হন, তাহলে অপর পক্ষ আপনার সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি কখনোই সামাজিকভাবে স্বীকার করবে না। আপনাকে তাঁর বন্ধুবান্ধব, পরিবার, সহকর্মী—এ রকম কারও সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবেন না। এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও পারতপক্ষে আপনাকে নিয়ে কোনো পোস্ট দেবেন না। আপনার সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি গোপন রাখবেন।

৪. কথোপকথনের একটা বড় অংশজুড়ে থাকবে অন্য প্রসঙ্গ। আপনার প্রসঙ্গে বা সম্পর্কের সামনের ধাপ নিয়ে তিনি খুব কমই কথা বলবেন। অন্য সম্ভাব্য ‘ডেটিং’-এর বিষয়েও আলাপ করতে পারেন। বিষয়টা এমন যে গোলাপবাগানে বেড়াতে এসে তিনি টিউলিপবাগানের গল্প করছেন।

৫. আপনার মনের কথা মন দিয়ে শুনুন। নিজের ‘ইন্সটিংক্ট’কে অনুসরণ করুন। অনেক সময় আমরা আবেগীয়ভাবে সম্পর্কে থাকায় মনের সতর্কবাণী শুনতে পাই না।

আপনার কী করণীয়

আপনি যদি বোঝেন যে আপনি বেঞ্চিংয়ের শিকার, সময় নষ্ট না করে ওই ব্যক্তির সঙ্গে খোলামেলা আলাপ করুন। বিষয়টা পরিষ্কার করুন। হয় সম্পর্কে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হন। অথবা সম্পর্কটা সেখানেই শেষ করুন। আর শেষ করার পর সম্ভব হলে ওই ব্যক্তির ‘প্রথম পছন্দ’কে পুরো বিষয়টা জানিয়ে দিন।

মনে রাখবেন, বেঞ্চিং একধরনের প্রতারণা। যিনি বেঞ্চিংয়ের শিকার হন, তিনি সব সময় একটা মানসিক হীনম্মন্যতায় ভোগেন। প্রতিনিয়ত নিজের সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করেন আর হতাশ হন। এমন সম্পর্কে সময় নষ্ট করার কোনো মানেই নেই। হয় তাঁকে সম্পর্কে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে। নতুবা এমন সম্পর্কে দাঁড়ি টানতে হবে। কেননা, এমন পরিস্থিতিতে আপনি কেবল একজন ‘ভিকটিম’। বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার আপনার কোনো কারণ নেই!

সূত্র: সাইকোলজি টুডে