সম্পর্কে মানসিক দূরত্ব কমাবেন কীভাবে

প্রতিটি সম্পর্কের ভিত্তিই হলো ভালো বোঝাপড়া, দুজনের মনের মিল। মনের মিল ও ভালো বোঝাপড়া থাকলে সম্পর্কে বাহ্যিক যেকোনো বাধাবিপত্তি সহজেই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। তবে প্রতিটি সম্পর্কে মনোমালিন্যসহ ছোটখাটো সমস্যা হয়। এটি স্বাভাবিক। তবে এ সমস্যা কাটিয়ে উঠতে না পারলে মানসিক দূরত্ব সৃষ্টি হয়। এই দূরত্ব কাটিয়ে উঠতে না পারলে সেই ছোট্ট ফাঁক হামাগুড়ি দিয়ে বাড়তে বাড়তে একসময় তা থেকে বিচ্ছেদ পর্যন্ত ঘটতে পারে। দূরত্ব কাটাতে দুই পক্ষেরই ইচ্ছাশক্তি, প্রচেষ্টা ও বোঝাপড়া জরুরি। তাই মানসিক দূরত্ব সৃষ্টি হলে কীভাবে তা কাটিয়ে উঠবেন, চলুন জেনে নেওয়া যাক।

সম্পর্কে মানসিক দূরত্ব কাটিয়ে ওঠা একটি সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় সবার আগে প্রয়োজন দুই পক্ষের আন্তরিকতা
ছবি: প্রথম আলো

সম্পর্কে মানসিক দূরত্ব কাটিয়ে ওঠা একটি সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় সবার আগে প্রয়োজন দুই পক্ষের আন্তরিকতা। সেই সঙ্গে ধৈর্য, চেষ্টা এবং পারস্পরিক বোঝাপড়া থাকতে হবে দুজনের মধ্যে। খোলামেলা আলোচনাকে অগ্রাধিকার দিয়ে একসঙ্গে মানসম্মত সময় কাটানো জরুরি। ভুল-বোঝাবুঝির সমাধান করা, দুঃসময়ে পাশে থাকা, সমানুভূতিশীল হওয়া, সঙ্গীর প্রতি বিশ্বাস গড়ে তোলা এবং প্রয়োজনে পরামর্শকের শরণাপন্ন হওয়ার মাধ্যমে দুটি মানুষ মানসিকভাবে আরও কাছাকাছি পৌঁছে।

দূরত্বের মাত্রা বুঝুন

মানসিক দূরত্ব এক দিনে তৈরি হয় না। এটা আস্তে আস্তে বাড়ে। যোগাযোগের ঘাটতি, আগের অমীমাংসিত কোনো ঝামেলা, জীবনের ব্যস্ততা অথবা যেকোনো একজনের জীবনযুদ্ধে ব্যস্ত হয়ে যাওয়া—এসব কারণে আস্তে আস্তে দূরত্ব বাড়তে পারে আপনার প্রিয়জনের সঙ্গে। তাই যখনই বুঝতে পারবেন দূরত্ব সৃষ্টি হয়ে গেছে, তখনই ফিরে আসুন।

খোলামেলা আলোচনা করুন

দূরত্ব কমানোর মূল চাবিকাঠি হলো খোলামেলা ও সৎ যোগাযোগ। দুজনকেই সঙ্গীর সঙ্গে সমস্যা সম্পর্কে মন খুলে আলোচনা করার মানসিকতা থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে সঙ্গীর কথা ও মানসিক অবস্থা মনোযোগসহকারে শোনা, বোঝা এবং প্রাধান্য দেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে।

প্রিয়জনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ান। একসঙ্গে ভালো সময় কাটান

ঘনিষ্ঠতা বাড়ান, ভালো সময় কাটান

মানসিক দূরত্ব কাটিয়ে ওঠার জন্য শারীরিক ঘনিষ্টতার বিকল্প নেই। মনোবিদেরা বলেছেন, ‘শারীরিক ঘনিষ্ঠতা’র তাৎক্ষণিক পরের সময়টা যেকোনো বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলাপের সেরা সময়। কেননা সে সময় দুজন মানসিকভাবে সবচেয়ে কাছাকাছি থাকেন।

প্রিয়জনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ান। একসঙ্গে ভালো সময় কাটান। দুজনের অংশীদারত্ব আছে এমন কাজ করুন। অর্থপূর্ণ কথোপকথন এমনকি ছোট ছোট যত্নশীল অঙ্গভঙ্গিও সম্পর্কের দূরত্ব কমাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

দুজনে মিলে ঘুরতে বের হন

পুরোনো ভুল-বোঝাবুঝি সমাধান করুন, ক্ষমা করুন

অমীমাংসিত ভুল-বোঝাবুঝি যেকোনো সম্পর্কে দূরত্ব সৃষ্টির মূল কারণের মধ্যে একটি। বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে ভুল-বোঝাবুঝির অবসান করুন। যে মুহূর্তে নিজের ভুল বুঝতে পারছেন, সঙ্গীর কাছে ভুল স্বীকার করুন। ইগো এক পাশে রেখে ক্ষমা চান। নিজেও সব সময় ক্ষমা করার মানসিকতা পোষণ করুন। তবে দূরত্ব ঘুচিয়ে এক হওয়ার মানসিকতা থাকা সবচেয়ে জরুরি।

বোঝার চেষ্টা করুন, সমানুভূতিশীল হোন

মানসিক দূরত্ব কাটিয়ে উঠতে সঙ্গীর মানসিক অবস্থা তাঁর মতো করে বুঝতে চেষ্টা করুন। তাঁর পরিস্থিতিতে নিজেকে বসান। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি বা মানসিক অবস্থার প্রতি সমানুভূতিশীল হোন। ভাবুন, আপনি তাঁর অবস্থানে থাকলে কী করতেন। সেই অবস্থানে আপনি সঙ্গীর কাছে কী রকম আচরণ প্রত্যাশা করেন। আপনিও তেমন আচরণ করুন। এই পদ্ধতি সম্পর্কের ভিত্তি মজবুত করে।

‘শারীরিক ঘনিষ্ঠতা’র তাৎক্ষণিক পরের সময়টা যেকোনো বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলাপের সেরা সময়। কেননা সে সময় দুজন মানসিকভাবে সবচেয়ে কাছাকাছি থাকেন

মাঝে মাঝে চোখ বন্ধ করেই সঙ্গীকে বিশ্বাস করুন

বিশ্বাস মানসিক ঘনিষ্ঠতার ভিত্তি তৈরি করে। এটি স্বচ্ছতা, নির্ভরযোগ্যতা এবং সঙ্গীকে ধারাবাহিক সমর্থনের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়। নিজেদের দুর্বলতা, ভয় ভাগাভাগি করে নেওয়ার মাধ্যমে মানসিক বন্ধন শক্তিশালী হয়। তাই মাঝে মাঝে চোখ বন্ধ করেই সঙ্গীকে অকপটে বিশ্বাস করুন। সঙ্গীকেও সেই আস্থা অর্জনের ভিত্তি করে দিন।

ঘুরতে বের হন

সকালে, বিকেলে বা সন্ধ্যায় হাঁটতেও বের হতে পারেন দুজনে। আবার সবকিছু থেকে ছুটি নিয়ে চলে যেতে পারেন দূরে কোথাও ।

দাম্পত্য সম্পর্কে অটুট রাখুন বন্ধুত্ব

প্রয়োজনে কাউন্সিলিং করান

কখনো কখনো দূরত্ব ঘোচাতে বাহ্যিক সাহায্যের দরকার হয়। প্রয়োজনে দুজনই কাছের কোন নর্ভরশীল মানুষ, পেশাদার কাউন্সিলর বা বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন।


সূত্র: ম্যারিজ ডটকম