পাঠকের প্রশ্ন বিভাগে আইনগত সমস্যা নিয়ে নানা রকমের প্রশ্ন পাঠিয়েছেন পাঠকেরা। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মিতি সানজানা নির্বাচিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এবার
প্রশ্ন: আমি মুসলিম পুরুষ। বয়স ২৭ বছর। দুই বছর আগে পারিবারিকভাবে মসজিদে হুজুরের মাধ্যমে আমার বিয়ে হয়েছে। আমাদের এক বছরের একটি কন্যাসন্তান আছে। বিয়ের সময় আমার স্ত্রীর পরিবার বলেছিল, ‘কনের বয়স হয় নাই এবং কাগজপত্র ঠিকঠাক নাই।’ পাশাপাশি কাজীর পরামর্শে তখন তারা কাবিন করতে চায়নি। তখন আমার পরিবার থেকেও কোনো আপত্তি করেনি। দুই পক্ষ গুরুত্ব না দেওয়ায় এখন পর্যন্ত আমাদের কাবিন করা হয়নি। এ অবস্থায় আমি কোনো ঝামেলায় পড়ব কি?
মো. ইমরান, ঠিকানা পাওয়া যায়নি
উত্তর: মুসলিম বিবাহ ও বিবাহবিচ্ছেদ (নিবন্ধন) আইন, ১৯৭৪-এর বিধানমতে, প্রতিটি বিয়ে নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক। সরকার কর্তৃক নিয়োগকৃত নিকাহ রেজিস্ট্রাররা সরকারের নির্ধারিত পদ্ধতিতে প্রতিটি বিয়ে ও তালাকের পৃথক নিবন্ধন বজায় রাখেন। আপনি জানিয়েছেন, আপনাদের বিয়ে একজন নিকাহ রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে নিবন্ধন (রেজিস্ট্রি) না করে কোনো মাওলানা বা হুজুরের মাধ্যমে মসজিদে সম্পন্ন করা হয়েছে। আইনে বলা আছে, মাওলানা বা হুজুরের মাধ্যমে, অর্থাৎ ধর্মীয় বিধান মেনে মসজিদে বিয়ে করা হলেও সে ক্ষেত্রে বিয়ে যেদিন হবে, সেদিন থেকে পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট নিকাহ রেজিস্ট্রারের কাছে গিয়ে বিয়ের নিবন্ধন করবেন। কিন্তু আমরা অনেক ঘটনা দেখতে পাই, যেখানে পরে বিয়েটি আর নিকাহ রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে নিবন্ধন করা হয় না। বিয়ে নিবন্ধন করার দায়িত্ব স্বামীর ওপর থাকে। কাজেই স্বামী বিয়ে নিবন্ধন না করলে বা তাঁর দায়িত্ব পালন না করলে দুই বছর পর্যন্ত মেয়াদের বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা তিন হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় শাস্তি হতে পারে। তবে বিয়ে নিবন্ধন না করলে বিয়েটি অবৈধ হয়ে যাবে না।
কাবিননামা বা নিকাহনামা বিয়ের একমাত্র লিখিত প্রামাণ্য দলিল। বিয়েসংক্রান্ত যেকোনো সমস্যায় এর প্রয়োজন হয়। এ ক্ষেত্রে যদি কোনো পক্ষ এই বিয়ে অস্বীকার করেন, তাহলে আপনাকে বিয়ের ছবি কিংবা অন্যান্য সাক্ষ্যপ্রমাণের মাধ্যমে বিয়ে প্রমাণ করতে হবে। সাক্ষী বা বিয়ে সম্পর্কে জানেন, এমন কোনো লোকের সাক্ষ্য বা বিয়ে–সম্পর্কিত যেকোনো তথ্য বা দলিল আদালতে দাখিল করে বিয়ে হয়েছে, তা প্রমাণ করা হয়। তবে এ পদ্ধতিতে প্রমাণ করা খুবই ঝামেলাপূর্ণ বিষয়। এখানে দলিল বলতে বোঝানো হয়েছে কোনো ছবি, ভিডিও, মেসেজ বা লিখিত অন্য কোনো দলিল, যা বিয়ের প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
বিয়ে নিবন্ধন না করা হলে সম্পত্তির উত্তরাধিকার, মৃতের সন্তানদের উত্তরাধিকার, ভরণপোষণ ও মোহরানার অধিকার নিয়ে নানা রকম জটিলতা সৃষ্টি হয়। বিয়ে নিবন্ধন করা না থাকলে বিদেশে গমন বা ইমিগ্রেশনের ক্ষেত্রে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। বিয়ের সনদ ও কাবিননামা বিভিন্ন দেশের ভিসা ও ইমিগ্রেশনে একটি অপরিহার্য দলিল। এটি ছাড়া আবেদন করা যায় না। এ জন্যই বিয়ের কাবিন ও নিবন্ধন গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে কাজ করে।
পাঠকের প্রশ্ন পাঠানো যাবে ই–মেইলে, ডাকে এবং প্র অধুনার ফেসবুক পেজের ইনবক্সে। ই–মেইল ঠিকানা: adhuna@prothomalo.com (সাবজেক্ট হিসেবে লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’) ডাক ঠিকানা : প্র অধুনা, প্রথম আলো, প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবন, ২০–২১ কারওয়ান বাজার, ঢাকা ১২১৫। (খামের ওপর লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’) ফেসবুক পেজ: fb.com/Adhuna.PA