বিখ্যাত তারকা, শিল্পপতি বা খেলোয়াড়দের ভক্ত–অনুরাগীর অভাব নেই
বিখ্যাত তারকা, শিল্পপতি বা খেলোয়াড়দের ভক্ত–অনুরাগীর অভাব নেই

বিখ্যাত বা ধনকুবেররা প্রেমিক হিসেবে কেমন?

ক্ষমতা বা অর্থবিত্তের সঙ্গে আপনি প্রেমিক হিসেবে কেমন, সেটির কি কোনো সম্পর্ক আছে? ধনকুবের সঙ্গী মানেই কি ভালো প্রেমিক? জেনে রাখুন, সাম্প্রতিক গবেষণা কী বলছে।

 ক্ষমতা ও বিত্তের সঙ্গে প্রতারণার কী সম্পর্ক? 

বিখ্যাত তারকা, শিল্পপতি বা খেলোয়াড়দের ভক্ত–অনুরাগীর অভাব নেই। এ ধরনের চরিত্রের প্রতি স্বাভাবিকভাবেই মানুষের আগ্রহ থাকে। এ ধরনের ব্যক্তির কেউ হয়তো সমাজের ক্ষমতাবান, কারও–বা বিস্তর টাকাপয়সা আছে। কেউ আবার রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী। প্রচলিত ধারণা হলো, সঙ্গী হিসেবে তাঁদের সবাই হয়তো দারুণ; কিন্তু অর্থবিত্ত ও ক্ষমতার অন্ধকার বা ধূসর দিকও আছে। বাস্তবে তাঁরা রোমান্টিক না–ও হতে পারেন। আর এদিকে গবেষণা বলছে, ক্ষমতাবানেরা বেশির ভাগ সময় সঙ্গীর সঙ্গে প্রতারণা করেন!

ব্যস্ততা ক্ষমতাবানদের দেয় না অবসর

সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বেশির ভাগ সময় নিজের প্রতিপত্তি সামলাতেই ব্যস্ত থাকেন। নিজেদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত রাখতেও তাঁদের চিন্তার কমতি থাকে না। ফলে সঙ্গীকে নিয়ে তাঁরা খুব বেশি ভাবেন না, নিজেদের আখের গোছাতেই মনোযোগ থাকে। যুক্তরাষ্ট্রে রচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসরায়েলের রাইকম্যান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক যৌথ গবেষণায় এসব তথ্য জানা গেছে। গবেষকেরা ক্ষমতা কীভাবে সম্পর্কের বিশ্বস্ততা বদলে দেয়, সেটাই খোঁজার চেষ্টা করেছেন।

সুপিরিওরিটি কমপ্লেক্স

ক্ষমতা মানুষের মধ্যে একধরনের আত্মবিশ্বাস তৈরি করে এটা যেমন সত্য, তেমনি ব্যক্তিকে আরও জটিল করে তোলে এটাও সত্য। গবেষণায় দেখা গেছে, ক্ষমতাবানেরা বেশির ভাগ সময় সুপিরিওরিটি কমপ্লেক্সে ভোগেন। সঙ্গীর চেয়ে নিজেদের শ্রেয়তর মনে করেন। প্রেমিক বা প্রেমিকার কেউ একজন যদি তাঁর সঙ্গীর চেয়ে নিজেদের ভালো মনে করেন, কার্যত সে সম্পর্কের সেখানেই ইতি ঘটে।

নার্সিসিস্ট

বিত্তশালী ও ক্ষমতাবানেরা সঙ্গীর চেয়ে নিজেদের বেশি গুরুত্ব দেন। প্রেমিক বা প্রেমিকা হয়তো চাইছে বিকেলটা নিজেদের মতো করে উপভোগ করবেন, অথবা কোনো কফিশপে গিয়ে গল্প করবেন, ক্ষমতাবান সঙ্গীর হয়তো সে সময় কোনো পূর্বনির্ধারিত মিটিং আছে। গবেষণা বলছে, এসব ক্ষেত্রে সঙ্গীর চেয়ে বরং নিজের কাজকেই বেশি প্রাধান্য দেন বিখ্যাত মানুষেরা। যে কাজ তিনি চাইলে পরেও করতে পারেন, সেসব ক্ষেত্রেও তাঁরা তা করেন না। এভাবে সঙ্গীকে বঞ্চিত করেন। অথচ একটু বুদ্ধি খাটালেই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা যায়।

সুর কেটে যায়

এই গবেষণার প্রধান লেখক মনোবিদ গারিট বিরনবাম মনে করেন, রোমান্টিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ক্ষমতার এই প্রভাব সম্পর্কের মূল সুরটাই নষ্ট করে দেয়। আর এভাবে একটি সম্পর্ক মাঝপথে খেই হারিয়ে ফেলে। প্রভাবশালীরা সম্পর্ক দিয়ে নয়; বরং সবকিছুকেই নিজের পেশাগত দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচার করেন।

ক্ষমতার অন্ধকার দিক

গবেষকেরা বেশ কয়েকটি পরীক্ষা চালিয়ে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ক্ষমতার প্রভাব বোঝার চেষ্টা করেছেন। এসব পরীক্ষার মধ্যে আছে সঙ্গীর প্রতি চাহিদা, যৌন আকাঙ্ক্ষার মতো বিষয়। গবেষণাপত্রের সহলেখক হ্যারি রেইস মনে করেন, সম্পর্কের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকা। কিন্তু বিখ্যাত ব্যক্তিরা কেবল নিজের অবস্থান ধরে রাখার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, অন্য কিছু নিয়ে নন। গবেষণায় সবচেয়ে ভয়ংকর যে বিষয়টি উঠে এসেছে, তা হলো প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সঙ্গীর চেয়ে নিজেদের বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন। ফলে সম্পর্কে থাকার জন্য প্রভাবশালীদের খুব বেশি তাগিদ থাকে না।

 তবে গবেষকেরা সতর্ক করে বলেছেন, এই গবেষণার ফল সবার ক্ষেত্রে সত্যি না–ও হতে পারে। তাই এখনই এমন উপসংহার টানবেন না যে বিখ্যাত মানুষেরা সঙ্গী হিসেবে ভালো নন। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই যে ভালো নন, এর প্রমাণও মিলেছে।

সূত্র: সিবিএস