দেখে বোঝার উপায় নেই, ৮১ বসন্তের সাক্ষী তিনি। মঞ্চে যখন গুণী অভিনেত্রী দিলারা জামান বললেন, ‘৮১ বছর বয়স হয়েছে।’ অনেকেই বিশ্বাস করেননি। সাদা জমিনে নীল পাড়ের সুতি শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে পরেছেন আকাশিরঙা একটা চাদর। দুই হাতে দুটো চিকন চুড়ি, চোখে চশমা। সাজ বলতে ঠোঁটের হাসিটুকুই সম্বল। চিরায়ত বাঙালি মা বলতে চোখ বন্ধ করলে যেমন প্রতিচ্ছবি ভেসে ওঠে, দিলারা জামান যেন ঠিক তা–ই। চেনা মুখ বলে আলাদা করা যায়।
বাজারে এসেছে জনপ্রিয় লেখক আনিসুল হকের নতুন বই ‘কখনো আমার মা’। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে বইটির মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বড় ও ছোট পর্দার চেনা মুখ, সিনেমা ও নাটকের মা চরিত্রের অন্যতম অভিনয়শিল্পী দিলারা জামান। এই তারকা অভিনেত্রীর দুই মেয়ে, একজন থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে, আরেকজন কানাডায়। দুজনই মাকে নিজেদের কাছে রাখতে চান। তবে দিলারা জামান দেশ ছেড়ে কোথাও গিয়ে থাকতে পারেন না।
অনুষ্ঠানে এই অতিথি জানালেন, মেয়ের সঙ্গে কিছুদিন যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন। দেশের টানে, বৃষ্টির ডাকে, দেশের সাধারণ মানুষকে ছেড়ে বহুদূরে তিনি থাকতে পারেননি। বার্ধক্যে পৌঁছে একা জীবন যাপন করা কতটা কঠিন, তা টের পাচ্ছেন। কিন্তু মেয়ে, নাতি–নাতনিদের সঙ্গে বিদেশে থাকা আর একা দেশে থাকার মধ্যে সচেতনভাবেই বেছে নিয়েছেন দ্বিতীয় ‘অপশন’টি।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ার সময় খানিকটা আক্ষেপও ঝরে পড়ল বর্ষীয়ান এই অভিনেত্রীর কণ্ঠে। বললেন, ‘আজকালকার নাটক–সিনেমায় তো মায়ের চরিত্র খুঁজেই পাওয়া যায় না। নাটক থেকে হারিয়ে গেছে মা। কিন্তু জীবন থেকে কি মা কখনো হারিয়ে যায়?’
নাটক বা চলচ্চিত্র তো জীবনেরই প্রতিচ্ছবি, সেখানে মায়ের চরিত্র কমতে কমতে এখন প্রায় অনুপস্থিত। মায়েরা জীবনে কত গুরুত্বপূর্ণ, অথচ নির্মাতারা মায়ের চরিত্র নিয়ে আলাদা করে ভাবছেন না। এ বিষয়টি নিয়েই দুঃখ প্রকাশ করলেন তিনি।
আরও বললেন, শীতের এই মিষ্টি রোদের বিকেলে এ রকম একটি অনুষ্ঠানে আসতে পেরে তিনি সম্মানিত। আজ (রোববার) মেয়েরা ভিডিও কল করলে তাঁদের বলবেন, এ কারণেই তিনি দেশে ফিরে এসেছেন, দেশেই থাকতে চান।