ভাঙা সম্পর্ক জোড়া দিতে যে ৫ বিষয় মেনে চলবেন

হয়তো সম্পর্কটাই ঝুলে আছে একটা পলকা সুতায় ভর করে
ছবি: প্রথম আলো

যে স্বপ্নালু চোখজোড়ার দিকে তাকিয়ে একদিন মনে হয়েছিল এই মানুষটার জন্য আপনি সব করতে পারবেন, আজ কি সেই চোখেই আপনার জন্য ঘৃণা কিংবা অনীহা দেখতে পাচ্ছেন? মানুষটার সঙ্গে আর বনিবনা হচ্ছে না? হয়তো সম্পর্কটাই ঝুলে আছে একটা পলকা সুতায় ভর করে। সবেতেই বুঝি মনের অমিল, মতের অমিল। কী করবেন এমন পরিস্থিতিতে? একদল হয়তো হাল ছেড়ে দেবে, আরেক দল শেষ চেষ্টা করতে চাইবে। আপনি যদি দ্বিতীয় দলভুক্ত হয়ে থাকেন, তাহলে এ লেখাটা আপনারই জন্য।

সমস্যাটা খুঁজুন

কেন সম্পর্কের এই জীর্ণদশা, ভেবে দেখুন। দুজনের কেউ কি ভালোবাসার অভাব অনুভব করছেন? নাকি বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচলে রয়েছেন? নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে মতের অমিল? নাকি কোনো কিছুই আর মিলছে না? প্রতিটি সম্পর্কেই থাকে বিশ্বাসের একটা শক্ত ভিত। অবিশ্বস্ততা, পরকীয়া কিংবা অপরাধপ্রবণতার মতো মারাত্মক কিছু ঘটে থাকলে সরাসরি আলোচনায় যাওয়াই ভালো। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসবের চেয়ে ঢের ক্ষুদ্র বিষয় নিয়ে জল ঘোলা হতে থাকে।

এসব ক্ষেত্রে ধৈর্য হারাবেন না; বরং সমাধানের জন্য সময় নিন। খেয়াল রাখবেন, সবকিছু আপনার মনমতো হবে না। সঙ্গীর কিছু কথা আপনাকেও মেনে নিতে হবে। মনে মনে তাঁর পরিস্থিতিতে নিজেকে বসিয়ে দেখুন, সমস্যাটাকে তাঁর জায়গা থেকেও উপলব্ধি করুন।

নিজেকে রাখুন প্রশান্তিতে


কর্মক্ষেত্রের চাপ, অর্থসংকট কিংবা অন্য কোনো কারণে আপনি বা আপনার সঙ্গী অশান্তিতে থাকতে পারেন। জীবনে উত্থান-পতন আসবেই। কিন্তু সম্পর্কের ওপর এসবের প্রভাব পড়তে দেবেন না। মেজাজ খারাপ হতে থাকলেও নিজেকে শান্ত রাখতে চেষ্টা করুন। বুক ভরে দম নিন। এক কাপ কফি খেতে পারেন, কুসুম গরম পানিতে গোসল করতে পারেন, ধ্যান করতে পারেন কিংবা বাইরে খানিকটা হেঁটেও আসতে পারেন। আপনার সঙ্গী কোনো সমস্যায় থাকলে তাঁকে আবেগীয় সমর্থন দিন এবং তর্ক-বিতর্ক থেকে নিজেকে বিরত রাখুন।

আচরণে যত্নশীল হোন

কী নিয়ে আপনার অভিমান হচ্ছে, সঙ্গী সব সময় সেটি না-ও বুঝতে পারেন। এটা ধরে নেওয়া যাবে না যে সঙ্গী টেলিপ্যাথির মতো কোনো আধ্যাত্মিক উপায়ে আপনার মনের কথা বুঝে ফেলবেন; বরং তাঁকে নিজের কথা বলুন। মন উজাড় করে বলুন। তবে কখনোই সঙ্গীকে কটু কথা বলবেন না। উপহাস করবেন না। গালি দেবেন না। অবজ্ঞাসূচক শব্দ ব্যবহার করবেন না। পরিবার বা শিক্ষাদীক্ষা তুলে কথা বলবেন না। চিৎকার করবেন না। মারকুটে ভঙ্গিতে তাঁর দিকে এগিয়ে যাবেন না। জিনিসপত্র ছুড়বেন না। ভাঙচুর করবেন না। ধুমধাম করে হেঁটে চলেও যাবেন না। উত্তেজনার বশেও খারাপ আচরণ করবেন না। তাঁর ভাবনার সঙ্গে আপনার ভাবনার অমিল থাকলে বুঝিয়ে বলুন মার্জিতভাবে। কোন সময় কথা বলছেন, সেটিও গুরুত্বপূর্ণ। দুজনের কেউ একজন ক্ষুধার্ত বা ক্লান্ত থাকলে কিংবা কোনো কাজে ব্যস্ত থাকলে, সেই সময় এসব বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা না করা ভালো।

তর্কে বিরতি নিন

উত্তেজনার পারদ যখন চড়তে থাকে, তখন এক পক্ষের কথার পরিপ্রেক্ষিতে অপর পক্ষ ‘উচিত জবাব’ দিতে থাকে। এই হলো মুশকিল। অমন মুহূর্তে চুপ করে যাওয়াই আসলে বুদ্ধিমানের কাজ। না, সব তর্ক-বিতর্ক ছেড়ে দিতে বলছি না। কিন্তু ওই মুহূর্তটা আসলে তর্কের জন্য উপযুক্ত সময়ই নয়; বরং মিনিট কুড়ির একটা বিরতিতে মনকে প্রশান্ত করে নিন। তবে এই বিরতির জন্য মুখ ঘুরিয়ে চলে আসাও কিন্তু ঠিক নয়। এতে সঙ্গী আপনাকে ভুল বুঝতে পারেন; বরং আপনি তাঁকে বলুন, আপনি মিনিট কুড়ি পর এসে কথা বলবেন। কারণ, এই মুহূর্তে আপনি আবেগীয়ভাবে স্থিতিশীল অবস্থায় নেই। প্রয়োজনে কুড়ি মিনিটকে এক-দুই ঘণ্টা পর্যন্ত বাড়িয়ে নিন। আপনার যে আরেকটু সময় প্রয়োজন, সেটিও সঙ্গীকে জানান। তবে এই করে করে সারা দিন কাটিয়ে দেবেন না যেন।

নতুন করে শুরু

সঙ্গীকে তাঁর অভিমান ও কষ্টের কথা প্রকাশ করার সুযোগ দিন। মনোযোগ দিয়ে তাঁর কথা শুনুন। আপনার নেতিবাচক আচরণের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিজের ভুল স্বীকার করে নিন। ‘ইগো’ নিয়ে বসে থাকবেন না। ক্ষমা প্রার্থনা বা ভুল স্বীকার করায় আপনি ‘ছোট’ হয়ে যাবেন না। ভালোবাসাই একটি সম্পর্কের জীয়নকাঠি। আগের মতোই ভালোবাসুন সঙ্গীকে। কিছুটা সময় নিজেদের মতো করেও কাটাতে চেষ্টা করুন। ভালোবাসার ছোট্ট উপহারে চমকেও দিতে পারেন। সঙ্গীর কাজে সহযোগী হয়ে উঠুন। পুরোনো হয়ে যাওয়া ভালোবাসাকে একটু ঘষেমেজে নিয়েই দেখুন, সম্পর্কে প্রাণ ফিরে আসে কি না।
সূত্র: রিডারস ডাইজেস্ট