বসন্তে নাকি বাতাসে ‘প্রেম’ ভাসে। হেমন্তের মৃদু আবহাওয়াও ভালোবাসার অনুকূল। হিম হিম দিনেও ব্যক্তিগত পর্যায়ের সম্পর্কে বেশ আন্তরিক উষ্ণতার পরশ অনুভব করা যায়। ব্যক্তিজীবনে আবহাওয়ার এমন প্রভাব উপলব্ধি করে থাকতে পারেন আপনিও। তবে সত্যিই কি সম্পর্কের ওপর আবহাওয়ার সরাসরি কোনো প্রভাব আছে?
তীব্র গরমের সময়টায় মেজাজও বেশ গরম হয়ে উঠতে পারে বৈকি। অমন উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে ‘উত্তপ্ত’ বাক্যের আদান–প্রদান হতেও দেখা যায়। অল্পতেই রেগে যান অনেকে। ব্যক্তিগত সম্পর্কের ক্ষেত্রেও মনোমালিন্য হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। অন্যদিকে কিন্তু শরৎ, হেমন্ত কিংবা বসন্তকালের অধিকাংশ সময়ে বেশ আরামদায়ক আবহাওয়া থাকে। শরীরের ওপর আবহাওয়ার তেমন কোনো বিরূপ প্রভাব পড়ে না এ সময়। তাই মনমেজাজও বেশ ভালো থাকে। আর সম্পর্কগুলোর প্রতি যত্নশীল হয়ে ওঠার প্রবণতাও লক্ষ করা যায়। এমনটাই বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী এবং পিএইচডি গবেষক হাজেরা খাতুন।
আবহাওয়া-দেহ-মন
প্রচণ্ড গরমে সহজেই পানিশূন্যতা সৃষ্টি হয়। স্বাভাবিক কাজের পরিশ্রমটাও অনেক বেশি বলে অনুভূত হয়। শরীর সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে। কেউ হয়তো অচেনা মানুষের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়ান, কেউ আবার বাইরে থেকে ফিরেই সারা দিনের সব ক্ষোভ উগরে দেন। গরমের তীব্রতা কমে গেলে কিন্তু এই চিত্র বদলে যায়। দেহ আরাম পেলে মনটাও স্থির থাকে। পারস্পরিক আচরণটাও সুন্দর হয়। ঝগড়া-বিবাদ কম হয়। বরং সময়টাকে উপভোগ করা যায় প্রাণবন্তভাবে। আবেগীয় আচরণে ইতিবাচকতা সৃষ্টি হয়। প্রকৃতির কাছে সময় কাটানোর সুযোগও মেলে শরৎ, হেমন্ত কিংবা বসন্তে।
হিম হিম ভাব
হেমন্তের এই দিনে আপনি হয়তো একটু হিমের পরশ অনুভব করতে শুরু করেছেন। এ সময়টা দারুণ। প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটাতে বেশ লাগে। আবার শীতের সময় পিঠাপুলির আয়োজন কিংবা অন্যান্য নিমন্ত্রণেও যুগলেরা যান একসঙ্গে। বছরের শেষ দিকে ছুটি নিয়ে এদিক-ওদিক ঘুরতেও যান অনেক দম্পতি। বাড়িতে থাকলেও একসঙ্গে ভালো লাগার কাজগুলো করতে পারেন হাসি-আনন্দে। শৈত্যপ্রবাহের সময়টায় শারীরিক কিছু অসুবিধা সৃষ্টি হলেও কিন্তু এমন নানা ইতিবাচকতার কারণে পারস্পরিক বন্ধনের দৃঢ়তা বজায় রাখা সহজ হয়।
আসছে ধূসর দিনে…
প্রকৃতির ধূসরতার প্রভাবও পড়ে আমাদের মনে। মেঘাচ্ছন্ন কিংবা কুয়াশা জড়ানো দিনে অনেকে মন খারাপের অনুভূতিতে আচ্ছন্ন হন। স্বাভাবিক আনন্দ-উচ্ছ্বাস সেই সময় তাঁকে আর খুব একটা ছুঁয়ে যায় না। এমন সময়ে প্রিয়জনের সান্নিধ্য কিন্তু ভীষণ দরকারি। বিষণ্নতা নিরাময়ের ওষুধের চাইতেও বেশি কার্যকর হয়ে উঠতে পারে প্রিয়জনের ভালোবাসা। তাই আসছে শীতে কিংবা শীত পেরিয়ে বর্ষায় যদি আপনার প্রিয় মানুষকে বিষণ্ন হয়ে পড়তে দেখেন, তাঁর ভালো থাকার জন্য সবচেয়ে জরুরি ভূমিকা রাখতে হবে কিন্তু আপনাকেই।