মা আমাদের সবচেয়ে আপনজন, অতি আবেগের একটি জায়গা। সুখে-দুঃখে সবার আগে আমরা যে মানুষটির কাছে ছুটে যাই, তিনি আমাদের মা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত, খিদে লাগা থেকে মন খারাপ, মা না হলে আমাদের চলেই না। এই একজন মানুষই যেন পরিবারের প্রাণ হয়ে আমাদের সবাইকে ধরে রাখেন। পরিবারের সবার প্রয়োজন আর সম্পর্কে ভারসাম্য রাখেন। তবে বেশির ভাগ সময়ই আমাদের দিকে নজর দিতে গিয়ে আমাদের কথা শুনতে শুনতে এই মানুষটি নিজের কথা বলার আর সময় পান না। তাই আমাদের সব কথা শোনার জন্য মা থাকলেও মায়ের কথা শোনার জন্য কেউ থাকে না। মাকে হারানোর পর আমরা আবিষ্কার করে বসি, মানুষটি আমাদের খুঁটিনাটি সবকিছু জানলেও আমরা তাঁর সমন্ধে অনেক কিছুই জানি না।
কাজেই বেশি দেরি হয়ে যাওয়ার আগেই আমাদের উচিত আমাদের মায়ের সঙ্গে একটু আড্ডা দেওয়া, তাঁর একান্ত ব্যক্তিগত দুঃখ-সুখ বা আফসোসের জায়গাগুলো জানার চেষ্টা করা। সে ক্ষেত্রে নিচের ছয়টি প্রশ্ন আপনি আজই আপনার মাকে করতে পারেন।
১. তুমি কিসে সবচেয়ে বেশি খুশি হও?
আমাদের খুশি নিয়ে সব সময়ই ব্যস্ত থাকা মানুষটি নিজে কিসে খুশি হন, সেটি কি আমরা জানি? জানি না। কাজেই মায়ের খুশি হওয়ার কারণগুলো খুঁজে বের করে তাঁকে খুশি করার সুযোগটি কেন আপনি নেবেন না?
২. মা হিসেবে তোমার জন্য সবচেয়ে কঠিন মুহূর্ত কী ছিল?
এই প্রশ্নটি একদিকে যেমন আপনার মাকেও অনেক না বলা কথা বলে হালকা হওয়ার সুযোগ করে দেবে, তেমনি আপনার ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য চমৎকার একটি শিক্ষা হিসেবেও কাজ করবে।
৩. মায়ের জীবনের সবচেয়ে বড় আফসোস কী?
কবি ইমতিয়াজ মাহমুদ লিখেছিলেন, ‘সব বেদনার মধ্যেই আমি মা মা গন্ধ পাই।’ আর বেদনা থেকেই জন্ম হয় আফসোসের। না, আপনি হয়তো তাঁর আফসোসের ক্ষতিপূরণ দিতে পারবেন না। তবে এক কাপ চাকে সঙ্গী করে মায়ের জীবনের দুঃখগুলো যদি শুনতে পারেন, এটিও তাঁকে অনেকটা নির্ভার একটি অনুভূতি দিতে পারে।
৪. তাঁর অনুপ্রেরণা কে?
অনুপ্রেরণার প্রশ্ন এলেই আমাদের সামনে সবার আগে ভেসে ওঠে আমাদের মা–বাবার মুখ। কত কঠিন পথও আমরা তাঁদের সাহায্যে হাসিমুখে পার করি। তাহলে আপনার মা কার অনুপ্রেরণায় এতটা পথ অতিক্রম করতে পারলেন? শুনে ফেলুন মায়ের সেই অনুপ্রেরণার গল্পটি।
৫. পূরণ না হওয়া ইচ্ছা
আমাদের যেমন অনেক পূরণ না হওয়া ইচ্ছা আছে, আমাদের মায়েদেরও এমন অনেক ইচ্ছা নিশ্চয়ই ছিল। অনেকেই অনেক কিছু হতে চেয়েও হতে পারেননি, অনেক সময় সেই ত্যাগ করতে হয়েছে সন্তান বা পরিবারের জন্য। তাঁর অপূর্ণ ইচ্ছাগুলোর কথা শুনে যদি একটি বা দুটি পূরণ করে দিতে পারেন, তাহলে এই পৃথিবীতে আপনার চেয়ে সুখী মানুষ আর কেউ কি হবে?
৬. আপনার মায়ের মতে, কোন কোন ক্ষেত্রে আপনার উন্নতি করা উচিত বা শুধরে নেওয়া দরকার?
আত্মোন্নয়নের জন্য আমাদের চেষ্টার কোনো কমতি নেই। মোটিভেশনাল ভিডিও বা বই দেখা থেকে শুরু করে, প্রোফেশনালের কাছে দৌড়ানো—কী না করি আমরা? অথচ সেই ছোটবেলা থেকে আমাদের সবচেয়ে ভালো করে চেনা মানুষটির কাছে কেন আমরা এই ব্যাপারে জানতে চাই না? কোথায় কোথায় আমার কমতি আছে, কাজ করার জায়গা আছে, মায়ের চেয়ে সেটি আর কে ভালো জানবে?
প্রশ্নগুলো আহামরি কোনো প্রশ্ন না; বরং খুবই সাধারণ কিছু প্রশ্ন। আমরা আমাদের সঙ্গী, বন্ধু বা ভাইবোনের বেলায় এই প্রশ্নগুলোর উত্তর সাধারণত জানি। কিন্তু মায়ের ক্ষেত্রে এই সাধারণ কিছু বিষয়ও কেন আমাদের জানা হয়ে ওঠে না কখনো? এই অজানা অধ্যায় শেষ করার সময় এখনো কি আসেনি?
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া