কোহলি যে কারণে তাঁর সফলতার ভাগ আনুশকাকে দেন

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে বিরাট কোহলি ও আনুশকা শর্মার ছবি। ১১ ডিসেম্বর ছিল এই পাওয়ার কাপলের ষষ্ঠ বিবাহবার্ষিকী। যুক্তরাজ্যের লন্ডনে কাছের বন্ধুদের সঙ্গে কেক কেটে উদ্‌যাপন করেছেন এই বিশেষ দিন।

ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম বিজ্ঞাপন বিরাট কোহলি বিয়ের পর থেকেই তাঁর সফলতার একটা ভাগ সব সময় তাঁর স্ত্রী আনুশকা শর্মাকে দেন। উদযাপনের একটা বড় অংশ জুড়ে থাকে স্ত্রী। ব্যাটে চুমু এঁকে আনুশকার দিকে উড়িয়ে দেওয়ার দৃশ্য তো ভক্তদের চোখে লেগে আছে। সম্প্রতি শেষ হয়ে যাওয়া বিশ্বকাপেও বিরাট নিজের সফলতার কৃতিত্ব ভাগাভাগি করে নিয়েছেন আনুশকার সঙ্গে।

বিরাট আর আনুশকা দুজন দুজনের সেরা বন্ধু

এ নিয়ে বাংলাদেশেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলেছে ব্যাপক বিশ্লেষণ, বিতর্ক। এক পক্ষ বলেছে সেই চিরকালীন কথা, ‘প্রতিটি সফল পুরুষের পেছনে একজন নারী আছেন।’ কথাটা পুরোপুরি ঠিক নয়। আনুশকাকে বিয়ের আগেই বিরাট কোহলি তাঁর ক্যারিয়ারের চূড়ান্ত সফলতার দেখা পেয়েছেন, স্পর্শ করেছেন বিশ্বকাপ। পৃথিবীতে অনেক সফল পুরুষ আছেন, যাঁরা তুমুল সফলতা উদ্‌যাপন করেছেন অত্যন্ত নিঃসঙ্গভাবে। আবার বিশ্বের সফলতম পুরুষদের অনেকেরই বিবাহিত জীবনে ছিলেন মারাত্মকভাবে ‘ডিস্টার্বড’। অথবা হয়তো কখনো বিয়েই করেননি। তবে একের পর এক বিষাক্ত (টক্সিক) সম্পর্কে জড়িয়েছেন। এসব কথা চূড়ান্ত সফল নারীদের ক্ষেত্রেও সমানভাবে সত্য।  

আরেক পক্ষ বলছে, যার সফল হওয়ার, সে সফল হবেই। কোনোভাবেই আটকানো যাবে না। কোহলি এত সফল বলেই আনুশকা তাঁর সঙ্গে আছেন। এ কথাও অগ্রহণযোগ্য। আনুশকা শর্মা যখন কোহলিকে বিয়ে করেন, তত দিনে তিনি বলিউডের প্রথম সারির তারকা। তিনটা সিনেমায় শাহরুখ খানের সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন।

বিয়ের পর ক্যারিয়ার থেকে নিয়েছেন লম্বা ছুটি। পুরোদস্তুর স্ত্রী আর মা হিসেবে মন দিয়েছেন সংসারে। বলিউডের ক্যারিয়ারের ‘পিক আওয়ারে’ থাকা একজন নারীর জন্য এ রকম সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ নয়।

লকডাউনে যখন বিরাট খারাপ ফর্মের ভেতর দিয়ে যাচ্ছিলেন, পুরো ভারত মিলে আনুশকাকে দোষারোপ করেছে। বিরাট-আনুশকা জুটির কুশপুত্তলিকা পোড়ানো হয়েছে। সেই সময় আনুশকা সেসবের কোনো প্রতিবাদ তো জানানইনি, বরং ফর্মে ফিরে আসার জন্য মানসিকভাবে ভেঙে পড়া কোহলিকে সমর্থন জুগিয়ে গেছেন।

নভেম্বরে শেষ হয়ে যাওয়া বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনালের অন্যতম ভাইরাল ছবি এটি

২০২১ সালের মাঝামাঝি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটা ভিডিও ভাইরাল হয়। সেখানে দেখা যায়, একটা সাধারণ দম্পতির মতোই বিরাট আর আনুশকা মুম্বাইয়ের রাস্তায় বাইকে করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তবে হেলমেটেও নিজেদের আড়াল করতে পারেননি। ঠিকই পাপারাজ্জিরা চিনে অনুসরণ করেছে আরও ডজনখানেক বাইক নিয়ে। তারও আগে দেখা গেল, ছোট্ট লনে বিরাট আর আনুশকা ক্রিকেট খেলছেন। এরই মাঝে সাক্ষাৎকারে একজন আরেকজনকে ইচ্ছেমতো পচাচ্ছেন। আবার হাসতে হাসতে জড়িয়ে ধরছেন। সেসব দেখে ভক্তরা হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। ছড়িয়ে দিচ্ছে ভালোবাসা। এভাবেই একটা পার্টনারশিপ কেমন হওয়া উচিত, সেটার মাইলফলক স্থাপন করতে থাকেন দুজন মিলে।

আনুশকা প্রতিনিয়ত বিরাটকে মানসিকভাবে চাঙা রাখার চেষ্টা করেন। আপাতদৃষ্টে এসব ব্যাপার ছোট মনে হতে পারে, তবে মানসিক সমর্থনের অভাবে কত মানুষ তিলে তিলে শেষ হয়ে যায়, এর কোনো সমীক্ষা হয় না। আনুশকা আর বিরাট দুজন দুজনের যেভাবে প্রকাশ্যে তারিফ, সমাদর করেন, এটা যেকোনো দম্পতির জন্য সবচেয়ে চাওয়ার মুহূর্ত।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল বিশ্বকাপ ফাইনালের এই ছবি

আনুশকা প্রতিমুহূর্তে জানান দেন, তিনি বিরাটের ব্যক্তিত্বে কতটা মুগ্ধ! আর বিরাটও বলেছেন, সত্যিকার অর্থেই আনুশকা তাঁর সেরা বন্ধু, জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। বলেছেন, আনুশকার সঙ্গে দেখা হওয়ার পরও তাঁর জীবন বদলে গেছে। তিনি জীবনকে নতুনভাবে, অন্যভাবে দেখতে শিখেছেন। আরও রঙিন, আলোকিত আর আনন্দময় হয়েছে।

আপনাকেই প্রশ্ন করি, আপনি যদি একজন ক্রিকেট ভক্ত হন, তাহলে বিরাট কোহলিকে তাঁর যাত্রার শুরু থেকেই চেনেন। আপনি কি কখনো ভেবেছিলেন যে বিরাট একজন পুরোদস্তুর ‘ফ্যামিলি ম্যান’, ‘হাজবেন্ড ম্যাটেরিয়াল’?

বিরাট আনুশকা বিশ্বের জনপ্রিয়তম জুটিগুলোর একটি

আনুশকা ও বিরাট দুজনেই মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসেছেন। দুজনের ক্যারিয়ারের গ্রাফও এগিয়েছে অনেকটা একই ছন্দে। জাতীয় দলে বিরাটের অভিষেক হয় ২০০৮ সালের আগস্টে। একই সময়ে আনুশকা তাঁর প্রথম সিনেমা ‘রাব নে বানা দে জোড়ি’র শুটিং শুরু করেন। দুজনেই নিজেদের মেধা–শ্রম দিয়ে ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ সফলতার চূড়া স্পর্শ করেছেন, তবে ভিন্ন দুই ‘পৃথিবীতে’। দুজনের মেধা, শ্রম, সম্পদ, একজন আরেকজনের ওপর নির্ভরশীলতা, বন্ধুত্ব, খুনসুটি—সব মিলিয়ে এই দুজনকে যদি ভারতের সবচেয়ে পছন্দের, সবচেয়ে জনপ্রিয় জুটি বলা হয়, বাড়াবাড়ি হবে না। তাই বিরাট যদি তাঁর পেশাগত সফলতার ভাগ জীবনসঙ্গীকে দেন, আপনি সেটাকে ‘অ্যাপ্রিশিয়েট’ করুন। নিজের জীবনসঙ্গীকেও অ্যাপ্রিশিয়েট করুন। মানুষ হিসেবে, পেশাজীবী হিসেবে একে অপরের সেরাটা বের করে আনতে প্রতিমুহূর্তে অনুপ্রাণিত করুন।