টক্সিক বস সামলাবেন কীভাবে

দীর্ঘ একটা শিক্ষাজীবনের শেষে অনেক স্বপ্ন নিয়ে আমরা কর্মজীবন শুরু করি। দেখি নানা রঙের স্বপ্ন। কিন্তু বেশির ভাগ সময়ই আমাদের স্বপ্নের অফিসের সঙ্গে বাস্তবের অফিসের কোনো মিল থাকে না। অফিসের সবচেয়ে বড় দুঃস্বপ্নের নাম হয়ে ওঠে ‘টক্সিক বস’। বন্ধুত্ব বা ব্যক্তিগত সম্পর্কে মানুষ পছন্দ করার সুযোগ থাকলেও অফিসের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা আমাদের হাতে থাকে না। কাজেই বস টক্সিক হলে আমাদের সামনে দুইটা পথ থাকে। ছেড়ে দেওয়া, না হয় ছাড় দেওয়া। চাকরিটা যখন আপনার খুব বেশি প্রয়োজন, ছাড়তে পারবেনই না, তখন কীভাবে টক্সিক বসের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেবেন, সেই প্রশ্নের উত্তর পাবেন এ লেখায়।

টক্সিক বস অফিসে সব সময়ই একটা ভয়ের পরিবেশ তৈরি করে রাখেন। কারও কোনো কথা শুনতে চান না

কঠোর বস মানে কি টক্সিক বস?


উত্তর হলো, না। কঠোরতা বা কাজের ব্যাপারে আপসহীন বসকে টক্সিক বস বলা হয় না; বরং টক্সিক বস কাজের সঙ্গে সঙ্গে নিজের আচরণের ব্যাপারেও খুবই কঠোর ও নির্দয় হয়ে থাকেন। নিজের ব্যক্তিগত হতাশা তিনি অধস্তন অন্যদের ওপর প্রকাশ করতে ভালোবাসেন। মোটামুটি এই চার ধরনের আচরণের কোনো একটা থাকলে, তাঁকে আমরা টক্সিক বস বলতে পারি।

১. অফিসে সব সময়ই একটা ভয়ের পরিবেশ তৈরি করে রাখেন। কারও কোনো কথা শুনতে চান না। ঠিক-ভুল না, বরং সব কাজ নিজের মনের মতো করে চান এবং ছোট-বড় সব ক্ষেত্রেই তাঁরা কর্মীদের কাছে থেকে প্রশ্নহীন আনুগত্য প্রত্যাশা করেন।


২. কথায় কথায় ধমক দেন, অন্যের সামনে কর্মীদের ছোট করেন। সাধারণত নির্দিষ্ট কিছু মানুষকে টার্গেট করে সব সময়ই তাঁদের চাপের ওপর রাখেন। এমনকি অপমান পর্যন্ত করেন। যাতে এই ‘অত্যাচার’ দেখে অন্য কর্মীরা ভয়ের মধ্যে থাকেন।


৩. কর্মীদের প্রভাবিত করে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেন। প্রতিষ্ঠানের স্বার্থের সঙ্গে সঙ্গে কর্মীদের ব্যক্তিগত স্বার্থেও ব্যবহার করতে ছাড়েন না। কিছু কর্মীকে সুযোগ–সুবিধা দিয়ে অফিসে একটা বিভক্ত পরিবেশ তৈরি করে রাখেন। একে অন্যের পেছনে লাগিয়ে রাখার মাধ্যমে নিজের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখেন।


৪. নার্সিসিস্ট শ্রেণির বসরা সাধারণত চাটুকারিতা পছন্দ করেন। একদল চাটুকার দিয়ে তাঁরা পরিবেষ্টিত থাকতে পছন্দ করেন। নিজেকে সবার চেয়ে সেরা মনে করার পাশাপাশি অন্যদের ছোট করে দেখার প্রবণতাও থাকে।

টক্সিক বস প্রতিষ্ঠানের স্বার্থের সঙ্গে সঙ্গে কর্মীদের ব্যক্তিগত স্বার্থেও ব্যবহার করতে ছাড়েন না

বস টক্সিক হলে সমস্যা কী?


টক্সিক বস হলে সমস্যা শুধু কর্মক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং আপনার একান্ত ব্যক্তিগত ক্ষেত্রও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মানসিক সুস্থতা ঠিক থাকবে না, শরীরে গ্রাস করবে হতাশা আর অবসাদ। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাবে। আবেগের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারানো শুরু করবেন। কমবে কাজ করার ক্ষমতা ও দক্ষতা। কাজেই টক্সিক বসকে খুবই সাবধানতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে।

সমাধান কী?


আপনি জানেন, আপনার বস টক্সিক কি না। টক্সিক হলে আপনার এখন বেশ কিছু ধাপে সামনে এগোতে হবে। যেমন:


১. টক্সিক একজন মানুষের সঙ্গে আচরণ করার সময় সবার আগে সাবধান হতে হবে নিজেকে নিয়ে। যেহেতু সে খোঁচা মেরে, নেতিবাচক কথা বলে আপনার আবেগ নিয়ে খেলার চেষ্টা করবে, সেহেতু নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারা সবচেয়ে বেশি জরুরি। মনে রাখবেন, আবেগের বশবর্তী হয়ে কোনো কাজ করা মানেই আপনার টক্সিক বসের হাতে মোক্ষম অস্ত্রটা তুলে দেওয়া!


২. বসের টক্সিসিটির শিকার কেবল আপনি নন, বরং আপনার অনেক সহকর্মীও এর ভুক্তভোগী। কাজেই তাঁদের সঙ্গে সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তুলুন। একা একা মোকাবিলার চেয়ে সবাই মিলে টক্সিক বসকে মোকাবিলা করা সহজ।

আপনি জানেন, আপনার বস টক্সিক কি না। টক্সিক হলে আপনার এখন বেশ কিছু ধাপে সামনে এগোতে হবে

৩. টক্সিক বস সব সময়ই আপনার দুর্বলতা বা কমতি নিয়েই কথা বলে। এই ফাঁদে পা দেবেন না; বরং নিজের যথাযথ মূল্যায়ন করুন। প্রতিনিয়ত নতুন কিছু শেখার ভেতরে থাকুন। নিজের দক্ষতার যত্ন নিন। ক্যারিয়ার ও দক্ষতা বাড়ানোর কোনো সুযোগ হাতছাড়া করবেন না।


৪. টক্সিক বসের সঙ্গে কাজ করার সবচেয়ে বড় অসুবিধা হলো, নিজের ভেতরে নেতিবাচকতা চলে আসা। ভালো বই, ভালো মুভি বা ভালো কিছু আড্ডার মাধ্যমে নিজের ইতিবাচকতা ধরে রাখুন। নেতিবাচক মানুষে পরিণত হবেন না।


৫. যত যা-ই করেন, বসের ক্ষমতার চেয়ে আপনার ক্ষমতা অনেক কম। কাজেই সব ধরনের সাবধানতা অবলম্বন করার পরও বিপদে পড়ে যেতে পারেন। যদি মানসিক অবস্থা খুব বেশি খারাপ হতে থাকে, অন্যের সাহায্য নিতে দ্বিধা বোধ করবেন না। আর গোপনে গোপনে আরও ভালো সুযোগের সন্ধান জারি রাখুন। সুযোগ পেলে সবকিছু নিশ্চিত করে ‘আস্তে করে’ পদত্যাগপত্র হাতে ধরিয়ে দিয়ে বের হয়ে আসবেন।


সূত্র: ফোর্বস