পারিবারিক বা সামাজিক চাপে জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হুট করে নেওয়া উচিত নয়
পারিবারিক বা সামাজিক চাপে জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হুট করে নেওয়া উচিত নয়

দ্বিতীয় সন্তান নেওয়ার আগে নিজেকে যে ৩টি প্রশ্ন করবেন

কিছুদিন আগে এই প্রতিবেদককেই একজন প্রশ্ন করলেন, ‘মেয়ে তো বড় হয়ে যাচ্ছে, এবার একটা ছেলে হলে সংসার সম্পূর্ণ হয় না?’ পাশ থেকে আরেকজন সায় দিয়ে বললেন, ‘তোমার মেয়ের তো একটা খেলার সাথি দরকার।’ এ রকম ‘আন্টি’রা আমাদের আশপাশেই থাকেন। ছোটবেলায় বাসায় এলে চায়ে চুমুক দিতে দিতে ইংরেজি কবিতা বা সাধারণ জ্ঞান ধরতেন। বড় হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের প্রশ্নের ধরনও বদলে যায়। ‘বিয়ের দাওয়াত পাচ্ছি কবে? অনেক দিন একটা বিয়ে খাওয়া হয় না।’ বা ‘বাচ্চার মুখ দেখব কবে?’ কত যে প্রশ্ন তাঁদের!

অনেকে এ রকম পারিবারিক বা সামাজিক চাপে পড়ে বিয়ে, সন্তান বা দ্বিতীয় সন্তান নেওয়ার মতো জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো হুট করেই নিয়ে ফেলেন। তারপর পড়ে যান অথই সাগরে। জেনে নেওয়া যাক, দ্বিতীয় সন্তান নেওয়ার আগে নিজেকে যে তিনটি প্রশ্ন করবেন। প্যারেন্টিং এক্সপার্ট, ‘পাওয়ার টু দ্য প্যারেন্ট’ বইয়ের লেখক ইশিনা সাধনা তাঁর ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডলে দ্বিতীয়বার সন্তান নেওয়ার আগে নিজেকে এই তিনটি প্রশ্ন করতে বলেছেন।

১. আমি কি আদতে আরেকটা সন্তান চাই?

কানাডীয়-মার্কিন সংগীত তারকা জাস্টিন বিবারকে একবার এলেন ডিজেনারেস তাঁর শোতে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘সন্তান নেবেন কবে? কতগুলো সন্তানের বাবা হতে চান?’ উত্তরে বিবার বলেছিলেন, ‘অনেক সন্তানের বাবা হতে চাই। তবে এটা হেইলির শরীর। ও সিদ্ধান্ত নেবে, কখন সে তৈরি। কতবার সে সন্তান জন্ম দিতে চায়।’ দ্বিতীয় সন্তান নেওয়ার আগে ভাবুন, আপনি কার ইচ্ছায় মা হতে চাইছেন। জীবনসঙ্গী, মা-বাবা, শ্বশুর-শাশুড়ি বা সমাজের অন্য কারও ইচ্ছায় বা চাপে পড়ে মা হওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধন্ত নেবেন না। কেননা মা হওয়ার মতো বড় দায়িত্ব পৃথিবীতে কমই আছে।

২. আমি কি শারীরিক, মানসিক ও অর্থনৈতিকভাবে তৈরি?

দ্বিতীয় সন্তান নেওয়ার আগে নিজের মানসিক, শারীরিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় নিন। প্রথম সন্তান নেওয়ার পর অন্তত দুই বছর পর আবার সন্তান নেওয়া যেতে পারে। এ সময়ের মধ্যে শরীর প্রথমবার সন্তান জন্ম দেওয়ার ধকল পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠে।

দ্বিতীয় সন্তান নেওয়ার আগে নিজের মানসিক, শারীরিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় নিন

৩. আমার জীবনসঙ্গী প্রস্তুত তো?

দ্বিতীয় সন্তান নেওয়ার সিদ্ধান্ত মা-বাবা দুজনের থেকেই আসতে হবে। কেননা সন্তানের জন্য মা-বাবা দুজনই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মা-বাবা দুজনই যদি দ্বিতীয় সন্তান চান, তাহলেই ওই সন্তান পৃথিবীতে এসে সুন্দর একটা পরিবেশ পাবে। মা-বাবা দুজনের সংস্পর্শে বেড়ে উঠবে।

সংসারে দ্বিতীয় সন্তান দারুণ ব্যাপার নিঃসন্দেহে। কিন্তু আপনি যদি শারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিক ও অন্যান্য দিক থেকে তৈরি না থাকেন, যদি আপনি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকেন, অস্বাস্থ্যকর সম্পর্ক বা পরিবেশে থাকেন, সে ক্ষেত্রে দ্বিতীয় সন্তান আপনার দুশ্চিন্তা, জটিলতা আরও বাড়াবে। সদ্যোজাত শিশুর কাছে আপনার ব্যক্তিগত বা পারিবারিক সমস্যার সমাধান আশা করাটা অবাস্তব।

আপনি যখন সুখী, সুন্দর, স্বাস্থ্যকর পরিবেশে আছেন আর সব দিক দিয়ে তৈরি, কেবল তখনই দ্বিতীয় সন্তানকে আপনি সুন্দরভাবে বড় করতে পারবেন। মনে রাখবেন, আপনার সন্তান পৃথিবীতে আপনার বা আপনাদের কোনো সমস্যার সমাধান করতে আসেনি। তাকে পৃথিবীতে আনার সিদ্ধান্ত আপনাদের, তাকে একটা স্বাস্থ্যকর পরিবেশে সবচেয়ে ভালোভাবে বড় করার দায়িত্বও আপনার।