সময়ের দাবি মেনে নতুন ঘটকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে ডেটিং অ্যাপগুলো। বাংলাদেশে অনলাইনে যা কিছু খোঁজা হয়, তার মধ্যে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে ‘ফ্রি ডেটিং অ্যাপ’। এসব অ্যাপ নিয়ে নেতিবাচক ধারণা বা অভিজ্ঞতা আছে সন্দেহাতীতভাবেই। তবে এটাও তো ঠিক, সবকিছুরই ইতিবাচক-নেতিবাচক দিক আছে। একইভাবে ডেটিং অ্যাপও হতে পারে ইতিবাচক যোগাযোগমাধ্যম। এসব অ্যাপ ব্যবহার করে জীবনসঙ্গী খুঁজে নেওয়ার আগে কিছু বিষয় জেনে রাখা অত্যন্ত জরুরি। আসুন, জেনে নেওয়া যাক...
গ্লোবাল ভিলেজ ধারণার গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ ডেটিং অ্যাপ। এখানে লোকে নিজের ছবি, নাম, ই-মেইল, ফোন নম্বর, আগ্রহের বিষয়, অপছন্দ, নিজের সম্পর্কে কিছু কথা ও অন্যান্য তথ্য দিয়ে অ্যাকাউন্ট খোলেন। অ্যাপ ‘নিজ উদ্যোগে’ আপনাকে ‘স্টাডি করে’ সম্ভাব্য জীবনসঙ্গী কেমন হতে পারে, সে বিষয়ে সাজেশন বা পরামর্শ দেয়। আপনি সে সাজেশন গ্রহণ করতে পারেন, আবার নিজেই খুঁজে বেড়াতে পারেন সঙ্গী। মনে রাখবেন, জীবনসঙ্গী খুঁজে দেওয়ার পাশাপাশি হতাশা উৎপাদনেও ‘নামডাক’ আছে ডেটিং অ্যাপগুলোর। নারীদের জীবনযাপনবিষয়ক মার্কিন ওয়েবসাইট ‘পিওরওয়াও ডটকম’ অনুসারে চট করে দেখা নেওয়া যাক অনলাইনে জীবনসঙ্গী খোঁজার অ্যাপগুলোতে সঠিক মানুষটাকে খুঁজে পাওয়ার কিছু পরামর্শ।
স্পষ্ট ধারণা
আপনি কি সারা দিন ডেটিং অ্যাপ স্ক্রল করতে থাকেন? একটু বিরতি নিন। কয়েক দিন ডেটিং অ্যাপ ভুলে অন্য কিছুতে মন দিন। মাথাটা খালি আর চাপমুক্ত করুন। এবার ঠান্ডা মাথায় ভাবুন, ডেটিং অ্যাপ থেকে আপনি আদতে কী চাইছেন? অবসরে কথা বলার মানুষ, নাকি যখন বড্ড একা লাগে, সেই সময় কাটানোর জন্য টেক্সটিং সঙ্গী? নাকি একেবারে জীবনসঙ্গী? তারপর আবার হাত বাড়ান ডেটিং অ্যাপের দিকে। একই সময়ে একাধিক মানুষের সঙ্গে কথা বলবেন না। একই সময় একাধিক ডেটিং অ্যাপ ব্যবহারও করবেন না।
দিনের একটা নির্দিষ্ট সময় ডেটিং অ্যাপ ব্যবহার করুন। দিনে ১৫ মিনিট যদি আপনি নিয়ম করে ডেটিং অ্যাপ ব্যবহার করেন, তাহলেও আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন। যদি দেখেন, কারও সঙ্গে আপনার কথা বলতে ভালো লাগছে, সে ক্ষেত্রে হয়তো সময়টা বাড়িয়ে ৩০ মিনিট করতে পারেন। তবে ডেটিং অ্যাপে ঢুঁ দেওয়া ছাড়াও তো আপনার আরও হাজারটা কাজ আছে। তা ছাড়া খুব বেশি ‘এভেইলেবল’ বা ‘ওপেন’ থাকবেন না। বরং ‘আ’ম লেস’ পারসোনালিটি অপর পক্ষকে অধিক কৌতূহলী করে। লম্বা সময় কৌতূহল ধরে রাখে।
ফিল্টার্ড ছবি
অনেক ফিল্টার্ড ছবি পোস্ট করবেন না। ছবি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটা ছবি ১০০ কথার সমান বার্তা দেয়। যে ছবি অনেক বেশি ফিল্টার্ড, সেখান থেকে তথ্যবিভ্রাট তৈরি হয়। ছবির ভেতর দিয়ে একটা মানুষের ব্যক্তিত্ব ফুটে ওঠে। উচ্চমাত্রার ফিল্টার্ড ছবিতে ব্যক্তিত্ব সঠিকভাবে ধরা দেয় না। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের ছবি পোস্ট করবেন। একটাতে হয়তো আপনার নিজের মুখটাই মুখ্য থাকতে পারে, আরেকটা ছবিতে আপনার পূর্ণাঙ্গ ছবি রাখতে পারেন, তৃতীয় ছবিটা হতে পারে আপনার পরিবার বা বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে।
আপনি যেমন তেমনই
আপনার প্রোফাইলটা এমনভাবে সাজান, যাতে আপনার সঙ্গে কোনো কথোপকথন শুরু করা সহজ হয়। যেমন হয়তো আপনি ঘুরতে পছন্দ করেন। বাঞ্জি জাম্পিংয়ের ছবি দিলেন। রান্না ভালোবাসেন, নিজের পছন্দের একটা রেসিপি শেয়ার করলেন। নিজেকে এমনভাবে উপস্থাপন করুন, যাতে আপনার ব্যক্তিত্ব, ভালো লাগা, মন্দ লাগা সঠিকভাবে উঠে আসে। মনে রাখবেন, আপনি কেবল নিজের স্বতন্ত্রতা দিয়েই নিজেকে অন্যদের থেকে আলাদা করতে পারবেন। আপনি যেমন, তেমনভাবেই উপস্থাপন করুন নিজেকে।
বিজ ফ্ল্যাগ, রেড ফ্ল্যাগ, গ্রিন ফ্ল্যাগ
‘বিজ ফ্ল্যাগ’ যত কম দেখাবেন, ততই ভালো। ‘রেড ফ্ল্যাগ’ মানে ‘না’; আপনি পছন্দ করেন না বা চান না, এ রকম। ‘গ্রিন ফ্ল্যাগ’ মানে আপনার সম্মতি আছে। আর ‘বিজ ফ্ল্যাগ’ হলো এই দুইয়ের মাঝামাঝি, আপনি ঠিক পছন্দও করছেন না, আবার বাদও দিতে পারছেন না। ‘বিজ ফ্ল্যাগ’ মানে হলো আপনি দ্বিধান্বিত বা আপনার ব্যক্তিত্ব শক্তিশালী নয়।
প্রশ্ন করুন
কথায় বলে, মানুষকে তার উত্তর দিয়ে নয়; বরং প্রশ্ন দিয়ে বিচার করুন। একটা সম্পর্ক ভালোভাবে শুরুর জন্য লম্বা, গভীর কথোপকথনের জুড়ি মেলা ভার। আর সেই কথোপকথনের জন্য ভালো প্রশ্নের কোনো বিকল্প নেই। প্রশ্নের ভেতর দিয়েই সম্পর্কের অনেক গভীর কথোপকথন, আবেগীয় মুহূর্ত তৈরি হয়। যখন মনে হবে, অপর পক্ষ আপনাকে আর কৌতূহলী করছে না, তখনো সময় নিন। তারপর আপনার যদি আর কথা বলতে ভালো না লাগে, তাহলে সেটা যতটা সম্ভব সুন্দরভাবে জানান। গোস্টিং বা হঠাৎ করে ডিলিট/ব্লক করে হাওয়া হয়ে যাওয়া ঠিক নয়।
সূত্র: পিওরওয়াও