নাটকের গল্পের মতোই ভক্তের সঙ্গে জোভানের প্রেম, পরিণয়

করোনার মধ্যে শুটিং ছিল না। সারা দিন রুমেই কাটত ফারহান আহমেদ জোভানের সময়। সিনেমা দেখা, বই পড়ার ফাঁকে মাঝেমধ্যে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে ঢুঁ মারা। নতুন ছবি পোস্ট করা। ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে তেমনই একটি ছবি পোস্ট করেছিলেন ছোট পর্দার এই অভিনেতা। সেই ছবিতে একটি মেয়ে ‘ক্রাশ’ মন্তব্য করে। মেয়েটির নাম সাজিন আহমেদ নির্জনা। অভিনয়ে খ্যাতি পাওয়ার পর এমন মন্তব্য অনেকই পেয়েছেন। তবু আউটবক্সের সেই ‘ক্রাশ’ মন্তব্যে আটকে যায় জোভানের চোখ। কারণ, মেয়েটির প্রোফাইল পিকচার। কৌতূহলবশে সেই প্রোফাইল ঢুকে পড়েন জোভান।

বিয়ের ১১তম আনুষ্ঠানিকতায় জোভান ও নির্জনা
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

সেই প্রথম কোনো ভক্তের ‘ক্রাশ’ মন্তব্যের রিপ্লাই দেন জোভান। পরের ছবিগুলোতেও মন্তব্য আসতে থাকে। তখনো কোনো কথা হয়নি। কিন্তু ইনস্টাগ্রামে মন্তব্য আর কত? একদিন নির্জনার কাছে ফোন নম্বর চেয়ে বসেন জোভান। মানুষটি আসল কি না, সেটাও যাচাই হয়ে যাবে। নির্জনাও জোভানের ফোন নম্বর চান। মেয়েটির নম্বর পেলেও নিজের নম্বর সেদিন আর দেননি জোভান। হেসে সেদিনের কথা বললেন জোভান, ‘আমি তাকে নম্বর না দিয়ে বললাম, এখন থেকে তোমার ফোনে যত অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন আসবে, মনে করবে সব কটি আমার নম্বর। সেভাবেই ধরবা। তাহলে তোমার মধ্যে একটা এক্সাইটমেন্ট কাজ করবে।’ এসবই ২০২১ সালের ঘটনা।

মিষ্টি মেয়ে নির্জনা প্রেমে না পড়ে পারেননি জোভান

এভাবেই চলে যায় অনেকটা সময়। করোনার পরে আবার শুটিংয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন জোভান। নির্জনা অপেক্ষায় থাকেন, কবে ফোন আসবে। কিন্তু ফোন আর আসে না। সময়গুলো যেন অনেক লম্বা হতে থাকে। তখনো মেয়েটির সঙ্গে প্রেম বা বিয়ে নিয়ে ভাবছিলেন না জোভান। একদিন এল সেই ফোন। তার পর থেকে শুরু হলো ফোনে কথা বলা।

জোভান ও নির্জনা

একসময় জোভানের মনে হয় নির্জনার সঙ্গে দেখা করা দরকার। প্রথম কথা বলা শুরুর দুই বছর পর, ২০২৩ সালে, একটি রেস্তোরাঁয় দেখা করেন তাঁরা। কেবল বন্ধুত্ব থেকেই দেখা করেন দুজন। তখনো জোভান প্রেম নিয়ে ভাবেননি। কথা হয়, চ্যাটিং হয়—সে জন্যই দেখা করা যায় ভেবে দেখা করা। রেস্তোরাঁয় একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করেন। পরে মেয়েটিকে তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথে নামিয়ে দেন। এরপর পুরান ঢাকায় শুটিংয়ে গেলে দ্বিতীয়বার দেখা। সেদিন তাঁর কাজিনকে নিয়ে এসেছিলেন নির্জনা। তাঁদের বাড়িও পুরান ঢাকা। কিন্তু তখনো কি তাঁদের মধ্যে প্রেম–ভালোবাসা ছিল? ‘টুকটাক কথাবার্তা বলতাম ফোনে, টেক্সটে। কিন্তু এমন কোনো সিচুয়েশন কখনোই তৈরি হয়নি যে আমি ওকে ভালোবাসব বা ওর সঙ্গে প্রেম করব। ভালো একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। এই ভালো লাগাটা হয়তো শুরু থেকেই ছিল। এভাবেই ক্রমেই ভালো লাগাটা বাড়তে থাকে। কথা বলার পরিমাণও বাড়তে থাকে,’ বললেন জোভান।

জোভান ছিলেন নির্জনার ‘ক্রাশ’

এদিকে বিয়ের জন্য পরিবার থেকেও চাপ দিচ্ছিল। জোভান বলেন, ‘পরিবার থেকে যেহেতু বিয়ের কথা বলছিল, সেখান থেকেই আমার কাছে মনে হয়েছে, সরাসরি মেয়েটিকে বিয়ে করে ফেলা যায়। যার সঙ্গে সংসার করা যায়, বাকি জীবন কাটানো যায়। কিন্তু এসব ওকে কিন্তু অনেক দিন পর্যন্ত বলা হয়নি।’  

শুটিংয়ের ফাঁকে কথা হতে থাকে। দিন দিন মেয়েটির প্রতি দুর্বল হতে থাকেন জোভান। একপর্যায়ে পরিবারের সদস্যদের মেয়েটির ছবি দেখান। নির্জনাকে ছবিতে দেখেই তাঁরা পছন্দ করেন। কিন্তু তখনো মেয়েটির সঙ্গে প্রেম বা বিয়ে করার মতো কোনো সম্পর্ক তৈরি হয়নি। কীভাবে মেয়েটিকে সরাসরি বিয়ের কথা বলা যায়—এ নিয়ে ভাবতে থাকেন। এর মধ্যেই একদিন বার্তা পাঠিয়েই মেয়েটিকে বিয়ের প্রস্তাব দেন জোভান। রাজি আছে—এমন কোনো কথা সরাসরি সেদিন বলেননি নির্জনা। তবে রাজি যে নন—এমন কিছুও বলেননি। ফলে নীরবতাকেই সম্মতির লক্ষণ ধরে নেন জোভান। একটু দোটানা যে ছিল না, তা নয়।

নির্জনা পড়ছেন রাজধানীর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে

পরে জোভানের পরিবার থেকে মেয়েটির পরিবারে সদস্যদের সঙ্গে কথা হয়। এরপর শুরু হয় প্রেম। জোভান বলেন, ‘২৯ জুলাই থেকে আমাদের ভালোবাসা শুরুটাই হয়েছিল বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে। ঈদুল আজহার সময়ে। প্রথমে ওকে বন্ধু আর পরে বউ হিসেবে দেখেছি। প্রেমিকা–ট্রেমিকা না।’

তবে তখনই বিয়ে করতে চাননি নির্জনা। তিন বছর সময় চেয়েছিলেন। সেটা পরে দুই থেকে দেড়, দেড় থেকে এক, এভাবে কমাতে কমাতে ছয় মাসে নামিয়ে আনেন জোভান। আসলে নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর আর সময় নিতে চাইছিলেন না এই অভিনেতা। তাঁর তাড়াহুড়োর কারণেই ছয় মাসের মাথায় বিয়ে হয়ে যায়। নভেম্বরের ১০ তারিখে ‘আক্দ’ হয়। ১২ জানুয়ারি জোভান ফেসবুকে প্রথমবার স্ত্রীর সঙ্গে ছবি দিয়ে বিয়ের খবর জানিয়ে দেন।

বিয়ের প্রতিশ্রুতির মধ্য দিয়ে শুরু হয় জোভান নির্জনার প্রেম, ভালোবাসা

জোভান বলেন, ‘আমার একটাই চাওয়া, নির্জনা এখন যেমন আছে, সারা জীবন এমনই থাকুক। ও যেন কখনোই বদলে না যায়। এসব নিয়ে আমাদের মাঝে বোঝাপড়াটাও ভালো। বিয়ের পরেই আমরা প্রেমটা করছি। ওর সঙ্গে এভাবেই বাকি জীবন কাটিয়ে দিতে চাই।’