মায়ের প্রেমিকের বিরুদ্ধে আলোচিত মামলায় জয়, এখন তিনি বিশ্বের সেরা ধনী নারী

এই মুহূর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী নারী ফ্রঁসোয়া বিতনকুর মিয়াস। তিনি লরিয়েলের প্রতিষ্ঠাতা ইউজিন পল লুই শুলার নাতনি। ইউজিন শুলা ১৯০৯ সালে লাক্সারি কসমেটিক ব্র্যান্ড লরিয়েল প্রতিষ্ঠা করেন। শুলার মৃত্যুর পর তাঁর সব সম্পদ একমাত্র মেয়ে লিলিয়ান বিতনকুরের কাছে হস্তান্তরিত হয়। লিলিয়ানের একমাত্র মেয়ে ফ্রঁসোয়া। ২০১৭ সালে লিলিয়ানের মৃত্যুর পর বিশ্বব্যাপী আলোচনার সৃষ্টি করে মামলায় নাটকীয়ভাবে জয়লাভ করে তাঁর সব সম্পদের মালিকানা পান মেয়ে ফ্রঁসোয়া। আর এর ফলে তিনি ‘বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারী’র উপাধি লাভ করেন।

ফ্রঁসোয়া বিতনকুর মিয়াস

ফ্রঁসোয়া বিতনকুর মিয়াসের বর্তমান সম্পদের পরিমাণ ৯২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ১১ লাখ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে ফোর্বসের ধনীদের তালিকায় তাঁর সম্পদের পরিমাণ ছিল আনুমানিক ৪২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। তিনি তাঁর ব্যবসায়িক দক্ষতা কাজে লাগিয়ে গত ছয় বছরে এ সম্পদ দ্বিগুণের বেশি বাড়িয়েছেন।

নারীর ক্ষমতায়ন, ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি সামাল দেওয়া, বুদ্ধিমত্তা, ব্যবসায়িক দক্ষতা ও পারিবারিক ঐতিহ্য রক্ষার ফ্রঁসোয়া বিতনকুর মিয়াস এক অনন্য উদাহরণ

২০২৩ সালের ২৮ ডিসেম্বর লরিয়েলের শেয়ারের মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে ১০০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। এর ফলে ফ্রঁসোয়া বিতনকুর মিয়াস হয়ে ওঠেন ১০০ বিলিয়ন ডলার সম্পদের ক্লাবে নাম লেখানো প্রথম নারী। ফ্রঁসোয়া ১৯৫৩ সালে ফ্রান্সের প্যারিসে আন্দ্রে ও লিলিয়ান বিতনকুর দম্পতির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। আন্দ্রে ও লিলিয়ান দুজনেই ব্যয়বহুল পার্টি আয়োজনের জন্য পরিচিত ছিলেন। তবে ফ্রঁসোয়া ছোটবেলা থেকেই ছিলেন অন্তর্মুখী ও ভাবুক স্বভাবের।

বাবা ও মায়ের সঙ্গে ফ্রঁসোয়া (ডানে)

ব্যক্তিগত জীবন আড়ালে রাখতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন ফ্রঁসোয়া। মিডিয়ার পাদপ্রদীপ থেকে দূরে নিরিবিলি, শান্ত ও সাধারণ জীবন বেছে নিয়েছেন। প্যারিসের অভিজাত এলাকার দোতলা একটি বাগানবাড়িতেই কাটে ফ্রঁসোয়ার বেশির ভাগ সময়। এই এলাকা পাপারাজ্জিদের নজরদারির বাইরে। লেখক হিসেবেও সফল ফ্রঁসোয়া। তাঁর লেখা ‘আ টাইম ফর সিক্রেটস’ ও ‘দ্য গ্রিক গডস’ বই দুটি বেশ জনপ্রিয়।

দানশীলতার জন্যও নামডাক আছে এই অতিধনীর

ফ্রঁসোয়ার অবসর কাটে পিয়ানো বাজিয়ে। স্টেইনওয়ে ও ইয়ামাহা ব্র্যান্ডের দুটি পিয়ানো রয়েছে তাঁর। দানশীলতার জন্যও নামডাক আছে এই অতিধনীর। বিশেষ করে বিজ্ঞান ও শিল্পের অগ্রগতির জন্য কোটি কোটি ডলার দান করেছেন তিনি। ফ্রঁসোয়ার আরেকটি অদ্ভুত শখ রয়েছে—মৌমাছি পালন। তিনি বাস্তুতন্ত্রে মৌমাছির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা প্রচার করেন। পরিবেশযোদ্ধা হিসেবেও পরিচিত এই ধনী নারী। টেকসই পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার প্রতি তিনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিলাসবহুল প্রসাধনী ব্র্যান্ড লরিয়েলকে ‘ক্রুয়েলিটি ফ্রি’, পরিবেশবান্ধব রাখতে কাজ করে চলেছেন তিনি।

১৯৮৪ সালে জ্যঁ পিয়েরকে বিয়ে করেন ফ্রঁসোয়া বিতনকুর মিয়াস। জ্যঁ ভিক্টর ও নিকোলাস নামের তাঁদের দুই সন্তান আছে। এই দুই সন্তানের ঘরের নাতি–নাতনিও রয়েছে। মা ও তাঁর প্রেমিকের বিরুদ্ধে মামলা করে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন ফ্রঁসোয়া।

মা লিলিয়ানের সঙ্গে ফ্রঁসোয়া

২০০৭ সালে তাঁর বাবার মৃত্যুর পর মা লিলিয়ান কিঞ্চিৎ ডিমেনশিয়ায় ভুগছিলেন। আর সেই সময়ই সামনে চলে আসে আলোকচিত্রী ফ্রঁসোয়া–মারি বানিয়ের সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক। মায়ের প্রেমিক ও মায়ের বিরুদ্ধে মামলায় ফ্রঁসোয়া অভিযোগ করেন, মায়ের ডিমেনশিয়ার সুযোগ নিয়ে তাঁর প্রেমিক তাঁর সব সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন।

‘বিতনকুর অ্যাফেয়ার’ বিশ্বব্যাপী ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়

বিশ্বব্যাপী ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয় এ মামলা। এটি বিশ্বব্যাপী ‘বিতনকুর অ্যাফেয়ার’ নামে পরিচিত। এ ঘটনায় মা-মেয়ের সম্পর্কে চিড় ধরে। আদালতে মেয়ের বিরুদ্ধে আর প্রেমিকের পক্ষে সাক্ষ্য দেন লিলিয়ান। জানান, প্রেমিককে দামী উপহার দিতে ভালোবাসেন তিনি। আর মেয়ে বলেন, তিনি কেবল তাঁর মা আর পারিবারিক সম্পদ রক্ষা করতে চান। অনেক আইনি জটিলতার পর ২০১১ সালে ফরাসি আদালত ফ্রঁসোয়ার অভিযোগের সত্যতা পান এবং তাঁর পক্ষে রায় দেন।

`দ্য বিলিয়নিয়ার, দ্য বাটলার, অ্যান্ড দ্য বয়ফ্রেন্ড’ সিরিজের পোস্টার

এ মামলার ওপর ভিত্তি করে ২০২৩ সালের নভেম্বরে নেটফ্লিক্সে ‘দ্য বিলিয়নিয়ার, দ্য বাটলার, অ্যান্ড দ্য বয়ফ্রেন্ড’ শিরোনামে প্রামাণ্যচিত্র মুক্তি পায়। এই প্রামাণ্যচিত্রও নতুন করে নানা বিতর্কের জন্ম দেয়।

নারীর ক্ষমতায়ন, ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি সামাল দেওয়া, বুদ্ধিমত্তা, ব্যবসায়িক দক্ষতা ও পারিবারিক ঐতিহ্য রক্ষার ফ্রঁসোয়া বিতনকুর মিয়াস এক অনন্য উদাহরণ।


সূত্র: ফোর্বস, কসমোপলিটন, ব্লুমবার্গ, বিজনেস ইনসাইডার