ক্লাসনোট হোক কিংবা কোনো জটিল বিষয়ে পরামর্শ, ছোট-বড় যেকোনো প্রয়োজনে আমরা সবার আগে ছুটে যাই বন্ধুর কাছে। শৈশব থেকে বার্ধক্য—এই দীর্ঘ যাত্রায় আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ বন্ধু। জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে নতুন বন্ধু হয়, আবার কখনো যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায় পুরোনো বন্ধুর সঙ্গে। বন্ধুত্ব ছাড়া বাঁচা কঠিন, তা তো সবাই বুঝি। তবে শুধু তা-ই নয়, গবেষণা বলছে, বন্ধুত্বই হতে পারে দীর্ঘায়ুর অন্যতম উপাদান।
সুস্থ থাকতে আমরা অনেকেই নিয়মিত ব্যায়াম করি। শরীর সুস্থ রাখতে ব্যায়াম করা যেমন প্রয়োজন, তেমন প্রয়োজন বন্ধুত্বের। সম্পর্কের এই সমীকরণ নতুন বইয়ে প্রমাণ করেছেন বিজ্ঞানবিষয়ক লেখক ডেভিড রবসন।
এক রহস্যময় প্রক্রিয়া সম্পর্কের শক্তির সঙ্গে আমাদের সুস্থতাকে একই সুতায় বেঁধে রাখে। এটি বোঝার জন্য ‘বায়োসাইকোসোশ্যাল’ মডেল সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রয়োজন। এই মডেল ব্যাখ্যা করে কীভাবে জৈবিক, মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক কারণ স্বাস্থ্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
একসময় বিজ্ঞানীরা শরীরকে একধরনের যন্ত্র হিসেবে দেখতেন। সে সময় তাঁরা সুস্বাস্থ্য ও মানসিক অবস্থাকে বিচ্ছিন্ন বিষয় হিসেবে বিবেচনা করতেন। কিন্তু বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যেতে থাকে একাকিত্বের মতো মানসিক কারণে শরীরে বিভিন্ন রোগ বাসা বাঁধে।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ডিপার্টমেন্ট অব পাবলিক হেলথের কয়েকজন গবেষক দীর্ঘায়ুর কারণগুলোকে চিহ্নিত করার জন্য ১৯৬০ সালে প্রায় সাত হাজার মানুষের ওপর একটি দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা শুরু করেন। গবেষণায় ধূমপান না করা, পরিমাণ মতো পানি পান করা, ওজন নিয়ন্ত্রণ করার মতো অভ্যাসগুলো উঠে আসে। কিন্তু গবেষণার যে ফলাফল গবেষকদেরও অবাক করেছিল তা হলো, দীর্ঘায়ুর সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক। গবেষণায় দেখা যায়, যাঁদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক মজবুত এবং সামাজিক যোগাযোগ দৃঢ় ছিল, অন্যদের তুলনায় তাঁদের মৃত্যুর আশঙ্কা অর্ধেক। গবেষণায় স্বেচ্ছাসেবকদের আর্থসামাজিক অবস্থা, স্বাস্থ্য, ধূমপান, ব্যায়াম এবং খাদ্যের মতো বিষয়গুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার পরও ফলাফল একই ছিল।
সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ুর সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্কের এই সংযোগকে স্বীকৃতি দিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘আ গ্লোবাল হেলথ প্রায়োরিটি’ নামে নতুন একটি কমিশন গঠন করেছে।
আপনি যদি শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থেকে দীর্ঘ জীবন যাপন করতে চান, তাহলে এখন থেকেই আপনার বন্ধুত্বের পরিচর্যা করুন।
সূত্র: বিবিসি