সম্পর্কের এই ১০ বিষয় ভুলেও ফেসবুকে পোস্ট করবেন না

একান্ত গোপন মুহূর্তের ছবি বা ভিডিও কোনোভাবেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেবেন না
ছবি: পেক্সেলস ডটকম

প্রেম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—এই দুটো ব্যাপারকে আজকাল আলাদা করাই মুশকিল হয়ে পড়ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বিশেষ করে ফেসবুকে দেখনদারি প্রেম নিয়ে অতি আদিখ্যেতা অধিকাংশ সময়ই সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সম্পর্কের কিছু বিষয় আছে, যা এই বায়বীয় জগতের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করা যেতে পারে। কিন্তু কিছু বিষয় অবশ্যই নয়। মনে রাখবেন—তিলকে তাল বানানো নয়, মাঝেমধ্যে ফেসবুকে তিলকে রীতিমতো কাঁঠালও বানিয়ে ফেলা হয়। এখানে রইল এমনই কতগুলো বিষয়ের কথা, যা কখনোই ফেসবুকসহ অন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা সমীচীন নয়।

১. সঙ্গীর উদ্ভট অভ্যাস

প্রিয় মানুষের হেঁড়ে গলার গান কিংবা রাতভরে বিচিত্র সুরে নাকডাকা—এসব আপনার কাছে হয়তো পৃথিবীর সবচেয়ে মোহন সংগীত। প্রিয়জনের এমন অনেক উদ্ভট অভ্যাসই পরস্পরের কাছে উপভোগ্য হতে পারে। তাই বলে এসব বিষয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘটা করে জানান দেওয়াটা কাজের কথা নয়। এতে আপনার সঙ্গী বিব্রত হতে পারেন। অতি ব্যক্তিগত অভ্যাসের আনন্দ ব্যক্তিগত থাকাই ভালো।

প্রেমিক-প্রেমিকা বা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মতদ্বৈধতা, তর্ক-বিতর্ক, ঝগড়া হলেই তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুলে ধরবেন না

২. ব্যক্তিগত ঝগড়া

প্রেমিক-প্রেমিকা বা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মতদ্বৈধতা, তর্ক-বিতর্ক, ঝগড়া—এসব সাধারণ ব্যাপার। এমন হলেই তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুলে ধরবেন না। তাতে হয়তো আপনি বন্ধুদের কাছ থেকে তাৎক্ষণিক মতামত, সমর্থন বা সহানুভূতি পাবেন; কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে ব্যাপারটি সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর। এতে আপনার সঙ্গী সামাজিকভাবে হেয় হতে পারেন। আহত বোধ করতে পারেন। যৌক্তিক বিবেচনায় এটি কিন্তু তাঁর প্রতি আপনার অশ্রদ্ধারই প্রকাশ।

৩. গোপন ছবি বা ভিডিও

একান্ত গোপন মুহূর্তের ছবি বা ভিডিও কোনোভাবেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেবেন না। এসব বিষয়ে আপনার মানসিকতা হয়তো খুবই উদার; কিন্তু পারিপার্শ্বিক সমাজব্যবস্থার দরুন আখেরে আপনার সুন্দর সম্পর্কটাই ক্ষতির মুখে পড়বে।

৪. সঙ্গীর আবেদনময় ছবি

সঙ্গীর আবেদনময় ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করবেন না। এই অতি সাহসিকতা সম্পর্কের জন্য উপকারী নয়। এমনকি প্রিয় কোনো তারকার যৌনাবেদনময় ছবি পোস্ট করা থেকেও বিরত থাকুন। এতে প্রিয় মানুষটির খারাপ লাগতে পারে।

৫. আদরের মুহূর্তের সেলফি

প্রিয় মানুষটিকে চুমু খাচ্ছেন কিংবা গভীর আবেগে জড়িয়ে ধরে আদর করছেন—দৃশ্যগুলো ব্যক্তিগত পর্যায়ে থাকাই ভালো। এসব ছবি ইন্টারনেটের বিশাল দুনিয়ায় ছেড়ে দেবেন না।

৬. সম্পর্কের প্রতি মুহূর্তের কার্যকলাপ

তুমুল প্রেমে যৌথ সময় কাটাচ্ছেন। বেশ তো, কাটান না। তা বলে প্রতি মুহূর্তের সব খবর জানানোর দরকারটা কী। প্রেমিকপ্রবর কখন ফুল দিলেন, প্রেমিকা কখন রান্না করলেন প্রিয় খিচুড়ি ভুনা, কখন প্রিয়ার সদ্য স্নাত চুলের গন্ধে মাতাল হলেন প্রেমিক, সন্ধ্যাবেলায় দুজন মিলে কী করছেন—মিনিটে মিনিটে এসব পোস্ট করার কি আদৌ দরকার আছে? এ রকম আদিখ্যেতা অনেক সময়ই অন্যদের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এমনকি আপনার সঙ্গী অতটা দেখনদারি মানসিকতার নাও হতে পারেন। কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যাপারটি তাঁর কাছে অস্বস্তিকরও হতে পারে। হয়তো চক্ষুলজ্জায় আপনাকে কিছু বলছেন না, কিন্তু বিষয়টি ভালোভাবে নিচ্ছেনও না।

৭. গর্ভাবস্থার খুঁটিনাটি

প্রেম বিয়েতে গড়ালে গোটা দুনিয়াকে ঢোল পিটিয়ে জানিয়ে দিতে ইচ্ছে করে। প্রেম-ভালোবাসাবাসির একপর্যায়ে গর্ভে সন্তান আসে যখন, তখন আনন্দ যেন দ্বিগুণ হয়ে যায়। বিপুল উচ্ছ্বাসে এই আনন্দের কথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করা স্বাভাবিক। কিন্তু তাই বলে গর্ভকালীন সব খুঁটিনাটি! আজকে কোন পরীক্ষাটি করানো হলো, রিপোর্টের ছবি, আলট্রাসাউন্ডের ছবি, সন্তান কী অবস্থায় আছে—এ রকম প্রতিটি বিষয় নিয়ে পোস্ট অনেকের বিরক্তি কারণ হতে পারে।

৮. অতি জাঁকজমকপূর্ণ জীবনের গল্প

আপনার প্রেমিক বা প্রেমিকা, স্বামী বা স্ত্রী হয়তো প্রভূত বিত্তের অধিকারী। প্রায়ই আপনাকে দামি দামি উপহার দেন। মন চাইলেই বিদেশ ভ্রমণ, গাড়ি বদল, পাহাড়ঘেঁষা বাড়ি কেনা—সব পেয়ে থাকেন প্রিয় মানুষের কল্যাণে। কিন্তু এসবের অতি প্রচার অন্যের যন্ত্রণার কারণ হতে পারে। একসময় হয়তো নিজেদের সম্পর্কের ওপরও পড়ে তার প্রভাব।

৯. প্রিয়জনের বিব্রতকর তথ্য

আপনার প্রিয় মানুষটি হয়তো ছোটবেলায় খুব বিচ্ছিরি কোনো কাণ্ড ঘটিয়েছিলেন। লজ্জাজনক ব্যাপারটি হয়তো আপনার কাছে বলেছেন গল্পচ্ছলে। সঙ্গী বা সঙ্গিনীর এমন ব্যাপার উন্মুক্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়ে দেওয়াটা কিন্তু ঠিক নয়।

১০. সম্পর্ক ভাঙনের প্রসঙ্গ

যেকোনো সম্পর্কের ভাঙন ভয়ংকর দুজনের জীবনেই ধ্বংসস্তূপ তৈরি করে। কিংবা একজন হয়তো মানসিকভাবে একটু বেশিই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। কিন্তু এই ভাঙনের বিষয়ে পরস্পরকে দোষারোপ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানান দেওয়া উচিত নয়। এতে সাময়িক সহানুভূতি পাবেন হয়তো। তবে এর মধ্য দিয়ে আদালতের জন্য দীর্ঘমেয়াদি যন্ত্রণার এক প্রামাণ্য দলিল রেখে গেলেন কিন্তু।

* রিডার্স ডাইজেস্ট ডটকম থেকে। মূল রচনা: শার্লট হিলটন অ্যান্ডারসন