অর্থনৈতিক সংকট, পেশাগত কাজের চাপ, নাগরিক জীবনের ক্লান্তি–হতাশা বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নানা হাতছানি—কঠিন সব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে আধুনিক দাম্পত্য সম্পর্ক। তবে এসব পেরিয়েও উদাহরণ টানার মতো সুখী, স্বাস্থ্যকর, সম্পর্কের ম্যারাথনে সুন্দরভাবে টিকে যাওয়া দম্পতির সংখ্যাও কম না। জনপ্রিয় ফরাসি সাইকোলজিস্ট, কাপল থেরাপিস্ট, ইনফ্লুয়েন্সার ও লেখক নিকোল লেপেরা সফল দম্পতিদের ভেতর ৭টি ‘প্যাটার্ন’ লক্ষ করেছেন।
কে এই নিকোল লেপেরা?
নিকোল যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেন। এরপর পেনসিলভানিয়ার ফিলাডেলফিয়া স্কুল অব সাইকোঅ্যানালিসিসের গবেষক হিসেবে কাজ করেন। এক যুগের বেশি সময় ধরে কাজ করছেন সাইকোলজিস্ট ও থেরাপিস্ট হিসেবে। ৪০ বছর বয়সী এই কাপল থেরাপিস্টের ২০২৩ সালে প্রকাশিত ‘হাউ টু বি দ্য লাভ ইউ সিক’ বইটি ‘নিউইয়র্ক টাইমস বেস্ট সেলার’। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে তাঁর অনুসারীর সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ৮৭ লাখ। আর এক্সে তাঁর অনুসারী ১০ লাখ।
এই দুই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই নিকোল লেপেরা সফল দম্পতিদের এই ৭ বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানান। কী সেগুলো, চলুন জেনে নিই।
১. পরিবারের সঙ্গে নিরাপদ সীমানা
আপনি যদি নিজের মা–বাবার কাছে সঙ্গীর সম্পর্কে ‘নালিশ দেন’, তাহলে আপনার ‘বিয়ের বয়স’ এখনো হয়নি। মানসিকভাবে এখনো আপনি স্কুল–কলেজের গণ্ডিতেই পড়ে আছেন। বিয়ের সম্পর্কে নাম লেখানোর মতো পরিণত হননি। পরিবার থেকে নিজেদের দাম্পত্য সম্পর্কের গোপনীয়তা রক্ষা করুন। নিরাপদ সীমানা টানুন। আপনি যে পরিবার থেকে এসেছেন এবং আপনি যে পরিবার গঠন করছেন—দুই পরিবারের জন্যই তা স্বাস্থ্যকর। এই ভারসাম্য না থাকলেই জটিলতা বাড়বে।
২. একসঙ্গে খারাপ সময় পার করা
দাম্পত্য সঙ্গী একসঙ্গে যত দুঃসময় পার করেন, ততই মজবুত হয় তাঁদের সম্পর্ক। খারাপ দিন, দুঃসময়—সম্পর্কের জন্য ‘ভালনারেবল’ সময়। সেই সময় যদি তাঁদের সম্পর্কে ফাটল ধরাতে না পারে, তাহলে স্বাভাবিক সময় ভালোভাবে পার করা তাঁদের জন্য অনেক সহজ হয়ে যায়। সম্পর্কের প্রথম দিকেই যদি কঠিন সময় দেখে ফেলেন, সেটা অনেকটা পরীক্ষায় পাসের মতো।
৩. ‘কঠিন আলাপ’
সঙ্গীর সঙ্গে সবচেয়ে কঠিন আলাপগুলো যদি আপনি করতে পারেন, এর মানে আপনাদের সম্পর্ক মজবুত। এমন অনেক কথা আছে আপনার জন্য যেগুলো বলা কঠিন, তাঁর জন্য মানা কঠিন, দুজনের জন্য আলাপ করা কঠিন, কিন্তু এই আলোচনা জরুরি। নিঃসংকোচে আপনারা যদি সেই আলাপ করতে পারেন, সেটাও সম্পর্কের পরীক্ষায় পাস করার মতো ব্যাপার।
৪. যৌক্তিকভাবে ঝগড়া
ঝগড়া, মনোমালিন্য, একমত না হওয়া বা ভুল–বোঝাবুঝি সব সম্পর্কের স্বাভাবিক বাস্তবতা। নিজেদের সম্পর্ককে সবার ওপরে রেখে, সঙ্গীকে ব্যক্তিগতভাবে আঘাত না করে, পুরোনো প্রসঙ্গ তুলে না এনে—কেবল সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ‘ঝগড়া করুন’!
৫. দুজন দুজনের সেরা বন্ধু
সম্পর্কে সময়ের সঙ্গে শারীরিক আকর্ষণ কমে আসে। কমে আসে একজন আরেকজনের সঙ্গে সময় কাটানো, কথা বলার চাহিদা। তবে সম্পর্কটা যদি হয় বন্ধুত্বের—সেই দাবি কখনো ফুরায় না। সঙ্গী আপনার সেরা বন্ধু হলে সুখে বা দুঃখে সবার আগে আপনি তাঁকে ফোন করবেন। সারা দিন কী ঘটল, তা শেয়ার করার জন্য প্রতিদিন মুখিয়ে থাকবেন। দুজনে মিলে নতুন কিছু শিখবেন, সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হবেন, ঘুরে বেড়াবেন, নতুন নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হবেন আর স্মৃতির কোটরে যোগ হবে নতুন নতুন রঙিন ছবি। এভাবে সম্পর্কটার ‘স্পার্ক’ কোনো না কোনোভাবে জিইয়ে রাখেন সফল দম্পতিরা। প্রতিদিন নতুন নতুনভাবে সঙ্গীর প্রেমে পড়েন, ভালোবাসেন। তাঁদের কাছে সম্পর্ক কখনো পুরোনো হয় না।
৬. সঙ্গী যেমন তাঁকে তেমনভাবেই গ্রহণ করা
প্রতিটি মানুষ আলাদা। আপনার সঙ্গীও ‘ইউনিক’। তাঁর সেই অনন্যতাই উদ্যাপন করুন। অবাস্তব প্রত্যাশা রাখবেন না।
৭. কোনো অবস্থায় তৃতীয় পক্ষকে ঢুকতে না দেওয়া
সম্পর্কে সবচেয়ে জরুরি হলো সম্পর্কটাকে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া। কোনোভাবেই নিজেদের দাম্পত্য সম্পর্কের ভেতর তৃতীয় কাউকে ঢুকতে দেওয়া যাবে না। এককথায়, নিজের দাম্পত্য সঙ্গীর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কেউ নেই!