টিকে থাকার জন্যই আমরা একজন সঙ্গী বাছাই করি। অথচ এই সঙ্গীর সঙ্গেই হয় মনোমালিন্য। সম্পর্কে ধরে ফাটল। সুসম্পর্কের যেমন লক্ষণ থাকে, সম্পর্ক নড়বড়ে হওয়ারও লক্ষণ ফুটে ওঠে আমাদের নানান কর্মকাণ্ডে। তবে অনেক সময় এসব লক্ষণ আমরা ধরতে পারি না। বিশেষজ্ঞরা এসব চিহ্নিত করেছেন, পাশাপাশি সম্পর্ক নড়বড়ে হলে কী করণীয়, সে সম্পর্কেও বলেছেন। চলুন, সম্পর্কে ভাঙন ধরার কারণ এবং সমাধানের পরামর্শগুলো জানা যাক।
১. একে অপরের প্রতি ঘৃণা
যুক্তরাষ্ট্রের গটম্যান ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ দুই মনোবিজ্ঞানী জন ও জুলি গটম্যান। তাঁরা প্রায় ৪০ বছর দাম্পত্য জীবন নিয়ে গবেষণা করেছেন। তাঁদের মতে, একে অপরের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শনের কারণে সম্পর্ক শেষ হয়ে যেতে পারে। যেমন ধরুন, সঙ্গীর পছন্দকে অপমান বা অবজ্ঞা করা, কথায় ঘৃণা প্রকাশ করা কিংবা সঙ্গীকে উপহাস করা। এসব আচরণ সঙ্গীর আত্মবিশ্বাস এবং অনুভূতিকে নাড়া দেয়। সহজভাবে বললে, পারস্পরিক সম্মান হারানো যেকোনো সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দেখা দিতে পারে। তাই একে অপরকে ঘৃণা নয়, কাছে টেনে নিন।
২. একে অপরকে তিরস্কার
সঙ্গীর আচরণ বা ব্যবহার নিয়ে তিরস্কার করে সমস্যার সমাধান করতে চাইলে আপনি ব্যর্থই হবেন। তাহলে আপনি কীভাবে সঙ্গীর সমস্যার কথা বলবেন? বিশেষজ্ঞরা বলেন, শব্দচয়নে সতর্ক হতে হবে। ‘তুমি সব সময় এ রকম করো’ বা ‘তুমি কখনোই এটা পার না’—এ ধরনের কথা না বললেই মঙ্গল। বরং সমস্যাটা বুঝিয়ে বলুন, পরিণতিটা বুঝিয়ে আলোচনায় বসুন। আর তা না করলে সঙ্গী ভাববে, তিনি কখনোই ভালো কিছু করেন না। আর এতেই সম্পর্ক শেষের সূচনা হতে পারে। তাই একে অপরকে তিরস্কার না করে কীভাবে সম্পর্কের ভীত শক্ত করা যায়, সে চেষ্টা করুন।
৩. অযৌক্তিক তুলনা করা
সিনেমায় যা হয়, তা বাস্তবে চাইলেও সম্ভব না। এমনকি আজকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমরা যেসব তারকাদের দেখি, তাদের সঙ্গে বাস্তবের জীবনযাপনের সম্পর্ক সামান্যই। তাই তারকাদের সঙ্গে সঙ্গীর তুলনা করে কিছু প্রত্যাশা করলে স্বাভাবিকভাবেই হতাশ হবেন। পর্দার তারকা এবং বাস্তবের জীবনসঙ্গী যে এক নয়, তা আপনাকে বুঝতে হবে। আর এসব বিষয় নিয়ে সঙ্গীর সঙ্গে তর্ক করা মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ নয়। সম্পর্ক বাঁচিয়ে রাখতে চাইলে বাস্তবের মাটিতে পা রাখুন, সঙ্গীর প্রতি প্রত্যাশা হোক যুক্তিসংগত।
৪. সমস্যায় নীরব থাকা
আপনার পছন্দমতো কাজ করতে না পারলে কি সঙ্গীর থেকে দূরে সরে যাবেন? হতে পারে আপনি দিনের পর দিন এটা নিয়ে বিরক্ত হন। সঙ্গীর সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা না করে হয়তো নীরব থাকেন। হয়তো ভাবেন, নীরব থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ। কিন্তু এভাবে নীরব থাকলে আপনাদের সম্পর্কের মধ্যে দেয়াল তৈরি হবে। সেই দেয়াল ভেদ করে আর বেরিয়ে আসা সম্ভব হয় না। ধীরে ধীরে সম্পর্ক ঠুনকো হয়ে যায়। একসময় আর সম্পর্ক বাঁচিয়ে রাখা যায় না। তাই নীরব না থেকে সঙ্গীর সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনা করুন। দুজনের মতামত নিয়ে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছান।
৫. সঙ্গীকে গুরুত্ব না দেওয়া
একে অপরকে অগ্রাধিকার দেওয়া, সঙ্গীর মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া যেকোনো সম্পর্কের মৌলিক বিষয়। অনেক সময় আপনার মনে হতে পারে, সঙ্গীকে খুশি রাখতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হচ্ছে। সঙ্গীর জন্য বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারকে সময় দেওয়ার ফুরসতও পাচ্ছেন না। এমন পরিস্থিতি যে সামনে আসে না, তা নয়। তাই বলে হুট করে চটে না গিয়ে কথা বলুন। সঙ্গীর সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করুন। যেকোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হলে সঙ্গীর পরামর্শ নিন। আপনার সঙ্গী যেন বুঝতে পারে, আপনি তাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছেন।
৬. শারীরিকভাবে কাছাকাছি না আসা
কাছে আসা বলতে মোটেও যৌনতা বোঝায় না, একে ভালোবাসা বলতে পারেন। এই ভালোবাসার মধ্যে আছে কাছে এসে বসা, স্পর্শ করা, জড়িয়ে ধরা ও চুমু দেওয়ার মতো বিষয়আশয়। অর্থাৎ, আপনার সঙ্গী যেন বুঝতে পারে, সে আপনার কাছে মূল্যবান। এতে সম্পর্কের গভীরতা বাড়ে। একে অপরকে ভালোভাবে জানাবোঝা হয়।
৭. আত্মসচেতনতার অভাব
আগের ছয়টি পয়েন্ট পড়ার পর যদি মনে হয়, এসব লক্ষণের সবই আপনার সঙ্গীর মধ্যে আছে কিন্তু আপনার মধ্যে নেই, তাহলে বুঝতে হবে আপনার আত্মসচেতনতার অভাব আছে। আপনাকে আরও সচেতন হতে হবে। অন্যের সঙ্গে ঝগড়ার সময় আপনি যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখান, তা পরিবর্তন করতে হবে। হয়তো আত্মসচেতনতার অভাবে আপনি আপনার সঙ্গীকে অযথা দায়ী করছেন। যেকোনো সুন্দর সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট। তাই নিজে সচেতন হওয়া বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট