সুখ সব কালে, সব যুগের মানুষের কাছেই আরাধ্য একটি জিনিস। একদিকে কবি লিখেছেন, ‘করো না সুখের আশ, পরো না দুঃখের ফাঁস....’ আরেক দিকে দার্শনিক ও বিজ্ঞানীরা তখন হন্যে হয়ে খুঁজে ফিরছেন সেই প্রশ্নের উত্তর, সুখ বলে কি আসলেই কিছু আছে? কিসে মানুষের প্রকৃত সুখ?
সম্প্রতি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা গবেষণা রীতিমতো আলোচনার সৃষ্টি করেছে বিশ্বব্যাপী। সেখানে দাবি করা হয়েছে, চাইলে সুখ খুঁজে পাওয়া সম্ভব। আর এই সুখ আপনি ক্যারিয়ার, সফলতা বা অর্থসম্পদের মধ্যে খুঁজে পাবেন না। ব্যায়াম করে আমরা আমাদের শারীরিক সুস্থতা বাড়াতে পারি, কিন্তু সুখে থাকার জন্য এটুকুই যথেষ্ট নয়। বরং সুখে থাকার জন্য আমাদের দরকার মানুষ। আমাদের দরকার পরিবার আর বন্ধু মিলিয়ে চারপাশে সুন্দর একটা ‘সামাজিক সুস্থতা’ তৈরি করা।
১৯৩৮ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা এই সুখের অন্বেষণ শুরু করেন। তাঁরা ৭২৪ জন মানুষের তথ্য সংগ্রহ করে দুই বছর অন্তর তাঁদের কাছ থেকে সুখবিষয়ক প্রশ্নের উত্তর নিতে শুরু করেন। পৃথিবীব্যাপী চলা ৮৫ বছরের এই গবেষণার ফলাফল হলো, মূলত পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে ভালো একটা সম্পর্কই পারে আপনাকে সুখী করে তুলতে। এমনকি খাদ্যাভ্যাস বা ব্যায়ামের চেয়ে পরিবার আর বন্ধু আমাদের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
সামাজিক সুস্থতা কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
শারীরিক সুস্থতা নিয়ে আজকাল আমরা কমবেশি সবাই সচেতন। সকালে দৌড়ানো, ভালো ঘুম বা স্বাস্থ্যকর খাবার—মোটামুটি এসব নিয়ে আমরা সবাই এখন বেশ সচেতন। কিন্তু এসবের পাশাপাশি আমাদের ব্যক্তিগত সম্পর্কগুলোও যে আমাদের শরীরের ওপর প্রভাব ফেলে, সেটা আমরা কয়জন খেয়াল করি?
কারও সঙ্গে সুন্দর একটা আড্ডা দেওয়ার সময় আপনার শরীরে যে একটা শান্তির পরশ ছড়িয়ে পড়ে, আরাম আরাম লাগে, এটা কখনো খেয়াল করেছেন? প্রেমিকার সঙ্গে ঠুনকো ঝগড়া হলেও যখন আপনি রাতে ঘুমাতে পারেন না, তখন বুঝতে হবে, সমস্যাটা আপনার ঘুমে নয়। সমস্যাটা আপনার সম্পর্কে।
সামাজিক সুস্থতা কীভাবে অর্জন করবেন?
আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, আমরা সব সময়ই শরীর বা মনের যত্ন নিলেও, টাকা পয়সার বিষয়ে সচেতন হলেও আমাদের সম্পর্কগুলোর যত্ন নেওয়ার কথা আমরা বেমালুম ভুলে যাই। আমরা মনে করি, একবার সম্পর্ক হয়ে গেলেই তো শেষ, সেই সম্পর্ক এমনি এমনিই সামনে এগোতে থাকবে। আলাদা কোনো মনোযোগ না দিলেও চলবে, যাকে বলে ‘টেকেন ফর গ্রান্টেড’।
অথচ মানবীয় সব সম্পর্ককেও একটা শিশুর মতোই যত্নে লালন–পালন করতে হয়। ছোট্ট একটা চারা গাছের মতোই—পানি দেবেন, যত্ন নেবেন, রোদে রাখবেন, বেড়া দেবেন। তবেই না এই চারা গাছ একদিন মহিরুহ হয়ে আপনাকে ছায়া দিতে পারবে। কাজেই যে বন্ধুর সঙ্গে বহুদিন কোনো যোগাযোগ হয় না, তাকে ফোনটা করেই ফেলুন। ইগো ধরে রেখে প্রিয়জনকে সরিটা বললেন না। একবার নিজের ভুল স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করেই দেখুন না! ওতে আপনি হারবেন নাকি জিতবেন, সে আলাপ তোলা থাক সময়ের হাতে। সবচেয়ে বড় কথা, এই ‘সামাজিক সুস্থতা’ আপনাকে দিন শেষে শারীরিক আর মানসিকভাবে সুখী করবে, জীবনে আনবে ভারসাম্য। ভুল ও টক্সিক মানুষকে দূর করে সঠিক মানুষদের নিজের আশপাশে রাখা এবং সম্পর্ক মজবুত রাখা সামাজিক সুস্থতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
তথ্যসূত্র: সিএনবিসি