যাঁর সঙ্গে আত্মার সম্পর্ক, তিনিই তো আত্মীয়। কিন্তু পৃথিবীর নিয়মটাই এমন যে একই সঙ্গে মায়ের গর্ভে বেড়ে ওঠা দুটি শিশুর ব্যক্তিত্বও হয় ভিন্ন। স্বাভাবিকভাবেই আত্মীয়দের মধ্যেও ব্যক্তিত্বের ফারাক, ভাবনার অমিল আর মতের অনৈক্য থাকে। এত সব পার্থক্য সত্ত্বেও আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার প্রচেষ্টাই প্রমাণ করে আত্মীয় হিসেবে আপনি কেমন। কারও বাসায়, অনুষ্ঠানে, হাসপাতালে কিংবা হঠাৎ পথঘাটে আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা হলে আপনি কেমন আচরণ করেন, মুঠোফোনে যোগাযোগের ক্ষেত্রেই–বা কীভাবে কথা বলেন, এসবই প্রমাণ করে আপনি তাঁদের প্রতি কতটা সহানুভূতিশীল কিংবা তাঁদের আত্মার কতটা কাছাকাছি পৌঁছাতে পেরেছেন। চলুন, আজ ১০ প্রশ্নের সাহায্যে জেনে নেওয়া যাক আত্মীয় হিসেবে আপনি কেমন।
প্রতিটি প্রশ্নের সঙ্গে চারটি উত্তর রয়েছে। ‘ক’ উত্তরের জন্য আপনি পাবেন ৫ নম্বর, ‘খ’ উত্তরের জন্য ৪, ‘গ’ উত্তরের জন্য ৩ আর ‘ঘ’ উত্তরের জন্য ২। ১০টি প্রশ্নে আপনার প্রাপ্ত নম্বরের যোগফল মিলিয়ে নিন শেষের ফলাফলের সঙ্গে।
ক. সব আত্মীয়ই আপনাকে দেখলে খুশি হন, নিজেরাই এগিয়ে এসে আন্তরিকভাবে আলাপ করেন।
খ. সব আত্মীয়স্বজনই মুখে হাসি নিয়ে কথা বলতে এগিয়ে এলেও কিছুক্ষণ আলাপের পরই আপনি অনুভব করেন, কারও কারও মধ্যে আন্তরিকতার ঘাটতি আছে।
গ. অনেক আত্মীয়ই আপনাকে দেখলে খুশি হন, কিন্তু কেউ কেউ, যেমন অন্য আত্মীয়দের তুলনায় যাঁদের অর্থবিত্ত বা সামাজিক মর্যাদা খানিকটা কম, তাঁরা আপনাকে দেখলে খুব একটা খুশি হন না।
ঘ. কেউই তেমন খুশি হন না; নিতান্ত ভদ্রতাসূচক কিছু কথা বলেন, অনেকেই আপনাকে এড়িয়ে চলেন।
ক. আন্তরিকভাবে তাঁর ও তাঁর পরিবারের অন্যদের কথা জানতে চান, তাঁকে বাসায় অনুরোধ জানান; ইতিবাচকভাবেই পুরো আলাপটা চালিয়ে যান।
খ. কুশল বিনিময় করে কাজের কথা শুরু করে দেন।
গ. কেন তিনি আপনার খোঁজখবর রাখেন না, কেন সহজে ফোন করেন না—এসব নিয়ে অভিযোগ করেন।
ঘ. তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের নানা বিষয় নিয়ে অত্যধিক প্রশ্ন করতে থাকেন বা বিভিন্ন নেতিবাচক কথা বলতে থাকেন।
ক. মুঠোফোনে তাঁকে শুভেচ্ছা জানান, সম্ভব হলে তাঁর কাছে গিয়ে আনন্দের ভাগীদার হন।
খ. ‘এই বংশের ছেলে বা মেয়ে তো এমনটা হবেই, এ আর বিচিত্র কী?’ এ–জাতীয় কথা বলেন।
গ. তাঁর এই সাফল্যের পেছনে আপনার কিংবা অন্য কারও অবদান থাকলে সেটিকে বড় করে উপস্থাপন করেন।
ঘ. সাফল্যের মধ্যেও কোনো না কোনো নেতিবাচক প্রসঙ্গের অবতারণা করেন।
ক. সাহায্য করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন।
খ. সাহায্য করেন, তবে সীমিত পরিসরে।
গ. সেই মুহূর্তে আপনি ওই ব্যক্তির আশপাশে থাকেন না।
ঘ. কী করলে বিপদ এড়ানো যেত কিংবা তিনি যেভাবে বিপদ সামলাচ্ছেন, তা না করে অন্য কোনোভাবে সামলানো যেত, সেসব বিষয়ে উপদেশ দেন।
ক. তাঁর বিয়ে প্রসঙ্গে কোনো কথা বলেন না। স্বাভাবিকভাবে অন্য বিষয়ে কথা বলেন।
খ. আলাপের মধ্যে বিয়ের প্রসঙ্গ উঠলে বলেন, ‘সবাইকেই বিয়ে করতে হবে এমন কোনো কথা নেই।’
গ. ‘বিয়ে কবে করবা’, ‘কেন বিয়ে করছ না’–জাতীয় প্রশ্ন করতে থাকেন।
ঘ. তাঁর বয়সে বা তাঁর চেয়ে কম বয়সে অন্যরা বিয়ে করে কত সুখে আছে কিংবা এখনই বিয়ে না করলে ভবিষ্যতে তাঁকে কতটা পস্তাতে হবে, সেই ফিরিস্তি শোনান।
ক. দম্পতির সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন, স্বাভাবিক আলাপচারিতা চালিয়ে যান।
খ. কুশল বিনিময়ের পর কথা খুব একটা এগিয়ে নেন না।
গ. আলাদাভাবে আপনার আত্মীয়কে বলেন, তিনি জীবনসঙ্গী হিসেবে আরও ‘ভালো’ কাউকে বেছে নিতে পারতেন।
ঘ. অপছন্দের কথা সরাসরি প্রকাশ না করলেও তাঁর নানা খুঁত ধরতে থাকেন।
ক. সন্তান প্রসঙ্গের অবতারণা না করেই আলাপচারিতা চালিয়ে যান।
খ. আলাপের মধ্যে বলেন, ‘তোমাদের সুসংবাদ কবে পাচ্ছি?’ কিংবা ‘তোমাদের বাচ্চার মুখ কবে দেখব?’
গ. বয়স চলে যাচ্ছে, তা মনে করিয়ে দেন, ‘এখনো বাচ্চা না নিলে আর বাচ্চা মানুষ করবা কবে?’
ঘ. প্রশ্ন করেন, সঙ্গে উপদেশও দেন—‘বাচ্চা নিচ্ছ না কেন? তোমাদের কি কোনো সমস্যা আছে? ডাক্তার দেখাও।’
ক. তাঁকে অভিনন্দন জানান, তাঁর সাহসিকতা বা ভিন্নধারার ভাবনার জন্য প্রশংসা করেন।
খ. অভিনন্দন জানালেও ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে দ্বিধা প্রকাশ করেন।
গ. কথার ফাঁকে বলে দেন, ‘এত পড়ালেখা করে তাহলে কী লাভ হলো?’
ঘ. তাঁকে সরাসরি বলেন, ‘এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত হয়নি।’
ক. উপহারের দাম প্রসঙ্গে কোনো কথা বলেন না।
খ. উপহারটা একটু বাড়তি যত্নে রাখতে বলে দেন তাঁকে।
গ. তাঁর কাছ থেকেও দামি উপহার প্রত্যাশা করেন।
ঘ. নানা কথার ফাঁকে উপহারের দামটা শুনিয়ে দেন।
ক. তাঁর কাছের মানুষদের সান্ত্বনা দেন, তাঁদের পাশে থাকেন।
খ. সান্ত্বনা দিলেও তাঁর কাছের মানুষদের প্রয়োজনগুলো মেটাতে আপনি খুব একটা সক্রিয় ভূমিকা রাখেন না।
গ. কারও গাফিলতি বা ভুল সিদ্ধান্তের কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে কি না, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তা বের করার চেষ্টা করেন।
ঘ. তাঁর সম্পত্তির ভাগ-বাঁটোয়ারা প্রসঙ্গে কথা তোলেন।
আপনার প্রাপ্ত নম্বর যদি ৪৬ থেকে ৫০ এর মধ্যে হয়, তাহলে আত্মীয় হিসেবে আপনি ভালো।
প্রাপ্ত নম্বর ৩৭ থেকে ৪৫ হলেও আপনি আত্মীয় হিসেবে মন্দ নন। তবে আরেকটু সহমর্মী আচরণ করলে অন্যরা আপনাকে আরেকটু বেশি ভালোবাসবে।
আপনি যদি ২৬ থেকে ৩৬ পেয়ে থাকেন, তাহলে আত্মীয় হিসেবে আপনি সব সময় ভালো আচরণ করেন, এমনটা বলা যাবে না। আত্মোন্নয়নের দিকে আপনার আরেকটু খেয়াল করা দরকার। মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা দরকার।
যদি ২৫-এর কম পেয়ে থাকেন, তাহলে আপনি আত্মীয় হিসেবে একেবারেই ভালো নন! অন্যের জীবন সম্পর্কে নিজের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বদলে ফেলুন আজই।