বোন আছে? আপনি ভাগ্যবান

বাস্তবতা হলো, আপনি ভাগ্যবান। কারণ, আপনার একজন বোন আছে। আর এ কথা আমি বলছি না, বলছে গবেষণা
ছবি: পেএক্সেলস ডটকম
আপনার বোন হয়তো আপনার পছন্দের শার্ট বা সোয়েটারটি দশমবারের মতো ‘ধার’ নিয়েছে। হয়তো প্রেমিকের সঙ্গে ঝগড়ার খানিকটা ঝাল আপনার ওপরও ঝেড়েছে। প্রযুক্তিগত কিছু একটা ঝামেলা হলেই মিটিয়ে দেওয়ার জন্য কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করে। এসব নিয়ে আপনি মহাবিরক্ত। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আপনি ভাগ্যবান। কারণ, আপনার একজন বোন আছে। আর এ কথা আমি বলছি না, বলছে গবেষণা। গবেষণাটি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ব্রিংহাম ইয়ং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ফ্যামিলি লাইফ। গবেষণাটির নেতৃত্ব দিয়েছেন এই বিভাগের প্রফেসর অ্যালেক্স জেনসেন। চট করে জেনে নেওয়া যাক বোন থাকার কী কী সুবিধা।

১. মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে

একজন বোন মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। বলা হয়, যার একজন বোন আছে, তার আর বন্ধু না হলেও চলে। কেননা, বোনই বন্ধুর ভূমিকা পালন করে। যেকোনো মানসিক সংকটে একজন মানুষের জীবনে বোনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন বোন থাকলে আপনার আর একা হওয়ার ভয় থাকে না। এমনকি বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর বোনেরাই যোগাযোগ রাখা আর পরিবারের সঙ্গে সেতুবন্ধের কাজ করে।

২. আত্মবিশ্বাসী হতে সাহায্য করে

আপনার বড় বোন, ছোট বোন বা যমজ বোন—যে-ই থাকুক না কেন, সে আপনাকে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠতে সাহায্য করে। এই গবেষণায় দেখা গেছে, একজন ভাইয়ের চেয়ে একজন বোন বেশ আত্মবিশ্বাস জোগায়। কেননা, একজন বোন তার ভাই বা বোনের শক্তিশালী দিকগুলোর কদর করে। এমনকি ভয় কাটিয়ে উঠতেও সাহায্য করে।

পরিবারে যে মানুষটা মধ্যে ইতিবাচক এনার্জিতে ভরপুর, সে আর কেউ নয়, আপনার বোন

৩. দয়ালু ও ইতিবাচক মানুষ হয়ে উঠতে সাহায্য করে

পরিবারে যে মানুষটা মধ্যে ইতিবাচক এনার্জিতে ভরপুর, সে আর কেউ নয়, আপনার বোন। এমনকি বোনের সঙ্গে আপনার যখন ঝগড়াও হয়, সেখানেও জিতে যায় ইতিবাচকতা। বোন আপনাকে দয়ালু হওয়ার শিক্ষা দেয়। বাড়িয়ে রাখে সাহায্যের হাত। আপনাকেও অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল আর একজন ইতিবাচক মানুষ হয়ে উঠতে সাহায্য করে।

৪. যোগাযোগে দক্ষতা বাড়ায়

গবেষণা বলছে, বড় হওয়ার প্রক্রিয়ায় যে একজন বোন পেয়েছে, তার যোগাযোগে দক্ষতা অর্জন অন্যদের তুলনায় সহজ হয়েছে। বিশেষ করে সে যদি ছেলেশিশু হয়, তবে মেয়েদের সঙ্গে তার যোগাযোগে আর বিশেষ বাধা থাকে না। বিষয়টি বিপরীতভাবেও ঠিক। একজন ভাই থাকলে বোনেরও পরবর্তী সময়ে ছেলেদের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হয়ে যায়। অ্যালেক্স জেনসেন বলেন, বিশেষ করে কৈশোরে ছেলেশিশু ও মেয়েশিশুর বন্ধুত্ব গাঢ় হয়। কেননা, তারা বিপরীত লিঙ্গের বিষয়ে নানা তথ্য আদান–প্রদান করে।

৫. আবেগীয় ভারসাম্য বজায় রাখে 

একজন বোন ইমোশনাল ব্যালান্স বা আবেগীয় ভারসাম্য আনতে সাহায্য করে। ১৭ থেকে ২৫ বছর বয়সী ৫৭১ জনের ওপর পরিচালিত ব্রিটিশ সাইকোলজিস্টদের একটি জরিপ অনুসারে, একজন বোন আপনার মানসিক প্রশান্তি খুঁজে পেতে সাহায্য করে। বড় হওয়ার অভিজ্ঞতায় যে একজন বোনকে সঙ্গী হিসেবে পেয়েছে, পরবর্তী সময়ে তার আবেগীয় ভারসাম্য বজায় রাখতে সুবিধা হয়েছে। তাদের জীবনের যেকোনো সমস্যা বা অসুবিধার সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে বা সমাধান করে চলতে সুবিধা হয়েছে। এ জরিপে দেখা যায়, যাদের একটা বোন আছে, তারা একই সমস্যায় কম দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়েছে। তারা অন্যদের তুলনায় অধিক আশাবাদী। এভাবে একজন বোন থাকাতে তাদের জীবনে সুখী হওয়া সহজ হয়েছে।

ছেলেশিশু বোনকে দেখেই নারীকে সম্মান করতে শেখে (প্রতীকী ছবি)

অ্যালেক্স জেনসেন বলেন, ‘সামাজিক দক্ষতা, ছাড় দেওয়া ও বোঝাপড়ার শিক্ষা একটা শিশু তার বোনের কাছ থেকেই পায়। ছেলেশিশু বোনকে দেখেই নারীকে সম্মান করতে শেখে। এমনকি ভাই-বোনের মধ্যে ছোটখাটো ঝগড়া হওয়াও আদতে ভালো। ভবিষ্যতে তা অন্যদের সঙ্গে স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক বজায় রাখতে সাহায্য করে।’


যুক্তরাজ্যের অলস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক টনি ক্যাসিডি ডেইলি মেইলকে বলেন, ‘বোনেরা জীবনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, যেগুলো ভাইয়েরা রাখতে পারে না। বোনেদের পক্ষ থেকে সব সময় যোগাযোগের দরজা খোলা থাকে। আবেগীয় সমর্থনের জন্য সবার আগে বোন হাজির। পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় রাখতে বোনেরা প্রতিনিয়ত অবদান রাখে। যত্নশীলতা, ইতিবাচকতা, সমানুভূতিশীলতা—এগুলো বোনেরা যেভাবে বহন করে, ভাইয়েরা সেভাবে পারে না। তাই একজন বোন থাকা মানে, আপনি ভাগ্যবান।’


সূত্র: ডেইলি মেইল, মাদারলি