শিশুরা ভালো–মন্দের বিচার করতে পারে না। তাই সতর্ক ও সচেতন হতে হবে মা-বাবাকেই। মডেল: স্বর্ণা ও মারিয়া।
শিশুরা ভালো–মন্দের বিচার করতে পারে না। তাই সতর্ক ও সচেতন হতে হবে মা-বাবাকেই। মডেল: স্বর্ণা ও মারিয়া।

শিশুর আচরণ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার আগে যাচাই করে দেখুন ভুল আপনারই কিনা

পরিবারের ছোট্ট সদস্য কখনো বাবার জুতা পরে হাঁটতে থাকে, মায়ের ওড়না পেঁচিয়ে শাড়ি পরে বউ সাজে। কখনো কখনো দাদির চশমা চোখে দিয়ে বুড়ো সাজে। আর এসব দেখে আমরা বড়রা বলি, ‘ও একদম বড়দের মতো!’

শিশু যখন এসব কাজ করে, দেখতে–শুনতে ভালোই লাগে। কোনো কোনো শিশু তো মা-বাবা বা বাড়ির অন্যরা কীভাবে কথা বলে, তা-ও অনুকরণ করে। ততক্ষণ পর্যন্ত এসব ঠিক আছে, যতক্ষণ শিশুরা বড়দের অনুকরণ করে কোনো নেতিবাচক আচরণ করা থেকে বিরত থাকে। তবে এই ‘যদি/কিন্তু’র মধ্যেই লুকিয়ে থাকে আশঙ্কা। বড়দের আচরণ যদি নেতিবাচক হয়, তাহলে শিশু কিন্তু নেতিবাচক আচরণই অনুকরণ করবে। উল্টোটাও হয়, ভালো আচরণ দেখলে অনুকরণও করবে ইতিবাচক।

একটু গভীরভাবে ভেবে দেখলে বুঝতে পারবেন, শিশুরা যাকে পছন্দ করে, তাঁর আচার-আচরণ অনুসরণ ও অনুকরণ দুটোই করে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শিশুদের গণ্ডি ছোট থাকে। চোখের সামনে যা দেখে অনায়াসে তা আয়ত্ত করে ফেলে। মা-বাবা যদি ঝগড়া করেন, বাড়ির বয়জ্যেষ্ঠ কাউকে অসম্মান করে কিছু বলেন, সেসবও শিখে ফেলে। এসব আচরণের প্রভাবে শিশুটি আক্রমণাত্মক আচরণও শিখতে পারে। অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ হারিয়ে ফেলে। শিশুদের সামনে কারও সঙ্গে উচ্চ স্বরে কথা বলা, ধূমপান করা, এমনকি তার মায়ের সঙ্গেও কোনো কথা-কাটাকাটি হলে সেটি তার আড়ালেই করা উচিত।

মা-বাবার আচরণ অনেক সংযত হতে হবে। তাঁদের স্বভাবের নেতিবাচক দিকগুলো যদি তাঁরা বদলে ফেলতে পারেন, তাহলে সন্তানের সামনে অপ্রস্তুত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না। বেশির ভাগ সময় অভিভাবকরাই ভালো–মন্দের তফাৎ বুঝতে পারেন না। সে কারণে সন্তান জন্মের পর নিজের খারাপ অভ্যাসগুলো বদলে ফেলতে হবে। কেননা শিশুরা ভালো–মন্দের বিচার করতে পারে না। তাই সতর্ক ও সচেতন হতে হবে মা-বাবাকেই।

আর যদি কোনো কারণে শিশুর সামনে কোনো বিরূপ আচরণ করে ফেলেন, তাহলে পরে তাকে বুঝিয়ে বলতে হবে যে কাজটি ভুল হয়েছে। আর কখনো এমন হবে না। আরেকটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, শিশুর সামনে কোনো অবস্থাতেই মিথ্যা বলবেন না। সন্তানের জন্য আদর্শ মা-বাবা হয়ে উঠুন।

চেষ্টা করলে আদর্শ মা-বাবা হওয়া সম্ভব। নিজের সন্তান অন্যের সামনে বেফাঁস কিছু বলে ফেললে মা-বাবা অস্বস্তিতে পড়েন। অভিভাবক হিসেবে যেন এমন পরিস্থিতিতে পড়তে না হয়, তাই আগে নিজেদের আচরণ বদলান।

সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট