দৈনন্দিন কথাবার্তা থেকে শুরু করে পেশাগত ও জরুরি নানা তথ্য আদান–প্রদান বা বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডাও এখন চ্যাটের মাধ্যমেই সেরে ফেলা যায়। অনেকে তো আজকাল মুঠোফোনে কথা বলা বা সামনাসামনি আড্ডার চেয়েও চ্যাটিংকে বেশি পছন্দ করেন। বিশেষ করে অন্তর্মুখী চরিত্রের লোকজনের জন্য চ্যাটিং সামাজিকতা এবং সম্পর্কের নতুন এক দুয়ার খুলে দিয়েছে বলা যায়।
তবে এই চ্যাটিং একদিকে যেমন আমাদের কাছাকাছি আসার সুযোগ করে দিয়েছে, তেমনি এই ইনবক্সে করা সামান্য ভুলই আপনার জন্য ডেকে আনতে পারে বড় বিপদ। আমরা এখানে এমন পাচটি ভুল নিয়ে আলোচনা করব, যেগুলো এড়িয়ে যেতে পারলে অনলাইনের নানা রকম বিপদ-আপদ থেকে আপনি সহজেই বেঁচে যেতে পারবেন।
১. ইনবক্সে পাওয়া যেকোনো লিংকে ক্লিক
এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি বিপদে আমরা পড়ি এই কারণে। আপনার অ্যাকাউন্ট হ্যাক হওয়া থেকে শুরু করে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য বেহাত হওয়ার পেছনের অন্যতম কারণ হলো ফিশিং সাইটের লিংক। কাজেই আপনার কাছের বন্ধুর পাঠানো কোন লিংকেও না জেনে, না বুঝে ক্লিক করা যাবে না। লিংকে প্রবেশ করলে আপনি আবার আপনার অ্যাকাউন্টেই ঢুকতে পারবেন কি না, সেটা নিয়েই টানাটানি লেগে যাবে!
২. ব্যাংকের তথ্য বা ক্রেডিট কার্ডের পাসওয়ার্ড শেয়ার
একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে, যতই নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেওয়া হোক না কেন, ইন্টারনেট কখনোই সম্পূর্ণ নিরাপদ নয়। ফেসবুকের মতো বড় এবং প্রভাবশালী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও একাধিকবার তথ্য ফাঁসের মতো ঘটনা ঘটেছে। কাজেই যেসব তথ্য অন্যের হাতে পড়লে আপনার আর্থিক ক্ষতির শঙ্কা আছে, এমন তথ্য চ্যাটে ভুলেও দেবেন না। দিলেও কাজ হয়ে যাওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব মুছে ফেলবেন। যাতে ভবিষ্যতে ওই তথ্য ব্যবহার করে কেউ আর্থিক প্রতারণা বা ক্ষতি করতে না পারে।
৩. ক্লোন আইডি এবং টাকা ধারের ফাঁদ
ফেসবুকে বা মেসেঞ্জারে পরিচিত কেউ অদ্ভুত এবং অস্বাভাবিক মেসেজ দিলে সবার আগে তার প্রোফাইলে গিয়ে নিশ্চিত হয়ে নেবেন, যাচাই করে নেবেন সব তথ্য। এই যুগে ফেসবুকের তথ্য আর প্রোফাইল ছবির মাধ্যমে হুবহু আসল আইডির মতো নকল ক্লোন আইডি তৈরি করা খুব কঠিন কোন কাজ নয়। কাজেই শুধু প্রোফাইলের ছবি দেখে কারও সঙ্গে লেনদেনে যাবেন না। পরিচিত কেউ ইনবক্সে টাকা ধার চাইলে আগে ফোন দিয়ে নিশ্চিত হয়ে তারপর লেনদেন করবেন।
৪. কারও সমালোচনা করার সময় সাবধান
বন্ধুদের আড্ডায় অন্য কোনো বন্ধুর সমালোচনা করা আমাদের অনেকের অভ্যাসেই আছে। সামনাসামনি কারও অযৌক্তিক সমালোচনা করাও খারাপ, তবে ইনবক্সে কারও সমালোচনা করা মানে স্থায়ী একটা শত্রুতার বীজ বপন করে দেওয়া। মনে রাখতে হবে, মুখের কথার কোনো রেকর্ড না থাকলেও টেক্সটে বলা কথার রেকর্ড আরেকজনের কাছে থেকেই যায়।
ইনবক্সের স্ক্রিনশট মানুষের চরিত্র ‘উদ্ঘাটনে’ জনপ্রিয়ভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। একটা মানুষের মৃত্যুর কয়েক বছর পরও ইনবক্সের কথোপকথন থাকে আলোচনায়। একটা মানুষের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক সব সময় এক রকম থাকবে না। তিনি যে পুরোনো কথোপকথনের স্ক্রিনশট প্রকাশ করে আপনার ব্যক্তিগত সম্পর্কের জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত করবেন না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। কাজেই, চ্যাটিংয়ে কারও সমালোচনা করার সময় সাবধান।
৫. সংবেদনশীল তথ্য, ছবি ও ভিডিও আদান–প্রদান
চ্যাটিংয়ে সংবেদনশীল কোনো রাজনৈতিক, সামাজিক বা ধর্মীয় তথ্য নিয়ে কথা বলার সময় সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি। মাথায় রাখতে হবে, এই কথোপকথনের অংশবিশেষ ব্যবহার করে কথার ভুল মানে বের করা সম্ভব।
আপনাকে বিপদে ফেলাও সম্ভব। কাজেই ইনবক্সে এসব কথাবার্তা বলার ব্যাপারে সাবধান থাকুন। একই সঙ্গে সহিংস বা সংবেদনশীল ছবি বা ভিডিওর ব্যাপারেও সাবধান। এমনকি এই ধরনের বার্তা পাঠালে আপনার আইডি স্থায়ীভাবে বন্ধও করে দেওয়া হতে পারে। এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকুন।
২০২৩ সালের পুরোটাই দেশের ফেসবুক সরগরম ছিল চ্যাটের ব্যক্তিগত আলাপ ফাঁস করা নিয়ে। এই ঘটনাগুলো থেকে আমরা বুঝতে পারি, নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তা ইন্টারনেটের এই যুগে একটা মিথ ছাড়া কিছু নয়। আপনার কোনো সমস্যা হলে সেই দায় একান্তই আপনার। কাজেই ইনবক্সের ব্যাপারের সাবধান থাকুন। ক্ষণিকের অসচেতনতা যাতে আপনার ভার্চ্যুয়াল জীবনে বড় কোনো বিপর্যয়ের কারণ না হতে পারে, সে ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন জরুরি।