বিশ্বব্যাপী দম্পতিদের ভেতর পুরুষেরা গড়ে তাঁর নারী সঙ্গীর তুলনায় ৪ দশমিক ২ বছরের বড়। আফ্রিকা মহাদেশে এই পার্থক্য সর্বোচ্চ—৮ দশমিক ৬, আর উত্তর আমেরিকায় সর্বনিম্ন, ২ দশমিক ২।
বয়সের এই পার্থক্য একেক সমাজের রীতিনীতি, ধর্ম, সংস্কৃতি, প্রথা—এরকম নানাকিছুর ওপর নির্ভর করে।
সম্পর্কে আদর্শ বয়সের পার্থক্য বলে আদৌ কি কিছু আছে? প্রশ্নটি এখনো প্রাসঙ্গিক। একজন ব্যক্তি সঙ্গীর কাছ থেকে কী চান, সম্পর্ক থেকে তাঁর কী প্রত্যাশা—এই প্রশ্নের উত্তরের ভেতর লুকিয়ে রয়েছে ওপরের প্রশ্নের উত্তর।
তবে সময়ের সঙ্গে সম্পর্কে বয়সের পার্থক্য ধারণাটি একটু একটু করে ক্লিশে হয়ে পড়ছে।
আদর্শ বয়সের পার্থক্য কি মিথ? এই প্রশ্নের উত্তরে চলে আসে আরেকটা প্রশ্ন, সম্পর্কে থাকা দুজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ কি সুখী? যদি তাঁরা সুখী হন, তাহলে তাঁদের বয়সের পার্থক্য কেবলই একটা সংখ্যা!
যদি আপনি একজন বয়স্ক পুরুষ হন আর আপনি যদি সঙ্গীর কাছে সন্তান প্রত্যাশা করেন, সে ক্ষেত্রে আপনি আপনার চেয়ে বয়সে ছোট, সন্তান জন্মদানের জন্য ফিট একজন সঙ্গী খুঁজবেন। মিডিয়ামে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, একজন পুরুষের জন্য সন্তান জন্মদানের সেরা সময় ২১ থেকে ৩৫ বছর। ৩৫ বছরের পর থেকে সাধারণত শুক্রাণুর (স্পার্ম) মান কমতে থাকে। ৪০–এর পর শুক্রাণু কমতে কমতে অর্ধেকে নেমে আসে। ৫০–এর পর অনেক পুরুষই শারীরিকভাবে সন্তানের বাবা হওয়ার মতো ‘ফিট’ থাকেন না।
নারীদের ক্ষেত্রে ‘আর্লি টুয়েন্টিজ’ মা হওয়ার সেরা সময়। ২৫ থেকে ২৯ বছরের ভেতর মা হওয়াও নিরাপদ। ৩০ বছর বয়সের আগে যদি আপনি প্রথমবার মা না হন, তবে এর পর থেকে ঝুঁকি বাড়তে থাকে। ৩০ পেরিয়ে গেলে প্রজননক্ষমতা ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। নারীদের ক্ষেত্রে ৪০–এর পর মা হওয়া মা ও শিশু উভয়ের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।
তাই আপনি যদি বাবা হতে চান, তাহলে আপনার বয়স হতে হবে ৫০–এর কম। আর আপনার সঙ্গীর বয়স হতে হবে ৪০–এর কম। তবু উভয়ের ক্ষেত্রে ঝুঁকি থেকে যায়।
সন্তান জন্মদান, কিছু হরমোনের ভারসাম্য ও যৌন–আকাঙ্ক্ষার বিষয়টি ছাড়া দুজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের মধ্যে বয়সের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ নয়।
নারীরা পুরুষের তুলনায় শারীরিক ও মানসিকভাবে দ্রুত পরিণত হয়। তাই কমবয়সী নারীকে জীবনসঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করাটা অনেক সংস্কৃতিতে প্রথার মতো চর্চা হয়ে আসছে।
সাইকিসেন্ট্রালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ২০১৭ সালের একটি অস্ট্রেলিয়ান স্ট্যাডি অনুসারে, সুখী, সফল দম্পতিদের বয়সের পার্থক্য ১ থেকে ৩ বছর, যেখানে পুরুষ তাঁর নারী সঙ্গীর চেয়ে বয়সে বড়।
বিয়ের ৬ থেকে ১০ বছরের ভেতর যে দম্পতিদের বিচ্ছেদ হয়েছে, তাঁদের একটা বড় অংশের বয়সের পার্থক্য ৭ বা তার বেশি। অনেক ক্ষেত্রে সম্পর্কে বয়সের পার্থক্য বেশি হলে জটিলতা বেশি হয়। তবে ঢালাওভাবে এমন মন্তব্য করা যাবে না। বয়সের পার্থক্য সাত বা তার বেশি আবার বহু বছর ধরে সুখী দাম্পত্য সম্পর্কে রয়েছে, এমন দম্পতির সংখ্যাও কম না। যখন দুজন মানুষের সম্পর্ক থেকে চাওয়া মিলে যায়, তখন বয়স মুখ্য নয়। এমন অনেক সুখী, সফল দাম্পত্য সম্পর্ক আছে, যেখানে নারী বয়সে পুরুষের চেয়ে বড়।
দক্ষিণ ভারতীয় তরুণী, পেশায় মডেল ইলিলি ভোগ ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, তাঁর বাবা ভেঙ্কাট রমনের বয়স ৫৩ বছর। মা পূর্ণিমার বয়স ৪৩ বছর। তাঁরা ২১ বছর ধরে বিবাহিত সম্পর্কে আছেন। আর সুখে আছেন। ইলিলি বলেন, ‘আমার বাবার কেবল একটাই চিন্তা, তিনি যদি আগে মারা যান, তাহলে মা একা হয়ে যাবেন আর মা তখন কীভাবে থাকবেন?’
বয়সের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো সম্পর্কে একজন আরেকজনকে সম্মান করছে কি না, ভালোবাসা আছে কি না, সম্পর্কের প্রতি দুজনেই আন্তরিক বা যত্নবান কি না। যদি দুজনের মানসিকতা আর চাওয়া একই হয়, তাহলে বয়স কেবলই একটা সংখ্যা।
সূত্র: মিডিয়াম, সাইকিসেন্ট্রাল ও ভোগ