নিপীড়িত নারীদের বন্ধু সে

দাসত্বের আগলে বন্দী কিংবা পাচার হয়ে যাওয়া নারীদের যে অমানবিকতার মুখোমুখি হতে হয়, তা নিদারুণ বেদনাদায়ক। সমাজের যেকোনো পরিসরে নিগৃহীত হওয়া একজন নারী মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ার ঝুঁকিতে থাকেন। এমন নারীদের প্রতি সহমর্মী কেউ যখন তাঁদের সত্যিকার বন্ধু হয়ে ওঠেন, তাঁর পক্ষেই সম্ভব হয় সেই বিপর্যয়ের হাত থেকে তাঁদের বাঁচানো। দেশের সীমানা ছাপিয়ে ঠিকানা যা-ই হোক না কেন, নারীত্বের নিপীড়নের অনুভূতিটা একই। আজ আন্তর্জাতিক বিড়াল দিবসে চলুন ১১ দেশের নিপীড়িত ১১ নারীর এক বন্ধুর সঙ্গে পরিচিত হই।

নাম তার মার্লি। বছর সাতেক বয়স। নিপীড়িত নারীর বন্ধুর বয়স সাত শুনেই চমকে যাবেন না যেন, অবাক হওয়ার মতো আরও বিষয় আছে যে! থাক, ঢাক ঢাক গুড় গুড় না করে চমকপ্রদ ব্যাপারটা বলেই দিই। মার্লি একটি বিড়াল। লন্ডনের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা ১১ নারীর জীবনে আনন্দ ফিরিয়ে এনেছে তাঁদের এই বন্ধু। মানবসমাজের এমন সেবকের গল্পটা আজ জেনে নেওয়া যাক।

লন্ডনের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা ১১ নারীর জীবনে আনন্দ ফিরিয়ে এনেছে মার্লি

যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহরের ক্যারিতাস বাখিতা হাউস নামের এক আশ্রয়কেন্দ্রের বাসিন্দা মার্লি। এই কেন্দ্রের প্রধান কারেন অ্যান্সতিস মার্লিকে বলেন এই বাড়ির ‘তুলতুলে হৃৎপিণ্ড’। সেখানে বসবাসরত ১১ জন নিপীড়িত নারীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে কাজ করে যাচ্ছে সে। নিপীড়িত সেই নারীদের বয়স ২২ থেকে ৭০–এর ভেতর। কারেন অ্যান্সতিসই জানিয়েছেন, ওই বাড়িতে থাকা এই ১১ নারীর জীবনে মার্লির ভূমিকাটা কী।


কারেন জানান, বছর চারেক আগে এই সাদাকালো বিড়ালটিকে দত্তক নিয়েছিলেন তাঁরা। তাঁর নিজের ধারণা, মার্লি জীবনের প্রথম ভাগে কোনো না কোনোভাবে নিপীড়নের শিকার হয়েছিল। আর যে নীপিড়ন করেছিল, সে একজন পুরুষ—যুবক। কেননা, ৩০–এর আশপাশে বয়স, এমন পুরুষদের দেখলে মার্লি ভয় পেয়ে যায়। নিপীড়িত নারীদের অনুভূতিটাকে মার্লি নিজেই উপলব্ধি করতে সক্ষম। সত্যিই এ এক অবিশ্বাস্য ক্ষমতা!

নিপীড়িত নারীর পায়ে আলতো করে নিজের থাবা রাখে মার্লি। আমরা যেমন কারও কাঁধে স্নেহময় হাত রাখি, ব্যাপারটা অনেকটা তেমনই। একজন নারী মানসিকভাবে এতটাই ভেঙে পড়েছিলেন যে তিনি সেখানকার কোনো মানুষের সঙ্গেই কথা বলতে পারতেন না। কেবল মার্লির সঙ্গেই কথা বলতেন, সময় কাটাতেন। ধীরে ধীরে মার্লির মাধ্যমেই ওই সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের অন্য ব্যক্তিদের সঙ্গে ধীরে ধীরে সহজ হয়ে উঠতে শুরু করেন। এভাবে সবার সঙ্গেই সহযোগিতার এক সেতুবন্ধ গড়ে তুলেছে মার্লি।

তবে মার্লি কিন্তু কেবল ‘এটুকু’ কাজই করে না সেখানে। সে কর্মীদের তত্ত্বাবধানেও নিজেকে নিয়োজিত রাখে বলা যায়। নিরাপত্তাকর্মীর কাজও করে। পাহারা দেয় বাড়ির জমি। এমনকি সে বাড়ির বাগানের প্রধান রক্ষণাবেক্ষণকারীও বটে। তার ডেইজি বাগানের গাছ স্পর্শ করার সাধ্য নেই কারও! এমন দারুণ এক কর্মী বিড়াল যুক্তরাজ্যে এ বছর ন্যাশনাল ক্যাট অ্যাওয়ার্ডসের জন্য চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছে ‘ইনক্রেডিবল ক্যাটস’ বিভাগে। ভোট গ্রহণ চলবে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত। ভোট দেওয়া যাবে যুক্তরাজ্যের ক্যাটস প্রটেকশন ওয়েবসাইটে। ফলাফল ঘোষিত হবে ১৮ সেপ্টেম্বর।


সূত্র: বিবিসি ও ক্যাটস প্রটেকশন