সম্পর্ক নাকি চারাগাছের মতো। চারাগাছে যেমন নিয়ম করে পানি দিতে হয়, সার দিতে হয়, নিড়িয়ে দিতে হয় আগাছা, তেমনি সম্পর্কেরও যত্ন নিতে হয়। চারাগাছ বেড়ে ওঠার পর রোজকার সেই নিবিড় যত্নের প্রয়োজন না পড়লেও মাঝেমধ্যে একটু খেয়াল রাখতে হয় বৈকি। সম্পর্কের বেলাতেও ব্যাপারটা ঠিক তা-ই। মাঝেমধ্যে একটু খেয়াল না রাখলে বহু বছরের পুরোনো বিয়ের বন্ধনও আলগা হয়ে পড়তে পারে।
অনেক বছর ধরে একই ছাদের নিচে যাঁর সঙ্গে বসবাস, তাঁকে রোজ দেখতে পাওয়ার কারণে মনে আকুলতা থাকে না, থাকে না নবদম্পতির মতো একে অপরকে জানার কৌতূহল। সংসারের টুকিটাকি ভাবনা নিয়ে আগের মতো আর হয় না মিষ্টি আলাপন। প্রিয় মানুষটাকে একটু খুশি করার জন্য প্রাণান্ত কোনো চেষ্টা করার অভিলাষটুকুও কোথায় যেন হারিয়ে যায়। এ কিন্তু খুব অচেনা কোনো চিত্র নয়।
‘নৈমিত্তিক’ হয়ে ওঠা সম্পর্ককে রঙিন আর সতেজ রাখাটা জরুরি। তাতে সম্পর্ক থাকে ‘সুস্থ’। সম্পর্ক সতেজ করে তোলার আলোচিত এক নিয়ম ৭৭৭, এ নিয়ম পালনের চেষ্টা করতে পারেন আপনিও। কী এই নিয়ম? জেনে নিন আজ।
সাত দিনে একবার ঘুরতে যান
সাংসারিক কিংবা সামাজিক প্রয়োজনে নয়, বরং কেবল ঘুরতে যাওয়ার জন্যই ঘুরতে যান সঙ্গীকে নিয়ে। সাত দিন অন্তর তাঁকে নিয়ে যেতে পারেন কোনো রেস্তোরাঁ বা কফি শপে। সেখানেই নাহয় খানিকটা সময় কাটালেন একান্তে। সংসারের কাজের ‘বোঝা’ মাথায় রেখে নয়, বরং কথা বলুন আয়েশি মেজাজে। বাসার কাছে খোলামেলা, সুন্দর পরিবেশ থাকলে সেখানেও যেতে পারেন। নিয়ম করে একটা দিন বের করতেই হবে দুজনকে। নইলে এমন কত শত ‘সাত দিন’ হারিয়ে যাবে জীবন থেকে! সাত বছরেও একটা দিন নিজেদের জন্য রাখেননি, এমন দম্পতিরও কিন্তু দেখা মেলে। অমন অসুস্থ পর্যায়ে যেতে দেবেন না আপনার জীবনের দারুণ মূল্যবান এই সম্পর্ককে।
সাত সপ্তাহে রাতে ঘোরা
রাতের পরিবেশ অন্য রকম। কর্মব্যস্ততার সময় এড়িয়ে রাতের স্নিগ্ধ পরিবেশে সঙ্গীকে নিয়ে বাড়ির বাইরে সময় কাটানোর একটা তারিখ বের করে নিন সাত সপ্তাহ অন্তর। সম্পর্কেও স্নিগ্ধতা ফিরে আসবে। কোথাও দূরে ঘুরতে গেলেন। রাতের খাবার খেলেন। সম্ভব হলে এক রাত বাইরে কোনো জায়গায় থেকে এলেন।
সাত মাসে একবার ‘মধুচন্দ্রিমা’
সাত মাসে অন্তত একটা-দুটো দিনের জন্য সব কাজ দূরে সরিয়ে রাখুন। ‘ছুটি’ কাটান জীবনসঙ্গীর সঙ্গে। সময়টা কাটিয়ে আসতে পারেন দূরে কোথাও থেকে। নিসর্গের কোলে ঘুরতে যেতে পারেন। সমুদ্রসৈকত, পাহাড়-টিলা, অরণ্য—নানা জায়গাই বেছে নিতে পারেন। প্রতিবার ঘুরতে গিয়ে পাঁচতারা হোটেলে উঠতে হবে, তা কিন্তু নয়। নিরাপদ একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই পেলেই হলো। তবে যেখানেই থাকুন না কেন, মধুচন্দ্রিমার মতো দুজনে কেবল ‘দোকলা’ সময় কাটান। এই অভ্যাস বজায় রাখলে সম্পর্কের রং মলিন হবে না।
শেষ কথা
দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কের প্রাণ হলো পারস্পরিক বোঝাপড়া। সঙ্গীকে বুঝতে চেষ্টা করুন। নিজের মনের ভাবনাগুলোকেও প্রকাশ করুন তাঁর কাছে। ভালোবাসা এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বজায় রাখুন সব সময়। সময়ের সঙ্গে আপনার সঙ্গীর মধ্যে কিছু পরিবর্তন আসতেই পারে। মনে রাখবেন, মানুষ নিয়ত পরিবর্তনশীল। সঙ্গীকে নিরাসক্ত মনে হলে আগে নিজেকে প্রশ্ন করে দেখুন, আপনার কোনো আচরণে তিনি কষ্ট পেয়েছেন কি না। আবার আপনার কাছে সম্পর্কটিকে একঘেয়ে মনে হলেও খেয়াল রাখুন, যাতে আপনার আচরণে বিরক্তি প্রকাশ না পায়। নেতিবাচক যেকোনো কিছু ঘটে থাকলে নিজেই উদ্যোগী হোন ইতিবাচকতা ফিরিয়ে আনতে। ‘ইগো’ নিয়ে বসে থাকবেন না। আর সঙ্গীর সঙ্গে যখনই ৭৭৭ নিয়মে আলাদা সময় কাটাবেন, কোনো অপ্রীতিকর প্রসঙ্গে কথা বলবেন না। এই সময়গুলোয় সংসার-সন্তান কিংবা ভবিষ্যৎ নিয়ে গুরুতর যেকোনো আলোচনাও এড়িয়ে চলুন।
সূত্র: দ্য টেলিগ্রাফ