আমাদের জীবনে সময়ের বড্ড অভাব। সব সময় আমরা যেন একটা তাড়াহুড়া, হুলুস্থুলের ভেতর আছি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যেরকমটা বলেছিলেন, ‘সময়ের সমুদ্রে আছি কিন্তু এক মুহূর্তে সময় নেই।’ তবে সময় যতই কম থাকুক, এই কাজগুলো ধীরেসুস্থে আর বুঝেশুনে করবেন।
১. প্রেমে পড়া
প্রেমে পড়া বারণ নয়। কবির ভাষায়, যতক্ষণ আপনি প্রেমে পড়েন, ততক্ষণ আপনি বেঁচে আছেন। তবে হুটহাট প্রেমে পড়ে জীবনে জটিলতাকে নেমন্তন্ন করার কোনো কারণ নেই। অনুভূতিটা জিইয়ে রাখুন। সময় নিন। বুঝেশুনে যুক্তি দিয়ে সিদ্ধান্ত নিন, মানুষটাকে আপনি আপনার জীবনে সাদরে আমন্ত্রণ জানানবেন কি না।
২. খাওয়া
আমরা অনেকেই কাজের ব্যস্ততায় তাড়াহুড়ায় খাই। খাওয়ার সময়ও অন্য হাতে মোবাইল স্ক্রল করতে থাকি। যেন, কিছু এটা পেটে চালান দিতে পারলেই হলো! বিষয়টা মোটেও এ রকম নয়। অবশ্যই খাবার খেতে হবে ধীরে ধীরে, ভালোভাবে চিবিয়ে।
অস্ট্রিয়ার ১৫০ বছরের পুরোনো একটা ওয়েলনেস ইনস্টিটিউটে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন বিষয়ে কর্মশালায় অংশ নিতে গিয়েছিলেন বলিউড তারকা আর মাধবন। সেখানকার এক ডাক্তার বলেছিলেন ‘আমাদের এখানে আমরা একটা নীতি মেনে চলি। সেটা হলো ভাত খাও গিলে গিলে আর পানি খাও চিবিয়ে। এটার মানে হলো, এই যে চার টুকরা রুটি, এগুলোকে একটু একটু করে মুখে নিতে হবে। এরপর ভালো করে চিবুতে হবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না খাবারটা মুখের ভেতর একদম তরল হয়ে যায়। যখন রুটি মুখের ভেতর পানির মতো তরল হয়ে যাবে, তখন গিলতে পারবেন। অন্যদিকে স্যুপ মুখে নিয়েই গিলে ফেলা যাবে না। কিছুক্ষণ ভেতরে রাখতে হবে। দাঁত দিয়ে চিবানোর চেষ্টা করতে হবে, মুখের ভেতরের প্রতিটি জায়গায় যেন তা পৌঁছে, সেদিক নজর দিতে হবে।’ আর এটাই যেকোনো খাবার খাওয়ার সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর উপায়।
ডায়েট করতে চাইলে অল্প খাবার নিয়ে সেটা ১৪ মিনিট ধরে চিবান। আমাদের মস্তিষ্ক ১৪ থেকে ১৫ মিনিটের বেশি চিবুতে পারে না। আমরা যতই ক্ষুধার্ত থাকি না কেন, খাবারের মেনুতে যা কিছুই থাকুক না কেন, খাবাররে পরিমাণ যত কম বা বেশি হোক—কোনো খাবারই ১৪/১৫ মিনিটের বেশি সময় ধরে আমরা চিবুতে পারব না। ১৪ মিনিট ধরে চিবুতে থাকলে আমাদের মগজ শরীরকে সংকেত পাঠাবে যে আমাদের খাবার হয়ে গেছে, এবার থামো! ফলে সময় নিয়ে খেলে আপনার খাবারের পরিমাণটাও নিয়ন্ত্রণে থাকবে, হজমেও গোলমাল হবে না।
৩. আপনি কি তাঁকে ভালোভাবে চেনেন, জানেন?
কথায় বলে, সমগ্র মহাবিশ্বে যতটা না জটিলতা, একটা মানুষের মস্তিষ্ক (মন) তার চেয়েও জটিল। তাই হুট করে মানুষকে ভালোমন্দের গ্যারান্টি বা সার্টিফিকেট দিতে যাবেন না। আপনার বিচার হয়তো সঠিক, তবে সেটাও যাচাইয়ের জন্য আরও সময় নিন। একটা মানুষের ওপর আপনি যা কিছু বিনিয়োগ করতে পারেন, এর ভেতর সবচেয়ে জরুরি হলো বিশ্বাস। হুট করে একটা মানুষকে আপনার বিশ্বাস দেবেন না।
পারতপক্ষে অল্প সময়ে মানুষকে ‘বিচার’ করতে যাবেন না। আর যত প্রকার ‘জাজমেন্ট’ আছে, এর ভেতর চরিত্র নিয়ে কাটাছেঁড়া সবচেয়ে বাজে। আর আপনি কারও বাস্তবতা পুরোপুরি জানেন না। তাই মানুষের চরিত্র নিয়ে সহজেই কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাবেন না। মিথ্যা কথা বলা, কাজে ফাঁকি দেওয়া, ঘুষ খাওয়া, দুর্নীতি করা, আলস্য, লোভ, দায়িত্ব না নেওয়া, প্রতারণা— এই সমস্তকিছুই খারাপ চরিত্রের লক্ষণ।
৪. বড় সিদ্ধান্ত
ঝোঁকের বশে কোনো বড় সিদ্ধান্ত নেবেন না। সিদ্ধান্তটা মাথায় নিয়ে কয়েক দিন জীবনযাপন করুন। সিদ্ধান্তটাকে সময় দিন।