পৃথিবীতে এমন কিছু মানুষ রয়েছেন, যাঁরা কেবল নিজেকেই গুরুত্ব দেন, নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত ও মগ্ন থাকেন। অন্যের ভালো–মন্দ তাঁদের কাছে বিশেষ গুরুত্ব পায় না। তবে এই মানুষেরাও তো কারও না কারও সঙ্গী হন। কী ঘটে সেই সঙ্গীদের জীবনে? ব্যক্তিগত সম্পর্কের জায়গায় কেমন থাকেন তাঁরা?
এ ধরনের মানুষকে বলে নার্সিসিস্ট। অতি মাত্রায় নার্সিসিস্টরা আত্মমগ্ন ও কর্তৃত্বপরায়ণ। তাঁরা নিজেদের সেরা ভাবেন। তাঁদের ভাবনায় থাকে কেবল ‘আমিত্ব’। নিজের ভালো দিক অন্যের সামনে জাহির করতে চান তাঁরা। ব্যক্তিগত সম্পর্ককে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেষ্টা করেন। সম্পর্কের শুরুটা ‘মিষ্টি কথা’ দিয়ে করলেও এক পর্যায়ে গিয়ে নিজের সঙ্গীকে মানসিক বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলে দেন তাঁরা। একটা মধুর সম্পর্ককে তিক্ত করে তোলেন।
আপনার সঙ্গী এমন ব্যক্তিত্বের অধিকারী হয়ে থাকলে আপনারও নিদারুণ মানসিক যন্ত্রণায় ভোগার আশঙ্কা রয়েছে। জেনে নেওয়া যাক, এই আত্মমগ্ন ও কর্তৃত্বপরায়ণ ব্যক্তিদের কিছু বৈশিষ্ট্য।
নিজেদের সব সময় সঠিক মনে করেন তাঁরা।
অন্যের আবেগ ও অনুভূতি তাঁদের কাছে মূল্যহীন।
খুব কম মানুষের সঙ্গেই তাঁদের বন্ধুত্ব দীর্ঘদিন টিকে থাকে। কারও কারও দীর্ঘদিনের বন্ধু বলতেই কেউ থাকে না।
কথা বলার সময় নিজের ‘বড়ত্ব’ প্রকাশের দিকেই তাঁদের বেশি মনোযোগ থাকে।
অন্যের প্রশংসা পেতে চাওয়ার দিকেই তাঁদের সবচেয়ে বেশি আগ্রহ।
কাউকে কাউকে ভীষণ হিংসাও করতে পারেন। কেউ কেউ আবার নিজেকে এতটাই সেরা মনে করেন যে তাঁদের কাছে মনে হয়, অন্যরা তাঁকে হিংসা করেন।
অন্যের প্রতি উদ্ধত আচরণ করেন তাঁরা। তাঁদের মধ্যে অন্যকে নিয়ন্ত্রণ করার প্রবণতা থাকে। সঙ্গীকে ‘গ্যাসলাইট’ করে থাকেন তাঁরা। নিজের ভুল দিব্যি সঙ্গীর ঘাড়ে চাপিয়ে ‘ভিকটিম কার্ড’ খেলেন। অর্থাৎ সঙ্গীকে ‘ছোট’ করতে করতে আত্মবিশ্বাসহীনতার দিকে ঠেলে দেন।
একাডেমিক বা পেশাগত জীবনের সাফল্য নিয়ে তাঁদের মনে আলাদা ফ্যান্টাসি থাকে।
সঙ্গীর প্রতিটি বিষয়েই নিজস্ব মতামত চাপিয়ে দিতে চেষ্টা করেন তাঁরা।
সঙ্গীর ভুল বা ‘খুঁত’ ধরতে ওস্তাদ।
প্রতিটা সম্পর্কেই ভুল–বোঝাবুঝি থাকতে পারে। কিন্তু এ ধরনের মানুষেরা নিজের ভুলটা যেন চোখেই দেখতে পান না। তাই ভুলের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনাও করেন না।
বেশ কিছুদিন এমন মানুষের সঙ্গে সম্পর্কে থাকলে তাঁদের সঙ্গীরা অনায়াসেই বিষয়গুলো অনুধাবন করতে পারেন। মানসিক নিপীড়নের শিকার হতে পারেন তিনি। এমন অবস্থায় কিন্তু ভালোবাসার অনুভূতি কিংবা সামাজিক চাপের চেয়ে নিজের ভালো থাকাকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
আপনার ক্ষেত্রে যদি এমনটা ঘটে, তাহলে ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখুন, আপনার সঙ্গী কি সত্যিই এ ধরনের ব্যক্তিত্বের অধিকারী, নাকি তাঁর মধ্যে এসব বৈশিষ্ট্যের অল্প কয়েকটি বিদ্যমান। আপনি সম্পর্কের কোন বিষয়গুলো নিয়ে সমস্যা অনুভব করছেন, তা নিয়ে আপনার সঙ্গীর সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করতে পারেন। তাঁর বদলে যাওয়া আচরণের কোন দিকগুলোর কারণে আপনি কষ্ট পাচ্ছেন, তা বুঝিয়ে বলুন।
এত সবের মধ্যেও নিজের বৈশিষ্ট্য ধরে রেখে আপনার ওপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করার কাজটাই চালিয়ে যেতে পারেন আপনার সঙ্গী। সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে যেতে চাইলেও সঙ্গীকে কথার আঘাতে জর্জরিত করে তুলতে পারেন তিনি। এমনটা ঘটতেই পারে যে ভালোবাসার সুখময় অনুভূতি ও প্রিয়জনের কোমল স্পর্শ কোনো কিছুই তাঁকে বদলাতে পারছে না। আপনি ও আপনার সঙ্গী দুজনেই একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে পারেন। তবে কোনো কিছুতেই কাজ না হলে আপনাকে নিজের ভালো থাকার জন্য কঠোর সিদ্ধান্তের পথে হাঁটতে হতে পারে।
ভালো থাকার শেষ উপায় হিসেবে বেছে নিতে হতে পারে বিচ্ছেদের পথ। তবে খেয়াল রাখবেন, আপনি তাঁকে ছেড়ে গেলেও তিনি হয়তো আপনাকে ছেড়ে কথা কইবেন না। নিজের মনের শক্তি বাড়ান। কাছের বন্ধুদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত হোন। যুক্ত হোন নিজের ভালো লাগার কাজে।
সূত্র: হেলথলাইন