বন্ধুদের সবার বিয়ে হয়েছে, কেউ কেউ হয়তো সংসার-সন্তান নিয়ে পুরোদস্তুর ‘সংসারী’, বিয়ে হয়নি কেবল একজনের। এমন ‘একজন’ই ভালো জানেন, অবিবাহিত থাকার ফলে সামাজিক চাপ কাকে বলে! তাই ওই একজনের সঙ্গে আমাদের আচরণ কী হবে, তা জানা জরুরি। এমন কিছু কথা থাকে, যা বন্ধু হয়েও অবিবাহিত বন্ধুটিকে কখনোই বলতে নেই। আপনি হয়তো সাদামনেই বলছেন, কিন্তু এমন কথায় আঘাত লাগতে পারে তাঁর মনে। কারও নিজের মনের গহিনে তাঁর অবিবাহিত থাকার বিষয়টা নিয়ে কোনো দুঃখবোধ থেকে থাকলে কিংবা হরহামেশাই সামাজিক পরিসরে কটু কথা শোনার অভিজ্ঞতা থেকে থাকলে আপনার ‘সামান্য’ কথায়ই কষ্ট পেতে পারেন তিনি। আপনি যদি বন্ধু বা শুভাকাঙ্ক্ষী হয়ে থাকেন, তাহলে অবিবাহিত ব্যক্তিকে এসব কথা বলবেন না কখনো।
আপনি হয়তো প্রশংসা হিসেবেই বলছেন। কিন্তু এর অর্থ এমন দাঁড়াতে পারে যে তিনি সুন্দর হওয়া সত্ত্বেও তাঁর অন্য কোনো নেতিবাচক স্বভাবের কারণে বিয়ে হয়নি।
এ ধরনের কথা বললে তাঁর যে বয়স হয়ে যাচ্ছে কিংবা বিয়ের বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে, এমন ভাবনা চেপে বসতে পারে তাঁর মনে। কাল্পনিক এক ‘সময়সীমা’ পেরিয়ে যাওয়ার দুশ্চিন্তায় আক্রান্ত হতে পারে তাঁর মন।
এমন কথা বলে নিজেকে ‘সর্বজ্ঞ’ প্রমাণ করতে যাবেন না যেন। কার কোন ‘সমস্যা’র কারণে বিয়ে হচ্ছে না, এ নিয়ে মতামত দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ, একজনের একেবারে ব্যক্তিগত এসব বিষয় নিয়ে কথা বলাটাই অভদ্রতা। তা ছাড়া আপনি নিশ্চয়ই একজন ‘জাজমেন্টাল’ মানুষ হতে চাইবেন না! অন্যের জীবনের সবকিছু অতিরিক্ত ‘সরল’ভাবে ব্যাখ্যা করে একটা সমাধান বের করার জন্য অতি উৎসাহ দেখানোও উচিত নয়।
সমসাময়িক প্রায় সবার বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরও যিনি অবিবাহিত, তাঁকে এমন প্রশ্ন করতে যাওয়াই অবান্তর। বিয়ে না করলেই যে কারও জীবন ব্যর্থ বা অপূর্ণ, তা তো নয়। হয়তো তিনি একাই ভালো আছেন। আর তিনি ভালো না থাকলেও আপনার এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে যে ভালো অনুভব করবেন, তা-ও নয়।
ওই ব্যক্তি যদি আপনাকে তাঁর জন্য জীবনসঙ্গী খোঁজার দায়িত্ব না দিয়ে থাকেন, তাহলে অযথা এই ‘দায়িত্বের বোঝা’ নিজের কাঁধে নেবেন না। এতে তিনি বিরক্ত হতে পারেন।
হয়তো বিভিন্ন সময় আপাতদৃষ্টে ‘ভালো’ পাত্র বা পাত্রী ফিরিয়ে দিয়েছেন তিনি। এখন আপনি যদি একে খুঁতখুঁতে স্বভাব হিসেবে চিহ্নিত করেন, তাহলেও কিন্তু আপনি নিজেকে ‘জাজমেন্টাল’ মানুষ হিসেবে উপস্থাপন করলেন।
বিয়ে না করার অপকারিতা বর্ণনা করাটাও অর্থহীন বিষয়। শেষ জীবনে কার কী হবে, তা কিন্তু কোনো মানুষের পক্ষেই জানা সম্ভব নয়। বিবাহিত ব্যক্তিও একা একা একটা অথর্ব জীবনের বোঝা বইতে বইতে মারা যেতে পারে, আবার অবিবাহিত ব্যক্তিও বন্ধু-স্বজনদের মধ্যে জীবন উপভোগ করে এরপর মৃত্যুর অমোঘ সত্যের মুখোমুখি হতে পারে। এসব নিয়ে করা আপনার মন্তব্য কিন্তু আপনার অপরিণত জীবনবোধেরই পরিচয় দেয়।
সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট