প্রেমের গুঞ্জন যখন সত্যি, সামলাবেন কীভাবে?

‘ওরা দুজন প্রেম করছে।’ বন্ধুদের এই কথা গুঞ্জন নাকি সত্যি! অধুনার এই আয়োজনে মডেল হয়েছেন রিয়ান ও ললনা
ছবি: কবির হোসেন

বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন আনন্দ আর নীরা। দুজনে ছিলেন কেবলই বন্ধু। পেশাগত কাজে পরিচয়, সেখান থেকেই বন্ধুত্ব। দুজনের সামাজিক বলয়ও এক। তারপর তাঁদের ঘিরে হঠাৎ গুঞ্জন উঠল। অনেকেই বলতে শুরু করেন, ‘আনন্দ আর নীরা তো প্রেম করছে।’ খবরটা একসময় তাঁদের কানে এসেও পৌঁছাল। কেউ কেউ সরাসরি জিজ্ঞাসা করে বসলেন, ‘তোমার প্রেমিকের বা প্রেমিকার খবর কী?’

তখনই প্রথম বিষয়টি নিয়ে ভাবতে বসেন আনন্দ। বলেন, ‘ভাবলাম, জীবনসঙ্গীর কাছ থেকে আমি আসলে কী চাই? সাহস করে নীরার সঙ্গেও বিষয়টি শেয়ার করলাম। ও তো শুরুতে হাসাহাসি করল। তবে বিষয়টি ওর মাথায়ও ঢুকল। তারপর যখন ওর কাছ থেকেও একই রকম আভাস পাচ্ছিলাম, সোজা প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে বসলাম।’

এরপর কী হলো? কিছুদিন ‘প্রেম করা’র পর দুজন যখন বুঝলেন যে তাঁরা একে অপরকে জীবনসঙ্গী হিসেবে দেখছেন, তখন পরিচিত সবাইকে রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ছাদে দাওয়াত দিলেন। নীরা সেদিন পরে এসেছিলেন নীল শাড়ি, চুলে বাগানবিলাস আটকাতেও ভোলেননি। আরেকজন অতি উৎসাহী আবার বিষয়টি আঁচ করতে পেরে কেকও নিয়ে এসেছিলেন। চা, সমুচা ও কফি খাওয়ানো শেষে ঘোষণা দিয়ে জানান, প্রেম করছেন তাঁরা। মিষ্টি খেতে খেতে অনেকেই বলেন, ‘এ আর নতুন কী, আমরা তো কবে থেকেই জানি।’ তখন তাঁরা বুঝিয়ে বলেন, আগেরটা শুধুই গুঞ্জন ছিল, এখন প্রেম করছেন। মানে দাঁড়াল, মাঝেমধ্যে যা রটে তা থেকেও ঘটে!

যখন সবাই বলবে আপনারা সম্পর্কে আছেন, তখন কী করবেন

বলিউড থেকে হলিউডে পা রাখা প্রিয়াঙ্কা চোপড়া আর নিক জোনাসের ক্ষেত্রে এমনটা হয়েছিল। নিককে তাঁর এক বন্ধু বলেছিল, ‘তোমার আর প্রিয়াঙ্কার উচিত দেখা করা। অন্তত একবার দেখা করা। কেন যেন আমার খুব করে মনে হয়, তোমাদের ভেতর কিছু একটা ঘটে যেতে পারে।’ তা শুনেই মার্কিন গায়ক নিক জোনাস সরাসরি প্রিয়াঙ্কাকে ইনস্টাগ্রামে বার্তা পাঠান। তাঁরা দুজনে দেখা করেন। যখন দুজনে দেখা–সাক্ষাৎ করছিলেন, বোঝার চেষ্টা করছিলেন সম্পর্কটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় কি না। তখনই রটে যায় যে তাঁরা দুজনে প্রেম করছেন। যদিও তখনো তাঁরা কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাননি। এরপর যখন তাঁরা নিজেরা নিশ্চিত হলেন, ২০১৭ সালের মেট গালায় দুজন প্রকাশ্যে একসঙ্গে হাঁটলেন। এভাবেই তাঁরা নীরবে নিজেদের প্রেমের ঘোষণা দেন। ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর মহা সমারোহে বিয়ে করেন এই জুটি।

২০১৭ সালের মেট গালায় নিক জোনাস ও প্রিয়াঙ্কা চোপড়া প্রকাশ্যে এসে জানান দেন সম্পর্কের

হয়তো আপনারা কেবলই বন্ধু, বন্ধুত্বের বাইরে আলাদা করে কখনো কিছু ভাবেননি, তবু অন্যরা মনে করছেন যে আপনারা প্রেম করছেন। সে রকমই একটা অবস্থার ভেতর দিয়ে গিয়েছিলেন আলোকচিত্রী তমাল (ছদ্মনাম)। বললেন, ‘যার সঙ্গে আমার প্রেমের গুজব রটেছিল, তিনি আমার সহকর্মী ও বন্ধু। কাজের ফাঁকে চা-কফি খেতে খেতে আমরা আড্ডা দিই। কেউই কাউকে বন্ধুর বাইরে কিছু ভাবিনি। আসলে আমরা দুজন বন্ধু হিসেবেই ভালো। এসব গুজব আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্কে কোনো আঁচ ফেলতে পারেনি। কে কী বলল, এতে আমাদের দুজনের কারও কিছু যায়–আসেনি। দুই বছর পর অন্যদের সঙ্গে আমিও হইহই করে আমার সেই বন্ধুর বিয়ে খেয়েছি। এখনো আমরা আগের মতোই বন্ধু।’

ফারজানার ক্ষেত্রে আবার ঘটেছিল অন্য রকম ঘটনা। তিনিও বন্ধুর সঙ্গেই প্রেম করতেন। লুকোছাপা ছিল না। আবার ঘোষণা দিয়ে প্রেম করছেন, এমনটাও নয়। দুজনকেই যেহেতু অনেকে চেনেন, কেউ কেউ একজনের সম্পর্কে আরেকজনকে কানভাঙানি দিতেন। তখন সে বিষয়গুলো নিয়ে দুজনে খোলামেলা আলাপ করতেন, যাতে সেটা নিয়ে নিজেদের ভেতরে কোনো ভুল–বোঝাবুঝি না হয়।

অন্যের কথায় না, নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে বুঝুন প্রেম আছে কি না। মডেল: ললনা ও রিয়ান

বন্ধুত্বটাকে প্রেমে উন্নীত করতে চাইলে কোন বিষয়গুলো খেয়াল করা উচিত? এমন প্রশ্নের উত্তরে বিয়ে ও সম্পর্কবিষয়ক পরামর্শক হুরায়রা শিশির বলেন, দুজন বন্ধুর তখনই প্রেম বা বিয়ে নিয়ে ভাবা উচিত, যখন অন্যের প্রতি ভালোবাসার বিষয়টি তাঁরা নিশ্চিত। তাঁরা যখন মনে করেন যে ‘হ্যাঁ’ সারা জীবন একসঙ্গে থাকার মতো যথেষ্ট ছাড় দিতে আমি প্রস্তুত। সেই সঙ্গে একজন অন্যজনকে পুরো বিশ্বাস করার মতো মানসিক অবস্থায় পৌঁছাতে পেরেছেন কি না, বুঝে নিন। বন্ধু বা সহকর্মীরা হয়তো গুঞ্জন তুলেছেন, কিন্তু আপনার মনের মধ্যে আস্থার জায়গা তৈরি হয়েছে কি না, সেটা ভাবতে হবে।

বন্ধুকে বিয়ে করার কী সুবিধা

বন্ধুকে বিয়ে করলে বোঝাপড়ার জায়গাটা মজবুত থাকে। মডেল: ললনা ও রিয়ান

মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক জনপ্রিয় অনলাইন প্ল্যাটফর্ম বেটার হেল্প-এর একটি প্রতিবেদনে বলছে, বন্ধুকে বিয়ে করার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, বিয়ের পর নিজেকে বদলে ফেলার কোনো ব্যাপার থাকে না। কেননা, দুজন দুজনকে ইতিমধ্যে ভালোভাবে জানেন, তাঁদের মতো করে মেনে নিয়েছেন। যোগাযোগ যেকোনো সম্পর্কের গভীরতার মূল ভিত্তি। বন্ধুকে বিয়ে করার দ্বিতীয় সুবিধাটা হলো, ভুল–বোঝাবুঝির শঙ্কা খুবই কম। মনের ভেতরের অবস্থা অকপটে বলে ফেলতে কোনো বাধা নেই। ফলে কাউকে কোনো কিছু অনুমান করে মন ভারের সুযোগ নেই। তৃতীয়ত, আপনারা ইতিমধ্যে বন্ধু। তার মানে আপনারা দুজন দুজনকে বিশ্বাস করেন, দুজনের সঙ্গ উপভোগ করেন, কার কী অপছন্দ, তা এড়িয়ে যেতে পারেন। দুজনেই দুজনের অতীত সম্পর্কে অবগত। তাই পুরোনো ভুল নতুন করে ফিরে আসার শঙ্কা কম।