নিজেরা বিয়ে করেছিলাম, এখন আমার অনেক বেশি আফসোস হচ্ছে

পাঠকের প্রশ্ন বিভাগে আইনগত সমস্যা নিয়ে নানা রকমের প্রশ্ন পাঠিয়েছেন পাঠকেরা। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মিতি সানজানা নির্বাচিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এবার।

ব্যারিস্টার মিতি সানজানা

প্রশ্ন: আমি একজন হিন্দু ছেলে। অনাথ একটি মেয়েকে তিন মাস প্রেম করার পর বিয়ে করি। বিয়েতে আমার পরিবারের মত ছিল না। প্রথম প্রেমের কারণে আবেগের বশবর্তী হয়ে নিজের প্রত্যাশার বাইরে চলে গিয়েছিলাম। কিন্তু শেষ দিকে বুঝতে পারি, বিয়ে যেহেতু সারা জীবনের জিনিস, তাই প্রত্যাশার বাইরে গেলে আফসোস হতে পারে। এসব ভেবে শেষ দিকে আমি মেয়েটিকে বিয়ে করতে অপারগতা প্রকাশ করি। কিন্তু মেয়েটি আমাকে নানা রকম ইমোশনাল কথাবার্তা বলে। নিজের নানা রকম দুর্দশার কথা বলতে থাকে। একটি অনাথ মেয়ের সঙ্গে কীভাবে প্রতারণা করতে পারলাম ইত্যাদি নানা কথা বলে। তাই শেষ পর্যন্ত তাকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিই। কাউকে না জানিয়ে নিজেরা বিয়ে করে ফেলি। কিন্তু বিয়ের পর এখন আমার আফসোস হচ্ছে। আমি ভুল করেছি। আমি এই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে চাই। হিন্দু আইনে যেহেতু বিবাহবিচ্ছেদ নেই, সেহেতু কীভাবে এই বিয়ে থেকে বেরিয়ে আলাদা থাকতে পারি, সেটা জানতে চাই। আলাদা হতে পারলে ভরণপোষণের কেমন খরচ দিতে হবে, সেটাও জানতে চাই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

উত্তর: হিন্দুধর্মে বৈবাহিক সম্পর্ক ‘অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক’। বিয়ের মাধ্যমে স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক তৈরি হয়। যার ফলে হিন্দুধর্মে বিচ্ছেদের (ডিভোর্স) বিধান নেই।

জন্ম-মৃত্যুর মতো হিন্দুদের জন্য বর্তমানে বিবাহ নিবন্ধন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে, যা ‘হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন আইন ২০১২’ নামে পরিচিত। এই আইনে কীভাবে হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন করতে হবে, সেটার বিস্তারিত তথ্য দেওয়া আছে। তবে আইনে হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়নি। সনাতন ধর্মমতে হিন্দু বিয়ে শুধু ধর্মীয় বিধান মেনে সম্পন্ন করা হতো। মন্দিরে পুরোহিত দ্বারা মন্ত্র পাঠ করে অগ্নিকে সাক্ষী রেখে এই বিয়ে হতো, অনেকেই এখনো সেভাবেই বিয়ে করেন। আপনি বিয়ে নিবন্ধন করেছেন কি না, জানাননি। তবে যদি সনাতন ধর্মমতে মন্দিরে বিয়ে করেন কিন্তু নিবন্ধন না করে থাকেন, সে ক্ষেত্রেও আপনার বিয়েটি বৈধ হবে।

নিবন্ধন করলে প্রমাণপত্র হিসেবে একটি কাগজ দেওয়া হয়। আর এই প্রমাণপত্র দেখিয়ে বিচ্ছেদের সুযোগ থাকে। তবে যদি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা না হয়, তাহলে দেওয়ানি আদালতে বিবাহবিচ্ছেদ চেয়ে ঘোষণামূলক মামলা করতে পারেন। আদালত চূড়ান্ত সেপারেশনের নির্দেশ দিলে শুধু সেপারেশন সম্ভব, কিন্তু হিন্দু আইনে ডিভোর্স হয় না।

আদালত স্ত্রীর ভরণপোষণ বাবদ কিছু টাকা নির্ধারণ করতে পারেন, যা স্বামী স্ত্রীকে দেবেন। এই ভরণপোষণ সাধারণত একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত হয়ে থাকে। ভরণপোষণের পরিমাণ আদালত নির্ধারণ করবেন। সাধারণত স্বামী-স্ত্রীর পারিবারিক, সামাজিক ও আার্থিক অবস্থা বিবেচনা করে ভরণপোষণের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।

পাঠকের প্রশ্ন, বিশেষজ্ঞের উত্তর

পাঠকের প্রশ্ন পাঠানো যাবে ই–মেইলে, ডাকে এবং প্র অধুনার ফেসবুক পেজের ইনবক্সে। ই–মেইল ঠিকানা: adhuna@prothomalo.com (সাবজেক্ট হিসেবে লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’)

ডাক ঠিকানা

প্র অধুনা, প্রথম আলো, প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবন, ২০–২১ কারওয়ান বাজার, ঢাকা ১২১৫। (খামের ওপর লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’)  ফেসবুক পেজ: fb.com/Adhuna.PA