ইনবক্সে যে পাঁচ ভুলের কারণে আপনি আজও সিঙ্গেল

একটা সময় ছিল, যখন প্রেম করলে মানুষ খুব অবাক হতো। পেটে খোঁচা দিয়ে জানতে চাইত, কীভাবে হলো? চিঠি আর ল্যান্ডফোনের সেই যুগে পছন্দের কারও সঙ্গে পাঁচ মিনিট কথা বলার সুযোগ পাওয়াটাও ছিল দুর্লভ একটা ব্যাপার। ফেসবুক, মেসেঞ্জার আর হোয়াটসঅ্যাপের এই যুগে যোগাযোগ করা যেমন সহজ হয়েছে, তেমনি প্রেম করাটাও আর আগের মতো কঠিন নেই। বরং এখন কেউ সিঙ্গেল থাকলেই লোকজন অবাক হয়। পেটে খোঁচা মেরে প্রশ্ন করে বসে, এখনো সিঙ্গেল? কেন?

সব সময় শুধু নিজের কথাই বলতে থাকলে অপর পাশের মানুষের কাছে বিষয়টা একঘেয়ে লাগাটাই স্বাভাবিক
ছবি: পেক্সেলস ডটকম

একটা সময় ছিল, যখন প্রেম করলে মানুষ খুব অবাক হতো। পেটে খোঁচা দিয়ে জানতে চাইত, কীভাবে হলো? চিঠি আর ল্যান্ডফোনের সেই যুগে পছন্দের কারও সঙ্গে পাঁচ মিনিট কথা বলার সুযোগ পাওয়াটাও ছিল দুর্লভ একটা ব্যাপার। তখন প্রেম করাটাই ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন আর আশ্চর্য একটা কাজ। সেই দুর্লভ প্রেমের যুগ অনেক আগেই গেছে। ফেসবুক, মেসেঞ্জার আর হোয়াটসঅ্যাপের এই যুগে যোগাযোগ করা যেমন সহজ হয়েছে, তেমনি প্রেম করাটাও আর আগের মতো কঠিন নেই। বরং এখন কেউ সিঙ্গেল থাকলেই লোকজন অবাক হয়। পেটে খোঁচা মেরে প্রশ্ন করে বসে, এখনো সিঙ্গেল? কেন?

যাঁরা সচেতনভাবেই প্রেম করতে চান না, তাঁদের কথা আলাদা।

তবে বহু মানুষ আছেন, যাঁরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গভীর রাতে ক্রাশের আইডি স্টক করেন। কিন্তু কী বলে একটা কথোপকথন শুরু করবেন বা চালিয়ে যাবেন, সেটাই বোঝেন না। সাহস করেও ওঠেন না। একটা সুন্দর কথোপকথন চালিয়ে যেতে হবে, সেটাও বোঝেন না।

এ কারণেই একসময় সেই ক্রাশের বিয়ের ছবিতেও কেবল লাইক লাভ দিয়েই ক্ষান্ত থাকতে হয়।

অথচ একটা সুন্দর সম্পর্ক গড়ার প্রথম ধাপই হলো কথোপকথন। কথা দিয়ে যেমন কারও ভেতরে সুন্দরতম অনুভূতি সৃষ্টি করা যায়, তেমনি কথার সামান্য ভুলের কারণেই আপনি কারও মন থেকে উঠে যেতে পারেন চিরতরে। কাজেই কথার যত্ন নিতে শিখলে এবং কথার ব্যাপারে সচেতন হলে সেটা আপনার ব্যক্তিত্বকে করে তুলবে আরও আকর্ষণীয়। এখানে আমরা কথা বলব সাধারণ পাঁচটা ভুলের কথা, চ্যাটের সময় করা যে পাঁচটা ভুলের কারণে কেউ আপনার সঙ্গে কথা বলার আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে। কাজেই ক্রাশকে মেসেজ দেওয়ার আগে এই পাঁচটা ভুলের কথা মাথায় রাখলে আপনার সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে বহু গুণ।

বিরতিহীন টানা মেসেজ পাঠাতে থাকলে সেটা অন্য প্রান্তের মানুষটার ভেতরে ভালোবাসা নয়, বিরক্তিকর হিসেবে হাজির হয়

১. ক্রমাগত এবং বিরতিহীন মেসেজ করে যাওয়া

কারও সঙ্গে কথা বলার সময় অতি উত্তেজিত হয়ে আমরা এই ভুলটা অনেক সময় করে ফেলি। একসঙ্গে অনেকগুলো মেসেজ দিতেই থাকি, দিতেই থাকি। হ্যাঁ, পছন্দের মানুষের সঙ্গে কথা বলার সময় আগ্রহ আর উত্তেজনা থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আপনার সেই আগ্রহ যদি অন্যজনের কাছে বিরক্তি উদ্রেককারী হয়, তাহলে পুরো ব্যাপারটাই নিষ্ফল হয়ে যাবে না? যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ এলিজাবেথ হল সেটাই বলেছেন, আপনি যতই আগ্রহী হন না কেন, বিরতিহীন টানা মেসেজ পাঠাতে থাকলে সেটা অন্য প্রান্তের মানুষটার ভেতরে ভালোবাসা নয়, বিরক্তিকর হিসেবে হাজির হয়।

২. খুব সাধারণ এবং বিরক্তির প্রশ্ন করা

না, কথোপকথনের প্রথম দিনেই আপনাকে অবশ্যই ভিনসেন্ট ভ্যান গঘের চিত্রকর্ম বা জীবনানন্দ দাশের কবিতা নিয়ে কথা বলার প্রয়োজন নেই। তাই বলে হাই, হ্যালো, কেমন আছেন, খেয়েছেন টাইপের অতি সাধারণ কথাবার্তাও কথোপকথন এগিয়ে নিতে খুব একটা সহায়ক হয় না বলেই মনে করেন নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির সোশ্যাল সাইকোলজির অধ্যাপক এলি ফিংকল। কাজেই কথাবার্তায় একটু ভিন্নতা আনার চেষ্টা করা যেতেই পারে। ভালো প্রশ্ন করুন। মানুষটাকে জানার-বোঝার চেষ্টা করুন।

৩. টেক্সট মেসেজের টোন ধরতে ব্যর্থ হওয়া

এটাকে বলা চলে টেক্সট মেসেজের একটা সর্বজনীন সীমাবদ্ধতা। কথা বলার সময় শরীরের ভাষা, চোখের ভাষা এবং কণ্ঠস্বরের ওঠানামা থেকে সাধারণত অনেক কিছুই বোঝা যায়। সেই অনুযায়ী আচরণও করা যায়। কিন্তু লেখা মেসেজে যেহেতু এসব অনুপস্থিত থাকে, সেহেতু এ ক্ষেত্রে ভুল-বোঝাবুঝির অবকাশ থাকে অনেক বেশি। এমআইটির অধ্যাপক শেরি টাকলের মতে, তাই কোনো মেসেজ বা কথা বুঝতে কঠিন হলে সরাসরি জিজ্ঞাসা করে নেওয়াই ভালো। অনেকেই নিজে নিজেই আকাশপাতাল চিন্তা করে হাজারটা মানে বের করে উল্টাপাল্টা আচরণ করেন। দিন শেষে সম্পর্কই মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

৪. শুধু নিজের কথাই বলা, অন্যজনের কথা না শোনা

কথোপকথনের ক্ষেত্রে এটাও অন্যতম একটা রেডফ্ল্যাগ। নিজের ব্যাপারে পছন্দের মানুষকে বলতে খুব ভালো লাগে, এটা ঠিক। কিন্তু তাই বলে সব সময় শুধু নিজের কথাই বলতে থাকলে অপর পাশের মানুষের কাছে বিষয়টা একঘেয়ে লাগাটাই স্বাভাবিক। কাজেই নিজের কথা বলার অভ্যাস কমিয়ে অন্যের কথা শোনার অভ্যাস করুন। ভালো শ্রোতা হওয়াটা খুবই জরুরি।

৫. ইংরেজি অক্ষরে বাংলা লেখা

শুনতে হালকা লাগলেও ইংরেজি অক্ষরে বাংলা লেখার ব্যাপারটা অনেকের জন্যই বিশাল একটা ‘টার্ন অফ’। যিনি বাংলা কথা ইংরেজিতে লেখেন, তাকে অনেকে সিরিয়াসলিও নেন না। একই কথা পুরোপুরি বাংলা বা ইংরেজি লেখা যে গুরুত্ব বহন করে, ‘মুরাদ টাকলা’ ভাষায় ততটা করে না। প্রশ্নটা যখন ভাবমূর্তি তৈরির, তখন এই ছোট বিষয়ও হয়ে উঠতে পারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই মুরাদ টাকলা ভাষার ব্যবহার বাদ দিয়ে খাঁটি বাংলা বা ইংরেজি ব্যবহার করে মেসেজ লেখার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

শুধু প্রেম বা রোমান্টিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেই না, বরং যেকোনো বন্ধুত্ব বা কথোপকথনের ক্ষেত্রেই এই পাঁচটি ভুল মাথায় রেখে সামনে এগোনো ভালো। এটা একদিকে যেমন আপনাকে আরেকজনের সামনে আকর্ষণীয় করে তুলবে, তেমনি আপনার যোগাযোগদক্ষতাকে বাড়িয়ে তুলবে অনেকখানি।