দুই সন্তানের মধ্যে বয়সের ব্যবধান কত হওয়া ভালো

পিঠাপিঠি ভাইবোনের বোঝাপড়া ভালো হলেও অভিভাবকের অনেক ঝক্কি সামলাতে হয়
ছবি: অধুনা

পিঠাপিঠি ভাইবোনের বোঝাপড়া নাকি দারুণ হয়। বেড়ে ওঠার পথটা একসঙ্গে চলতে গিয়ে একে অন্যের পরিপূরক হয়ে ওঠে তারা। এ তো মুদ্রার একটা পিঠ। মুদ্রার অন্য পিঠ অর্থাৎ অভিভাবকেরা কীভাবে সামলাবেন কাছাকাছি বয়সের দুই সন্তানের লালনপালনের ঝক্কি।

আধুনিক জীবনের একক পরিবারের জীবনধারায় একই সঙ্গে দুটি ছোট শিশুকে বড় করে তুলতে গিয়ে মুশকিলে পড়তে পারেন অভিভাবকেরা। মায়ের ওপর পড়তে পারে বাড়তি চাপ। সবদিক বিবেচনায় দ্বিতীয় সন্তান ধারণের সঠিক সময় আসলে কোনটি? বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন?

দুই সন্তানের বয়সের পার্থক্য তিন থেকে পাঁচ বছর হওয়া ভালো

একটি সন্তানের জন্মের ন্যূনতম দুই বছর ব্যবধানে পরের সন্তান নেওয়া উচিত। মায়ের শারীরিক সুস্থতা ও শিশুর বেড়ে ওঠার পথে তার সার্বিক যত্ন নিশ্চিত করতে এই দুই বছর ব্যবধান রাখা আবশ্যক।

একটি শিশুর দুই বছর বয়স অবধি মায়ের দুধ প্রয়োজন। এই সময়টুকু পেরোনোর আগেই যদি মা পুনরায় গর্ভধারণ করেন, তাহলে শিশুটি এই পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে। তাই পরবর্তী সন্তান নেওয়ার জন্য অন্তত দুই থেকে পাঁচ বছর সময় নেওয়া উচিত।

এমনটাই বলছিলেন রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের কনসালট্যান্ট ডা. ফারজানা রশীদ।

সমবয়সী দুই সন্তানের একজন যদি সমান মনোযোগ না পায়, সেটা তার মনোজগতে নেতিবাচকতা সৃষ্টি করে।

তবে মায়ের বয়স ও শারীরিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত বলে জানালেন এই চিকিৎসক। প্রথমবার সন্তান ধারণের সময়ই যদি মায়ের বয়স ৩০ পেরিয়ে যায়, তাহলে ৩ বছরের মধ্যেই পরবর্তী সন্তান গ্রহণের পরিকল্পনা করা উচিত।

কারণ, এরপর একজন নারীর সন্তান ধারণের সম্ভাবনা আরও কমতে থাকে। তা ছাড়া বয়স বাড়তে থাকলে অন্যান্য শারীরিক সমস্যার ঝুঁকিও তৈরি হয়। তাই খুব বেশি দেরি না করাই ভালো।

কিন্তু দুই থেকে তিন বছরের ব্যবধানে দুই সন্তানের জন্ম হলে মা-বাবার জন্য তাদের দেখভাল করাটাও বেশ মুশকিলের ব্যাপার হয়ে দাঁড়াতে পারে। এই সত্যকেও অস্বীকার করার উপায় নেই।

আর বাড়ন্ত বয়সে অভিভাবকের আদর-যত্নে ‘অবহেলা’র দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবও পড়তে পারে শিশুর ওপর। বরং দুই সন্তানের মধ্যে একটু ব্যবধান থাকলে মা-বাবার জন্য তাদের দেখভাল করাটা তুলনামূলক সহজ হয়।

দুই সন্তানের মধ্যে একটু ব্যবধান থাকলে মা-বাবার জন্য তাদের দেখভাল করাটা তুলনামূলক সহজ হয়।

এ প্রসঙ্গে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মানসিক রোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. জসিম উদ্দীন বলছিলেন, শৈশবে মা-বাবার আদর-ভালোবাসায় কোনো ঘাটতি অনুভব করলে বা নিজেকে বঞ্চিত অনুভব করলে একটি শিশুর মনোজগতে নেতিবাচকতা সৃষ্টি হতে পারে। তার চেয়ে ভালো হয়, যদি এক সন্তান একটু বড় হয়ে যাওয়ার পর আরেকটি সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। যদি মায়ের শারীরিক অবস্থা ঠিক থাকে, তবে বছর পাঁচেক বা তারও একটু বেশি ব্যবধান হলেও ক্ষতি নেই।

পরের সন্তান গর্ভে আসার পর বড় সন্তানকে একটু একটু করে তার অনাগত ভাই বা বোনের বিষয়ে জানাতে হবে। তার বয়সের উপযোগী করে ব্যাপারটা তাকে বুঝিয়ে বলতে হবে। বুঝিয়ে দিতে হবে দুজনের জন্যই মা-বাবার ভালোবাসা ‘সমান’। তাহলে তাকে সাদরে গ্রহণ করাটা তার জন্যও সহজ হবে। তার জন্য ছোট্ট ছোট্ট ‘আত্মত্যাগ’ করতেও সে প্রস্তুত থাকবে।